দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষের মাথার মধ্যে যে কতো কিছু আছে, তা যেনো আজও এক রহস্য! সেই গোলকধাঁধার পথ খোঁজার চেষ্টায় জোট বেঁধেছেন কয়েক’শ বিজ্ঞানী। এবার মানব মস্তিষ্কের ‘মানচিত্র’ তৈরি করেছেন তাঁরা।
বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, এতো বিশদ ‘অ্যাটলাস’ ইতিপূর্বে কখনও তৈরি হয়নি। তাঁরা ৩ হাজারেরও বেশি ধরনের কোষ চিহ্নিত করেছেন। যারমধ্যে বেশ কিছু কোষের কথা আগে কেও জানতেনও না। ২১টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘সায়েন্স’, ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ এবং ‘সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন’ জার্নালে। মানুষের দেহের সবচেয়ে জটিল অঙ্গই হলো মস্তিষ্ক। তার অনেকটাই অজানা।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ফ্লোরে ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড মেন্টাল হেল্থ’-এর স্নায়ুবিজ্ঞানী অ্যান্টনি হ্যানান বলেছেন, ‘‘খুবই গুরুত্বপূর্ণ এই গবেষণাটি। ইতিপূর্বেও বিজ্ঞানীরা ‘ম্যাগনেটিক রেসোন্যান্স ইমেজিং’ পদ্ধতির মাধ্যমে মস্তিষ্কের মানচিত্র তৈরি করেন। তবে সেটিতে এতো বিশদ তথ্যও ছিল না। এই প্রথম কোষ-স্তরে সম্পূর্ণ মস্তিষ্কের অ্যাটলাস তৈরি করা হলো। তাতে মস্তিষ্কের কোষ-সমষ্টিতে আণবিক প্রতিক্রিয়াগুলো পর্যন্তও ধরা পড়েছে।
এই গবেষণাটি ‘ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেল্থ’-এর গবেষণার একটি অংশ। আরও উন্নত মানের নিউরোটেকনোলজিও ব্যবহার করা হয়েছে এটিতে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কয়েকশো বিজ্ঞানী এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই হলো, মস্তিষ্কের কোষের ক্যাটালগ তৈরি। শুধু মানুষই নয়, শিম্পাঞ্জি থেকে ইঁদুর, বিভিন্ন প্রাণীদের মস্তিষ্কের কোষ এবং তার প্রকারভেদ সংক্রান্ত নানা তথ্য একত্রিত করার চেষ্টাও করছেন বিজ্ঞানীরা। এভাবেই মস্তিষ্কের বিভিন্ন অসুখ এবং তার কারণ সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
মস্তিষ্কের মানচিত্র তৈরিতে উল্লেখযোগ্য এক ভূমিকা নিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের ‘ইউনির্ভাসিটি মেডিক্যাল সেন্টার ইউট্রেক’-এর স্নায়ুবিজ্ঞানী কিম্বারলি সিলেটি এবং তাঁর দল। বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের ১০৬টি জায়গার ৩০ লক্ষেরও বেশি কোষের আরএনএ সিকোয়েন্সিং করেছেন। দান করে যাওয়া ৩টি পুরুষ দেহ হতে কলাকোষ সংগ্রহ করে ওই পরীক্ষা করা হয়।
এক নারীর মৃতদেহের মোটর কর্টেক্সও ব্যবহার করা হয়। কিম্বারলি ৪৬১টি ধরনের কোষের সন্ধান পান। সেই কোষগুলোর মধ্যে আবার ৩ হাজার সাবটাইপও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘এতো ধরনের কোষ দেখে আমি চমকে গিয়েছি।’’
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত অপর এক বিজ্ঞানী স্টেন লিনারসন বলেন, ‘‘মস্তিষ্ক কিংবা ব্রেন এবং স্পাইনাল কর্ডকে জুড়ে রাখে ব্রেনস্টেম। এই অংশে সবচেয়ে বেশি ধরনের নিউরোন কিংবা স্নায়ুকোষ থাকে। আমরা এই গবেষণায় দেখেছি যে, ব্রেনস্টেম কতোটা জটিল একটা অংশ।’’
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার বায়োলজিস্ট বিং রেন জানিয়েছেন, এই গবেষণায় মস্তিষ্কের অসুখগুলোর পাশাপাশি তার পিছনে থাকা ব্যতিক্রমী জিনের কারসাজি ধরা পড়েছে। এভাবে ব্রেন ডিসঅর্ডার সম্পর্কে ভালোভাবে জানা যাবে। রোগ বোঝা গেলে তার নিরাময়ও ঠিকই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন এই গবেষক।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org