দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মাল্টিভিটামিন বা সাপ্লিমেন্ট যখন খুশি তখন খাওয়া যায় না। কোন ভিটামিন কিংবা সাপ্লিমেন্ট কখন এবং কীভাবে খাবেন, তার নিয়মও রয়েছে।
কার্বোহাইড্রেট, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিনের পাশাপাশি শরীর সুস্থ রাখতে ভিটামিনও অত্যন্ত জরুরি। তবে আপনার শরীরে ভিটামিনের চাহিদা কতোটা, তা একমাত্র চিকিৎসকই বলতে পারবেন। প্রতিদিন খাওয়াদাওয়া থেকে ভিটামিন শরীরে প্রবেশ করলে তাই সবচেয়ে ভালো। তবে এখনকার যেসব খাদ্যাভ্যাস, তাতে ভিটামিন তো বটেই, শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানগুলোরও ঘাটতি হচ্ছে। আর সেই কারণেই মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট অথবা বিভিন্ন রকম সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার অভ্যাসও বাড়ছে। মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট খেয়ে নিলে যে আপনার শরীরের সব সমস্যা কমে যাবে, তা কিন্তু নয়। সঙ্গে শরীরচর্চা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও অনেক জরুরি। সেইসঙ্গে মনে রাখতে হবে, এই ধরনের মাল্টিভিটামিন বা সাপ্লিমেন্ট যখন খুশি খাওয়া যায় না। কোন ভিটামিন কিংবা সাপ্লিমেন্ট কখন এবং কীভাবে খাবেন, তার একটা নিয়ম রয়েছে।
তবে বর্তমান সময় মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট সবচেয়ে বেশি খাওয়া হয়। তবে অনেকেই জানেনই না, এই ধরনের সাপ্লিমেন্ট দিনের নির্দিষ্ট সময় খেলেই বেশি উপকার হবে।
এই বিষয়ে কোলকাতার চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেছিলেন, ভিটামিন দু’ধরনের— ফ্যাট সলিউবল ও ওয়াটার সলিউবল। পানিকে দ্রবণীয় ভিটামিন যেমন ভিটামিন বি ও সি খালি পেটে খাওয়া ভালো। ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন, যেমন— এ, ডি, ই এবং কে খাবারের সঙ্গে খেলেই বেশি ভালো কাজ করবে। খালি পেটে এই ওষুধগুলো খেলে পেটের গোলমাল, তলপেটে ব্যথাও হতে পারে। পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন বেশি খেয়ে ফেললে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কারণ হলো, অতিরিক্ত ভিটামিন প্রস্রাবের সঙ্গে তখন বেরিয়ে যায়। তবে সমস্যা তৈরি করে ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন। শরীর হতে ফ্যাট বেরোনোর প্রক্রিয়া অনেকটা জটিল। তাই এই জাতীয় ভিটামিন বেশি খেলে তা অন্য রোগের কারণও হতে পারে।
মাল্টিভিটামিন সব সময়ে প্রাতরাশের সঙ্গে খাওয়ায় বেশি ভালো। তাহলে সারাদিন শরীরের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ হবে। তবে খালি পেটে খেলেই বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকের ভাষায়, যদি ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খেতেই হয়, তাহলে তা দুপুর কিংবা রাতের খাবারের সঙ্গে খাওয়াই ভালো। দিনের একটি সময় ঠিক করে সেই সময়ই ভিটামিন ডি খেলে ভালো কাজ করবে। কেও যদি দুধের সঙ্গে খেতে চান, তাও ভালো। ভিটামিন সি ট্যাবলেট আবার যে কোনও সময়ই খাওয়া যায়।
অপর সাপ্লিমেন্টগুলোও যদি নিয়ম মেনে খাওয়া যায়, তাহলে ভালো। যেমন ক্যালশিয়াম সাপ্লিমেন্ট ভরা পেটেই খেতে হবে। খালি পেটে খেলে গ্যাসের সমস্যাও হতে পারে। ম্যাগনেশিয়ামের সাপ্লিমেন্ট খেলে তার সঙ্গে ক্যালশিয়াম ট্যাবলেট কখনও খাবেন না। জ়িঙ্ক শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করলেও কপারের সঙ্গে খেলে হিতে বিপরীতও হতে পারে। চিকিৎসকের ভাষায়, শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে কিংবা রক্তাল্পতার লক্ষণ দেখা দিলে, নিয়মিত আয়রণ ট্যাবলেট খেতে হবে। তবে এই আয়রণ ট্যাবলেট সকালে খালি পেটে খাওয়াই ভালো। যদি তাতে করে পেটের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে খাবারের সঙ্গেও খেতে পারেন। তবে যে ভিটামিরই খান না কেনো চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনও খাবেন না। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org