দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফেনি, কুমিল্লাসহ ৮ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। লাখ লাখ মানুষ আজ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এই অবস্থায় দলমত নির্বিশেষে সকলকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো দরকার।
গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে কুমিল্লায়- ১৮৮ মিলিমিটার। বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব জেলা বন্যা কবলিত, তার মধ্যে কুমিল্লা অন্যতম। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতকে বাংলাদেশে চলমান আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবেও দেখা হচ্ছে। বানের পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু ঘটেছে ফেনীর ফুলগাজীতে। দুর্গত জেলার মধ্যে রয়েছে, ফেনি, কুমিল্লা, ব্রাম্ভ্রণবাড়িয়া, নোয়াখালি, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, মঙ্গলবার হতে শুরু হওয়া এই দুর্যোগে ৬ জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এক লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৩টি পরিবার। চলমান এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৪৮ জন। দুর্গতদের জন্য ১,৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্রও খোলা হয়েছে জানিয়ে দুর্যোগ মন্ত্রণালয় বলছে, এইসব কেন্দ্রে ১৭ হাজার ৮৮২ জন আশ্রয় নিয়েছে। সেইসঙ্গে আশ্রয় পেয়েছে ৩ হাজার ৪৮৬টি গবাদি পশু। বন্যা কবলিত ৬টি জেলায় ৩০৯টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।
এদিকে দুর্যোগ মন্ত্রণালয় আজ দুপুর দেড় টায় জানিয়েছে যে, বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে জেলা প্রশাসকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফেনীর বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেখানে ৪০টি উদ্ধারকারী যান নিয়ে গেছেন ১৬০ জন সেনা সদস্য। স্থাপন করা হয়েছে একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টও। কাজ করছে নৌবাহিনীর ৭১ সদস্য ও ৮টি উদ্ধারকারী যান। সড়ক পথে পানি উঠায় বিজিবিসহ অন্যদের নৌযানও সেখানে নেওয়া হচ্ছে।
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারণে ঢাকা-সিলেট এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রেললাইনে পানি ওঠায় বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা দলমত নির্বিশেষ বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্রদের টিম বন্যার্তদের সাহায্য করার জন্য ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ করছেন। একটি টিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ করছে। সকলকে এইসব ত্রাণ শিবিরে ত্রাণ সামগ্রী প্রদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org