দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভুল চিকিৎসার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। আর এ কর্মটি করেছেন ল্যাব এইডের এক চিকিৎসক।
ল্যাব এইডের ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া ওই ছাত্রের নাম মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্র। গত ৫ সেপ্টেম্বর বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে মাসুমের পরিবারের পক্ষ থেকে ঢাবির সাংবাদিক সমিতিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ২০১০সালের প্রথম দিকে মাসুমের বাম পায়ের গোড়ালিতে টিউমার ধরা পড়লে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আমজাদ হোসেনকে দেখানো হয়।
তিনি এই রোগকে Xanthoma হিসেব চিহ্নিত করে অপারেশনের পরামর্শ দেন। গত ১লা ফেব্রুয়ারি, ২০১২ তারিখে অপারেশন করার পর ঐদিনই Biopsy রিপোর্ট করানোর জন্য ‘দ্য ল্যাবরেটরি’তে পাঠান। এরপর ৪ তারিখে ল্যাবএইড থেকে ড্রেসিং করানোর পরামর্শ দেন ডা. আমজাদ। ৬ তারিখে Biopsy রিপোর্ট দেখে তিনি এই রোগকে Xanthoma উল্লেখ করেন এবং কোনো সমস্যা নেই মন্তব্য করে তার কথামত ওষুধ চালিয়ে যেতে বলেন।
একই বছরের জুলাইতে অবস্থা আরো খারাপ হওয়ার পর তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঔষুধের পাশাপাশি লবণ ও গরম পানি দিয়ে সেক দিতে বলেন। এ ব্যবস্থা গ্রহণে কোন উন্নতি না দেখায় চলতি বছরের ৮ এপ্রিল ডা. আমজাদের সাথে আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি পুনরায় অপারেশন করতে বলেন এবং MRI করতে বলেন।
এমতাবস্থায় তিনি আগে করানো Biopsy সম্পর্কে কিছু বলেননি এবং Biopsy report টি নিজের কাছে রেখে দেন। পরবর্তী সময়ে মাসুমের পরিবারের পক্ষ থেকে পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাজ্জাদ হোসেনকে দেখানো হলে তিনি Biopsy রিপোর্ট দেখে মাসুমের sarcoma Cancer হয়েছে বলে মতামত দেন। পুনরায় Biopsy Report টি ল্যাবএইডের ডা. আমজাদকে দেখানো হলে তিনি তার ভুল অনুধাবন করে এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
এমতাবস্থায় ঢাবিতে মাসুমের সহপাঠী এবং শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে মাসুমের পরিবার ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ তাদের ভুল স্বীকার করে মাসুমকে ল্যাবএইডেই চিকিৎসা নেওয়ার কথা বলে। কিন্তু এত খারাপ অবস্থায় মাসুমের পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থার দাবি জানালে দায়সারাভাবে কলকাতার টাটা মেডিক্যাল সেন্টারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কলকাতায় সব টেস্ট করানোর পর ডাক্তার জানান, ক্যান্সার ফুসফুসসহ মাসুমের পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রোগীর বর্তমান যে অবস্থা তাতে এ রোগের চিকিৎসা পৃথিবীর কোথাও নেই। ফলে কলকাতা থেকে বিনা চিকিৎসায় মাসুমকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বেঁচে থাকতে তিন মাস সময় বেঁধে দেয়। ইতিমধ্যে আড়াই মাস পার হয়েছে।
ভুল চিকিৎসার কারণে মাসুমের জীবনকে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া এবং তার চিকিৎসায় বিশাল আর্থিক ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে এককোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে ল্যাবএইডের কাছে।
এদিকে ল্যাব এইড ভুল চিকিৎসার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকৃতি করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এহেন ভুল স্বীকার করেও মাসুমের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকৃতি জানানোর পর রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবির ব্যাপারে ল্যাবএইড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় বসার দাবিতে মঙ্গলবার ক্লাশ-পরীক্ষা বর্জন এবং বিভাগ ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েছে ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের আগস্টে একই হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় মারা গিয়েছিলেন বিশিষ্ট লোকসংগীত গবেষক এবং ঢাবির সংগীত বিভাগের অধ্যাপক ড. মৃদুল কান্তি। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তার পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা দিয়েছিল ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ।