দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ২০১০ সাল হতে আমাদের ‘গ্রহের হৃদয়’ হিসেবে পরিচিত পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ভূতাত্ত্বিক স্তর স্বাভাবিকের চেয়েও ধীরে ধীরে ঘুরছে বলে জানিয়েছে নতুন একটি গবেষণা।
আর এই ধীরগতি আমাদের গ্রহের সামগ্রিক ঘূর্ণন প্রক্রিয়াকে কিছুটা হলেও পরিবর্তন করতে পারে। বিশেষ করে আমাদের দিনগুলো নাকি দীর্ঘায়িত হতে পারে। যদিও এর প্রভাবগুলো সম্ভবত আমাদের কাছে ‘অদৃশ্য’ই হবে।
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ ভূতাত্ত্বিক স্তরটি ভূত্বকের চেয়েও অনেক বেশি পুরু। মোটামুটি চাঁদের আকারের শক্ত লোহা ও নিকেলের একটি অংশ এটি। আমাদের পায়ের নিচে ৪ হাজার ৮০০ কিলোমিটার এরও বেশি দূরে এটির অবস্থান।
বিজ্ঞানীরা প্রায় ৪০ বছর পূর্বে বিস্তর ভূমিকম্পের কার্যকলাপের রেকর্ড দিয়ে পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তরগুলোর মানচিত্র তৈরি শুরু করেন। তখনও অভ্যন্তরীণ স্তরটি ম্যান্টল ও ভূত্বকের চেয়েও কিছুটা দ্রুত ঘোরাফেরা করছিল।
তবে নেচার জার্নালে গত ১২ জুন প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন যে, ২০১০ সাল হতে অভ্যন্তরীণ স্তরটি ধীর হয়ে যাচ্ছে ও এখন আমাদের গ্রহের বাইরের স্তরগুলোর চেয়েও কিছুটা ধীরে ধীরে ঘুরছে।
এই বিষয়ে ডর্নসিফের ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার ভূকম্পনবিদ জন ভিডেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমি যখন প্রথম সিসমোগ্রামগুলো দেখি, এই পরিবর্তনের ইঙ্গিতই দেয়, তখন আমি নিজেও হোঁচট খেয়েছিলাম। তবে যখন আমরা একই প্যাটার্নের ইঙ্গিত দিয়ে আরও দুই ডজন পর্যবেক্ষণ পায়, আসলে ওই ফলাফলটি অনিবার্য ছিল।
গবেষকরা লিখেছেন যে, যদিও অভ্যন্তরীণ স্তরের ঘূর্ণন কমতেই থাকে, তবে এর মহাকর্ষীয় টানে আমাদের গ্রহের বাইরের স্তরগুলো আরও বেশ ধীরে ধীরে ঘুরতে পারে। আমাদের দিনের দৈর্ঘ্য পরিবর্তনও হতে পারে। তবে যে কোনো সম্ভাব্য পরিবর্তন (ধীর ঘূর্ণন গতি) ঘড়ির কাটার সেকেন্ডের হাজারতম অংশের ক্রমে হবে। যদিও এটি লক্ষ্য করাও খুব কঠিনই হবে। এই পার্থক্যের কারণে সামঞ্জস্য করার জন্য সম্ভবত আমাদের ঘড়ি কিংবা ক্যালেন্ডার পরিবর্তনও করতে হবে না, বিশেষত যদি এটি কেবলমাত্র একটি অস্থায়ী পরিবর্তন হয়।
নতুন গবেষণায় গবেষকরা ১৯৯১ হতে ২০২৩ সালের মধ্যে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জে একটি টেকটোনিক প্লেট সীমানা বরাবর একই স্থানে বারবার ঘটে যাওয়া ১০০টিরও বেশি ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করেন। প্রতিটি ভূমিকম্প থেকে বিজ্ঞানীরা অভ্যন্তরীণ স্তরের অবস্থানের মানচিত্র তৈরি করার জন্য সহায়তা নেয়।
ভিডালে বলেছেন, নতুন গবেষণাটি এ পর্যন্ত ‘সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ যে, অভ্যন্তরীণ স্তর আসলেই একটু ধীরে ঘুরছে। গবেষকরা লিখেছেন যে, অভ্যন্তরীণ স্তরটি কেনো ধীরে ঘুরছে, তা বর্তমানে অবশ্য স্পষ্ট নয়। কতো গতিতে ধীর হচ্ছে তাও স্পষ্ট নয়। তথ্যসূত্র : লাইভ সায়েন্স।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org