দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ডায়েটে সাধারণ মহিলারা অবহেলা করে থাকেন। এটি নিয়ে চর্চা প্রায় হয় না বললেই চলে। তাই বিশিষ্ট পুষ্টিবিদের মন্তব্য লিপিবদ্ধ হলো এই প্রতিবেদনে। এতে মহিলাদের ডায়েট সম্পর্কে জানতে বেশ সুবিধা হবে।
সাধারণভাবে দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মহিলারা নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে মোটেও সচেতন নন। সে কারণে তারা ডায়েটেরও আশপাশ দিয়ে যেতে চান না। যে কারণে তাদের শরীরে ভিড় করে নানা সমস্যা। তাই মহিলাদের খাবার নিয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ শ্রাবণী মুখোপাধ্যায়। তার ভাষায়, ‘একদম ছোট বয়স হতেই মেয়েদের ডায়েট নিয়ে সাবধান হতে হবে। এরপর গোটা জীবনই খাবারদাবারে কিছু অদল-বদল আনাটা জরুরি। তাহলেই সুস্থ-সবল থাকা সম্ভব হবে।’
যে কারণে সময় নষ্ট না করে এই পুষ্টিবিদের থেকেই বয়স অনুযায়ী মহিলাদের ডায়েট সম্পর্কে বিশদভাবে জেনে নিন। এরপর অক্ষরে অক্ষরে তার পরামর্শ মেনে চললে রোগব্যাধি থেকেও দূরে থাকতে পারবেন।
কিশোরী হতে যুবতী
কিশোরী বয়স হতেই মেয়েদের শরীরে রিপ্রোডাক্টিভ হরমোন তৈরির কাজ শুরু হয়। এই সব হরমোন তৈরির জন্য ওই সময় শরীরে প্রোটিনের চাহিদা বাড়ে। তাই এই বয়স হতে প্রতিদিন পাতে রাখতে হবে মাছ, মাংস, ডিম, ছানা, পনির, সোয়াবিন কিংবা টোফু। সেইসঙ্গে আয়রণ সমৃদ্ধ খাবার যেমন বিভিন্ন শাকপাতা, মাংসের মেটেও খেতে হবে। সেইসঙ্গে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লেবু জাতীয় খাবারও খেতে হবে। এতে করে দেহে আয়রণ ঠিকমতো শোষিত হবে। এই ডায়েট কিশোরী বয়স হতে শুরু করে যুবতী অবস্থা পর্যন্ত মেনে চলাটা খুবই জরুরি।
প্রেগন্যান্সিতে হতে হবে সাবধান
প্রেগন্যান্সি অর্থাৎ শরীরে একটি নতুন প্রাণ ধারণ করলে ক্যালোরির চাহিদা এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। তাই এই সময়টিতে সুষম খাবার খাওয়ার দিকে অবশ্যই জোর দিতে হবে। বিশেষ করে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ শাক, সবজি ও ফল খেতে হবে। ক্যালশিয়ামের ঘাটতি মেটাতে খেতে পারেন দুগ্ধজাত খাবারও। সেইসঙ্গে মাছ, মাংস এবং ডিমের মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ গ্রহণ করতে হবে। এইসব নিয়ম মেনে চললে অনায়াসে গর্ভাবস্থার ৯টা মাস হেসেখেলে কাটাতে পারবেন বলে মনে করেন এই পুষ্টিবিদ।
ব্রেস্টফিডিং-এর ডায়েট
দেখা যায় অনেক মহিলা গর্ভাবস্থাতেও ডায়েট মেনে চলেন। তবে সন্তান জন্মের পর সেই দিকে নজরও দেন না। এই ভুলটা করেন বলে তাদের শরীরের বারোটা বেজে যায়। আর তখন ঘিরে ধরে একাধিক জটিল অসুখ। তাই ব্রেস্টফিডিং করার সময় অবশ্যই আয়রণ সমৃদ্ধ শাক, সবজি খেতে হবে। সেইসঙ্গে ডায়েটে নিজের পছন্দ মতো প্রোটিন যুক্ত খাবারও রাখুন। সেইসঙ্গে নিয়মিত খান ফল। তাতে সুস্থ-সবল থাকতে পারবেন।
৪০-এর পর আরও বেশি সাবধান হতে হবে
বয়স ৪০ পার হওয়ার পরই মহিলাদের শরীরে একাধিক হরমোনাল পরিবর্তন শুরু হয়। যে কারণে হার্টের অসুখ, হাড়ের অসুখ হতে শুরু করে একাধিক জটিল রোগের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কাও বাড়ে। তাই বয়স ঊর্ধ্বমুখী হলে আরও বেশি করে ডায়েট নিয়ে তখন সাবধান হতে হবে। সেই ক্ষেত্রে প্রতিদিন দুগ্ধজাত খাবার, মৌসুমী শাক-সবজি ও ফল খান। সেইসঙ্গে প্রতিদিন ব্যায়াম হলো মাস্ট। আশা করছি যে, লাইফস্টাইলে এই সামান্য বদল আনলে সুস্থ থাকতে পারবেন।
রোগব্যাধিতে পৃথক ডায়েট
আজকাল অনেক মহিলা কম বয়সে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, বিপি হতে শুরু করে একাধিক ক্রনিক রোগেও ভুগছেন। এই প্রত্যেকটি রোগকে বশে রাখতে চাইলে ডায়েটে বদল আনাটা জরুরি। তাই শরীরে কোনও ক্রনিক রোগ থাবা বসালেই চিকিৎসকের পাশাপাশি পুষ্টিবিদের পরামর্শও গ্রহণ করুন। তিনি আপনাকে একটা ডায়েট চার্ট তৈরি করে দেবেন। সেই অনুযায়ী খাবারও খান। আশা করা যায়, এই নিয়মটি মেনে চললে রোগ অনায়াসেই বশে চলে আসবে। এই প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যেই লেখা। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org