দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনি কী প্রতিদিনই মাছ খান? কিন্তু দিনে কী পরিমাণ মাছ খেলে সুস্থ থাকবেন, এই খবর কী রাখেন? সেই প্রশ্নের উত্তরই দিয়েছেন কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ।
আমরা কথায় কথায় বলে থাকি, মাছে-ভাতে বাঙালি। তাই তো আমাদের মধ্যে অনেকেই প্রতিদিন মাছ খেয়ে থাকেন। নইলে তাদের রাতে ঠিকমতো ঘুমই আসে না।
তবে মাছ প্রিয় বাঙালির মনেও এই খাবার সম্পর্কে একাধিক প্রশ্ন রয়েছে। এই যেমন অনেকেই জানতে চান যে, প্রতিদিন কতোটা মাছ খেলে শরীর থাকে সুস্থ-সবল? সেই প্রশ্নের উত্তর জেনে নিতেই আমরা গিয়েছিলাম কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ শর্মিষ্ঠা রায় দত্তের কাছে। তাই আর সময় নষ্ট না করে ঝটপট তার কাছ থেকে এই বিষয়টা সম্পর্কে বিশদে নেওয়া যাক।
সেরার সেরা মাছ
আমাদের অতি পরিচিত সব মাছই হলো ফার্স্টক্লাস প্রোটিনের ভাণ্ডার। তাই এই খাবারে উপস্থিত প্রোটিন শরীর খুব সহজেই গ্রহণ করে। শুধু তা-ই নয়, এই প্রাণিজ খাবার নিয়মিত খেলে ভিটামিন ডি, ক্যালশিয়াম, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি-এর মতো জরুরি সব ভিটামিন এবং খনিজও পাওয়া যায়। মাছে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা ব্রেন ও হার্টের উপকারী। তাই নিয়মিত মাছ খেতে হবে।
রোজ কতটা মাছ খাওয়া যায়?
এই প্রশ্নের উত্তরে শর্মিষ্ঠা বলেছেন, ‘একজন সুস্থ-সবল ব্যক্তি প্রতিদিন, অর্থাৎ বছরের ৩৬৫ দিনই মাছ খেতে পারেন। এইক্ষেত্রে দিনে মোটামুটি ২০০ গ্রাম পরিমাণ মাছ খেতে হবে। চাইলে দুপুরে ১০০ গ্রাম ও রাতে ১০০ গ্রাম এভাবে ভাগ করেও খেতে পারেন। তাতেই শরীরে পুষ্টির ঘাটতি মিটে যাবে। সেইসঙ্গে সুস্থ থাকবে হার্ট, কিডনি, ব্রেন থেকে শুরু করে একাধিক জরুরি অঙ্গও। তাই প্রতিদিনের ডায়েটে মাছ রাখতে ভুলবেন না!’
কতটা ওজনের মাছ খাবেন?
আমাদের মধ্যে অনেকেই বেশি ওজনের তৈলাক্ত মাছ খেতে পছন্দ করে থাকি। এই ভুলটা করেন বলে তাদের শরীরের বেজে যায় বারোটা। তাই বড় মাছের বদলে ১ কেজির কম ওজনের মাছ খেতে হবে। চেষ্টা করুন কই, তেলাপিয়া, শিঙি, মাগুরের মতো জ্যান্ত মাছ খাওয়ার জন্য। তাতে মাছে উপস্থিত পুষ্টিগুণ একদম ঠিকঠাক মতো পাবেন। যার দরুন শরীরও থাকবে সুস্থ-সবল।
সমুদ্রের না নদীর মাছ খাবেন?
‘সমুদ্র ও নদীর মাছ, দুইই স্বাস্থ্যগুণে সেরার সেরা। তাই এদের মধ্যে অহেতুক বাধবিচার করে কোনো লাভ নেই। বরং যে ধরনের মাছ হাতের কাছে পাবেন, তাই খেতে পারেন। সবথেকে ভালো হয়, সপ্তাহে ৪ দিন মিষ্টি পানির মাছ ও সপ্তাহে ৩ দিন নোনা পানির মাছ খেতে পারলে। এই কাজটা করলে দেহে ভিটামিন, খনিজ ও ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের ভারসাম্য রক্ষা হবে। যে কারণে চট করে রোগের ফাঁদে পড়ে কষ্ট পেতে হবে না আপনাকে’, এমনটিই বলেছেন শর্মিষ্ঠা রায় দত্ত। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org