দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মানবতাবিরোধী অপরাধের চূড়ান্ত রায় ঘোষণার আগেই বেশ কয়েকটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে চূড়ান্ত রায় ফাঁস হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তদন্তে শাহবাগ থানায় জিডি করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার নাসির উদ্দিন মাহমুদ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “রায় ঘোষণার কয়েকদিন আগে খসড়া পর্যায়ে তা ফাঁস হয়ে থাকতে পারে।” ট্রাইব্যুনালের কম্পিউটার থেকেই খসড়া ‘লিকড’ হয়ে থাকতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রেজিস্ট্রার বলেন, “দেখা যায় যে, কথিত রায়ের খসড়ার সঙ্গে ঘোষিত রায়ের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু এটি আদৌ কোনো রায় নয়, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।” তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত রায়ে অনুচ্ছেদ নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে কথিত ‘লিকড’ রায়ে কোনো অনুচ্ছেদ নম্বর নেই। “এটি নিতান্তই একটি খসড়া, যা রায় ঘোষণার অনেক আগেই কোনোভাবে ‘লিকড’ হয়েছে। এ বিষয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি জিডি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ওই ফাঁস হয়ে যাওয়া রায় এ আসলে কি ছিল
রায় ঘোষণার পরে দেখা যায়, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের সঙ্গে বিচারপতিদের রায় প্রায় মিলে গেছে। ওই সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করেছে যে বেলজিয়ামভিত্তিক www.tribunalleaks.be সাইটে রায়-সংক্রান্ত তথ্য প্রথমে প্রকাশ করা হয়।
দাবি করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে, সেটির অনুলিপি আইনসচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকের অফিসের কম্পিউটারে রক্ষিত ছিল। ঘোষিত রায়ের সঙ্গে ফাঁস হওয়া নথির কিছু অংশের মিল আছে। তবে এতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে কী দণ্ড দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে উল্লেখ করা হয়নি। ওই সংবাদমাধ্যমের সাইটে ১৭২ পৃষ্ঠার মধ্যে ১৬৭টি পৃষ্ঠা প্রকাশ করা হয়।
এ বিষয়ে আইন প্রতিমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, আইন সচিব বক্তব্য দিয়েছেন।
তবে এ বিষয়ে আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেছেন, বিচার চলাকালে খসড়া চিন্তা, প্রাথমিক সিদ্ধান্ত বিচারকেরা লিখে রাখতেই পারেন। বিচার যখন মাসের পর মাস চলছে, অতএব চূড়ান্ত রায়ে সাহায্যের জন্য এ ধরনের খসড়া অন্যদের কম্পিউটারে কপি করে সেখান থেকে পাওয়া গেছে বলে বলাটা কম্পিউটার নিরাপত্তার ব্যাপারে আদালতের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট ব্যক্তিদের সাবধানতার অভাব এবং ব্যাপারটি না বোঝা ইত্যাদি ধরনের অদক্ষতা ও অযোগ্যতার প্রমাণ করে। তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে বিচারপতি নিজামুল হকের ঘটনার পর সরকারের এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন ছিল। কম্পিউটার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ না থাকায় ষড়যন্ত্রকারীরা রায়ের ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে।
রায়ের অনুলিপিতে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী মোট ২৩টি অপরাধে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। ফাঁস হওয়া রায়ে দেখা যায়, ১৭টি অভিযোগের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করে। এর মধ্যে মোট নয়টি অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আটটি অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেয়া হয়েছে। বাকি ছয়টি অভিযোগের সমর্থনে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করেনি।
উল্লেখ্য, রায়ের আগেই রায়ের কপি অনলাইন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় দেশ-বিদেশে বেশ সমালোচনা শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে আদালতও বেশ বিব্রত বোধ করছে। যে কারণে বিষয়টি তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।