দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গ্রীষ্মের মৌসুম শুরুর সময় হতেই ‘হিট ওয়েভ’ সবচেয়ে আশঙ্কার এক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই তাপপ্রবাহ থেকে কোন রোগগুলোর ঝুঁকি বেশি? এই বিষয়টি জানিয়েছেন চিকিৎসক।
ক্রমশ উষ্ণতার পারদ চড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে তীব্র অস্বস্তিও। দিনের বেলায় রাস্তায় পা রাখলেই যেনো ঝলসে যাচ্ছে চোখমুখ। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, গরম নাকি আরও বাড়তে পারে। বেশ কিছু স্থানে তাপপ্রবাহের সতর্কতাও রয়েছে। অত্যাধিক গরমে তাই নাজেহাল প্রায় সকলেই। তীব্র গরমে যেমন রয়েছে অস্বস্তি, তেমনই অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ডায়েরিয়া, বমি, হজমের গোলমাল লেগেই আছে। তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঝুঁকি বাড়ছে আরও বেশ কিছু অসুখেরও। মাত্রাতিরিক্ত গরম থেকেই হানা দিচ্ছে নানা ধরনের অসুস্থতা। এমন কি মৃত্যুও ঘটছে অনেকের। চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর ভাষায়, ‘‘যা গরম পড়েছে, তাতে সুস্থ থাকা সত্যিই একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে আমাদের সুস্থ তো থাকতেই হবে। সেজন্য প্রথমে রোদ এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ হলো, এই প্রখর রোদের তাপ থেকেই বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি আরও বাড়ছে।’’ গ্রীষ্মের মৌসুম শুরুর সময় থেকে ‘হিট ওয়েভ’ সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে। এই তাপপ্রবাহ থেকে কোন রোগগুলোর ঝুঁকি আরও বা়ড়তে পারে? সেই বিষয়টি জানিয়েছেন একজন চিকিৎসক।
হিট পিডিমা
গরমে অনেকেরই হাত-পা ফুলে গিয়ে থাকে। চিকিৎসা পরিভাষায় এটিকে বলে ‘হিট পিডিমা’। অনেকের এমন হয়। বিশেষত পা বেশি ফুলে যায়। কখনও কখনও আবার হাত ও পা একসঙ্গে ফুলেও যায়। এই রোগের বিশেষ কোনও ওষুধই নেই। বিশ্রাম নিলে, বেশি করে পানি খেলে ও উঁচু বালিশের উপর পা তুলে রাখলে দ্রুত সেরে ওঠবে।
হিট ক্র্যাম্প
এই মাত্রাতিরিক্ত গরমে কায়িক পরিশ্রম বেশি হলে বা দীর্ঘক্ষণ শরীরচর্চা করলে ‘হিট ক্র্যাম্প’ হতে পারে। এমন হলে কাঁধ, ঘাড় ও ঊরুর পেশিতেও তখন টান ধরে। বেশি করে পানি খেলে অবশ্য স্বস্তি পাওয়া যায়। তবে শুধু পানি না খেয়ে ওআরএস (ওর স্যালাইন) কিংবা লবণ-চিনির পানি খেলে বেশি উপকার পাওয়া যাবে। সেইসঙ্গে বিশ্রাম নিলে ও রোদ এড়িয়ে চললে টান ধরা কমে আসবে।
হিট টিটানি
অত্যাধিক তাপপ্রবাহের কারণে অনেক সময় হাত-পা বেঁকে যায়। হাত-পায়ের সাড় চলে যায় অর্থাৎ অনেকটা অবশ হয়ে যায়। হাত ও পা ভাঁজ করতেও তখন বেগ পেতে হয়। এই ধরনের সমস্যাকে ‘হিট টিটানি’ বলা হয়। এমন সমস্যা হলে প্রাথমিকভাবে বিশ্রাম নেওয়াটা জরুরি। সেইসঙ্গে হাত-পা মালিশ করতে পারলে ভালো হতে পারে। পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিলে ও পরিমাণমতো পানি খেলেও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব।
হিট সিঙ্কোপ
হিট সিঙ্কোপ হলে মাথা ঘুরে যাওয়া, চোখমুখে অন্ধকার দেখার মতো সমস্যা, প্রচণ্ড রোদে বের হলে অনেক সময় এমন কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এগুলোকেই ‘হিট সিঙ্কোপ’ বলা হয়। দীর্ঘক্ষণ আগুনের ধারে থাকলেও এমনটি হতে পারে। এমন হলে সঙ্গে সঙ্গেই ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করে নেওয়াটা জরুরি। বা বরফপানি দিয়ে গা-হাত-পা মুছে নিতে পারলে ভালো হয়। অবশ্যই বেশি করে পানি খেতে হবে। তা না হলে যে কোনও সময় এমন হতে পারে।
ঘামাচি
ঘামাচি হলো গরমের এই সময় সবচেয়ে বড় সমস্যা। তবে অনেকেই বিষয়টিকে ততোটাও গুরুত্বই দেন না। ঘামাচি কমাতে অধিকাংশ সময় ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করেন। তাতে আরও হিতে বিপরীত হয়। পাউডারের কারণে ঘর্মগ্রন্থিগুলোতে সংক্রমণ হয়। আর তখন চিকিৎসকের কাছে ছুটতে হয়। তবে আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে সচেতন হলে বাড়াবাড়ি হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
হিট স্ট্রোক
গরমের এই সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকে হিট স্ট্রোক হওয়ার। এই স্ট্রোক হলে শরীর অত্যাধিক শুকিয়ে যেতে পারে। ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। শরীরের ভিতরটা ভিষণ গরম হয়ে যায়। তবে হাত-পা ঠাণ্ডা থাকে। হৃৎস্পন্দনের গতি তখন কমে যায়। শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে খিঁচুনিও উঠতে পারে। ভুল বকা বা সাময়িকভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়াও হিট স্ট্রোকের একটি লক্ষণ। এমন সমস্যা হলে রোগীকে ভালো করে গোসল করিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org