দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কখনও কখনও খোলা, বাসি ও রাস্তার খাবার খেয়ে জীবাণু সংক্রমণ ঘটতে পারে খুব সহজেই। শুধু খোলা খাবারই নয়, প্যাকেটবন্দি খাবার থেকেও অনেক সময় শিশুদের পেটের রোগও হতে পারে। এমন অবস্থায় কী করবেন?
বর্ষার এই সময় রাস্তার খাবার শিশুকে ভুলেও খাওয়াবেন না। এই সময় ঘরে ঘরে সর্দিকাশি ও জ্বর দেখা যায়। পেটের গোলমাল, ডায়েরিয়াও হতে দেখা যাচ্ছে। শিশুদের সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ‘স্টমাক ফ্লু’ হতে। এই বিষয়ে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর মত হলো, রাস্তার খোলা খাবার, কাটা ফল কিংবা শরবত শিশুদের খাওয়ালেই পেটের গন্ডগোল হতেও বাধ্য। কারণ ঋতু বদলের এই সময়টিতে বিভিন্ন ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়ার প্রকোপও বাড়ে। খোলা, বাসি খাবার থেকে জীবাণু সংক্রমণও খুব সহজেই হয়। শুধু খোলা খাবারই নয়, প্যাকেটবন্দি খাবার থেকেও শিশুদের পেটের রোগও হতে পারে।
‘ফুড পয়জ়নিং’ কিংবা খাবারে বিষক্রিয়া দু’ভাবেও হতে পারে। চিকিৎসকরা মনে করেন, রাস্তা থেকে যে খাবার কিনে দিচ্ছেন তাতে হয়তো আগে থেকেই ব্যাক্টেরিয়া জন্মে গেছে। সেই খাবার বিষাক্ত হয়ে গেছে। যেমন- রোল-চাউমিনে যে কাঁচা স্যালাড দেয় তা হয়তো অনেক আগে থেকেই কেটে রাখা ছিলো। কিংবা কাটা ফল বা রাস্তা থেকে কেনা আচার, তার মধ্যেও হয়তো ছত্রাক জন্মে গেছে যা বাইরে থেকে দেখে বোঝারই উপায় নেই। তেমন খাবার পেটে গেলে বিষক্রিয়াও হতে বাধ্য। সেই খাবার শরীরে প্রবেশ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই বমি এবং অন্যান্য উপসর্গও দেখা দিতে পারে। আবার দোকান থেকে কেনা প্যাকেটবন্দি খাবার কিংবা প্রক্রিয়াজাত মাংস, যা বহু আগে থেকেই রাসায়নিক দিয়ে সংরক্ষণ করে রখা হয়েছিলো, তেমন খাবার থেকেও অনেক সময় বিষক্রিয়া হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে মারাত্মক পেটের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকিও থাকে।
কেবলমাত্র রাস্তা থেকে কেনা খাবারই নয়, বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিজে রেখে দেওয়া বাসি খাবার থেকেও অনেক সময় বিষক্রিয়া হতে পারে। কাটা ফল, ঢেকে না রাখা খাবার, কাঁচা মাছ কিংবা মাংস থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে।
কী কী খাবার থেকে বিষক্রিয়ার হতে পারে?
# দুধ ভালো করে না ফোটালে তার থেকেও অনেক সময় বিষক্রিয়া হতে পারে। দুগ্ধজাত খাবার যদি বাসি হয়ে থাকে, তাহলে তা না খাওয়াই ভালো।
# মাছ কিংবা মাংস অনেক দিন ধরে ফ্রিজে রাখা থাকলে, তা শিশুদের না দেওয়াই ভালো। বিশেষ করে রান্না করা খাবার বাসি হতে দেবেন না।
# কাটা ফল, সে রাস্তার হোক কিংবা বাড়িরই হোক— ফ্রিজে অনেক দিন ধরে রেখে দেওয়া খাবার, কোনওটিই শরীরের জন্য মোটেও ভালো নয়।
# আবার প্যাকেটজাত খাবার, প্রক্রিয়াজাত মাংস, দোকান থেকে কেনা বেকড খাবার এই সময়টিতে না খাওয়ানোই ভালো।
বাবা-মায়েদের করণীয় কী?
# এই সময় শিশুদের শরীরে পানির ঘাটতি হয়। তাই বার বার লবণ-চিনির পানি খাওয়াতে হবে।
# ভালোভাবে হাত ধুয়ে তবেই শিশুকে খাবার খাওয়াবেন।
# শিশুর বার বার বমি হলে তখন তরল খাবার দিতে হবে। এই সময় দুধ খাওয়াবেন না।
# তেলমশলা ছাড়া রান্না খাবার দেওয়া, হালকা স্যুপ খাওয়ালেই ভালো। টাটকা মৌসুমি ফলও দিতে পারেন।
# অবশ্যই পানি ফুটিয়ে খাওয়াতে হবে।
৬) চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও রকম ওষুধ কিংবা অ্যান্টিবায়োটিক নিজে থেকে কখনও খাওয়ানো যাবে না। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org