দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ উজান থেকে নেমে আসা তীব্র ঢল ও অতি ভারি বৃষ্টির কারণে গত ২০ আগস্ট হতে দেশের উত্তর-পূর্ব, পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে আকস্মিকভাবে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এই বন্যায় এ পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সরকারি হিসাব মতে, প্রায় ৫৮ লাখ মানুষ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে বেসরকারি হিসাবে নিঃস্ব মানুষের সংখ্যা প্রায় এক কোটির কাছাকাছি। আর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। জলাবদ্ধতায় রয়েছেন এখনও পানিবন্দি অনেকেই। তাদের এখন খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট হয়েছে বিশুদ্ধ পানির। সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। প্রচুর পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রী থাকলে বিশেষ করে দুর্গম এলাকায় পৌঁছাচ্ছে না ত্রাণসামগ্রী। এখনও খাবারের জন্য হাহাকার রয়েছে দুর্গতদের মধ্যে।
নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া যায় তারা হলেন- পরশুরাম উপজেলার উত্তর ধনীকুন্ডা এলাকার মৃত আমির হোসেনের ছেলে সাহাব উদ্দিন (৭২), একই উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের মধুগ্রামের দেলোয়ার হোসেন (৪২), ফুলগাজী উপজেলার নোয়াপুর গ্রামের শাকিলা আক্তার (২২), উত্তর করইয়া গ্রামের বেলালের ছেলে কিরণ (২০), দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে রাজু (২০), কিসমত বাসুড়া গ্রামের আবুল খায়ের (৫০), লক্ষ্মীপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ তারেক (৩২), শনিরহাট গ্রামের নূর ইসলামের মেয়ে রজবের নেচা (২৫), সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের মাবুল হকের ছেলে নাঈম উদ্দিন (২৮), ছাড়াইতকান্দি গ্রামের শেখ ফরিদের ছেলে আবির (৩), দাগনভূঞা উপজেলার উত্তর করিমপুর গ্রামের নুর নবীর ছেলে নুর মোহাম্মদ মিরাজ (৮ মাস) ও জয়লস্কর এলাকার হুমায়ুন কবিরের ছেলে জাফর ইসলাম (৭)।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা বুধবার জানিয়েছেন, বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। তবে ১১ জেলার ১২ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৪টি পরিবার এখনও পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫৮ লাখ ২২ হাজার ৭৩৪ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় এক কোটির কাছাকাছি। এই মানুষগুলো হারিয়েছেন সর্বস্ব।
বন্যা পরবর্তী পূনর্বাসনের জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এই বিষয়ে শুধু সরকার নয়, বেসরকারি মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের ঘুরে দাঁড়াতে সহযোগিতা করতে হবে।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org