এম. এইচ. সোহেল ॥ গত কয়েক সপ্তাহে আমরা যা দেখলাম তা পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায়নি। এক ছাত্র অভূত্থানের মাধ্যমে পতন ঘটেছে আওয়ামী লীগ সরকারের। বহু রক্তের বিনিময়ে দেশের ইতিহাসে ছাত্রদের অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটে।
বিজয় অর্জিত হলো ছাত্র-জনতার। বাংলাদেশের ইতিহাসে আরেকটি নতুন প্রজন্মের ইতিহাস সৃষ্টি হলো। বছরের পর বছর মানুষ যেভাবে নিগৃহিত হয়েছে সেই দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রতিফলন আমরা দেখেছি।
সব মিলিয়ে নতুন এক অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে। নতুন করে জন্ম হয়েছে বাংলাদেশের। এদেশের ছাত্ররা নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। গঠিত হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার। এই অন্তর্বর্তীকালিন সরকার ৩ মাস দেশ চালাবেন এবং নতুন একটি নির্বাচন দিয়ে বিদায় নেবেন।
এদেশে ছাত্র-জনতার অভূত্থানের ইতিহাস আগেও ছিলো। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভূত্থান এবং নব্বইয়ের এরশাদ পতন আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা ছিলো অগ্রগণ্য। দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতায় ছিলেন। বিরোধী দলগুলো ওই ৯ বছর আন্দোলনে কিছু্ই করতে পারেনি। কিন্তু যখন ছাত্ররা বেরিয়ে এলেন এরশাদের বিরুদ্ধে তখন এরশাদের পতন ঘটলো।
এবারও বিগত ১৫ বছর ধরে যখন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কোনো কিছু করতে পারলো না, তখন এদেশের ছাত্ররা মাঠে নামলো। সাধারণ একটি দাবি নিয়ে তারা আন্দোলন শুরু করেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন। কিন্তু সেই দাবিকে আওয়ামীলীগ সরকার উপেক্ষা করে। ছোট্ট এই দাবিটি না মানার কারণে বৃহৎ এক আন্দোলনে পরিণত হয়।
দেশজুড়ে শত শত ছাত্র ও সাধারণ মানুষকে জীবন দিতে হয়। পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার সংখ্যা দিনকে দিন আরও বাড়তে থাকে। যা এক সময় সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
তবে হাসিনা সরকারের একমাত্র ভরসা ছিলো সেনাবাহিনী। কিন্তু লক্ষ-কোটি ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী যেতে পারে না। সেই কারণে শেষ সময় এসে সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের উপর গুলি চালাতে অস্বীকার করার কারণেই শেষ পর্যন্ত হাসিনাকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে হয়েছে।
ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ও ইন্টারনেট বন্ধের কারণে দেশের অর্থনীতিতে পড়ে এক বিরুপ প্রভাব। বিদেশী রেমিটেন্সেও ব্যাপক ধ্বস নামে। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীরা বৈধ উপায়ে রেমিটেন্স না পাঠিয়ে অবৈধ পন্থায় অর্থাৎ হুন্ডির মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে থাকে। এটি মূলত সরকারের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিবাদ ছিলো। যে কারণে রিজার্ভ ডলারে ব্যাপক পতন হতে থাকে। এই ক্ষেত্রেও শেখ হাসিনা এক চাপের মধ্যে পড়েন। সব মিলিয়ে এক বিদঘুটে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
তবে ছাত্র-জনতার অভূত্থানের মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটলো। এদেশের ছাত্ররা কি করতে পারে তা আরেকবার প্রমাণ হলো। বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হলো এই স্বাধীনতা। বাংলাদেশে নতুন একটি ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। আর এটি করেছে এ দেশের রাজনৈতিক দল নয়, করেছে ছাত্ররা।
আমরা বায়ান্ন, উনসত্তর এবং নব্বইয়ের পর এবার দেখলাম এক ছাত্র বিদ্রোহ যা আগে কখনও দেখিনি। তবে পূর্বের সকল ইতিহাস এবার ভঙ্গ হয়েছে। আমরা এতো বিদ্রোহ আগে কখনও দেখিনি।
এখন আমাদের প্রত্যাশা একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হবে এবং দেশে শান্তি ফিরে আসবে। দেশের মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে। দেশের মানুষ ও সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে পারবেন।
সরকারের আজ্ঞাবহ পত্রিকাতে রূপান্তর করার জন্য দেশে যখন আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় ছিলো তখন নতুন করে নিয়ম করা হয় অনলাইন পত্রিকাগুলো তথ্য মন্তণালয় থেকে অনুমোদন নিতে হবে। আমাদের ঢাকা টাইমস্ এর অনলাইন অনুমোদনের জন্য ৪ বছর আগে যখন ঘোষণা করা হয়, তখনই আমরা আবেদন করি। এরপর তদন্ত সম্পন্ন হয়। ২০২২ সালে যখন প্রথম অনলাইন নিবন্ধন দেওয়া শুরু হয় তখন প্রথম লিস্টেই দি ঢাকা টাইমস্ এর নাম ছিলো। কিন্তু অদৃশ্য এক শক্তির কারণে সেই লিস্ট পরে সংশোধন করে দি ঢাকা টাইমস্ কে বাদ দেওয়া হয়। সেই সময় কেবলমাত্র সরকার সমর্থিত পত্রিকাগুলোকে অনুমোদন দেওয়া হয়। এর পরবর্তী সময়ে আরও দুইবার লিস্ট দেওয়া হলেও ঢাকা টাইমস্ কে দেওয়া হয়নি। আমরা জেনেছি যারা আওয়ামীলীগের হয়ে কাজ করে এবং যারা লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছে কেবলমাত্র তারাই অনলাইন পত্রিকার অনুমোদন পেয়েছেন। এমন কি আমাদের ঢাকা টাইমস্ ডট কম ডট বিডি ডোমেইনও রিনিউ করেনি আওয়ামীলীগ চালিত বিটিআরসি। আমরা দি ঢাকা টাইমস্ ডট কম ডোমেইন দিয়ে পত্রিকাটি চলমান রেখেছি।
ঠিক এভাবেই চলেছে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্র। আজ নতুন এক দিগন্তে প্রবেশ করেছে দেশ। আশা করি আমরা নিশ্চয়ই সুবিচার পাবো। আমরাও ফিরে পাবো সরকারী নিবন্ধন ডট বিডি ডোমেইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org