দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গর্ভবতী মহিলারা এমনিতেই নানা রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগেন। তখন কুসংস্কার ছড়িয়ে অকারণে হবু মায়ের চিন্তা বাড়ানো মোটেও উচিত নয়।
মা হতে চলেছেন শুনলেই চারদিকে নানা বিধিনিষেধ ও কুসংস্কারের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়ে যায়। ‘এটা করোনা, ওটা করোনা’, শুনতে শুনতে হবু মা যেনো ক্লান্ত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। অতিরিক্ত বিধিনিষেধের কারণে বিরক্তও হন। এই সময় গর্ভবতী মহিলা এমনিতেই নানা রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগেন। তখন কুসংস্কার ছড়িয়ে অকারণে তার চিন্তা বাড়ানো মোটেও উচিত নয়।
শরীরচর্চায় নিষেধ
এটি ঠিক যে, গর্ভাবস্থায় শরীরকে বাড়তি বিশ্রাম দেওয়া দরকার। তাই বলে সারাদিন শুয়ে বসে কাটালেই চলবে না। মাঝে-মধ্যে হালকা কাজ কিংবা পরিশ্রম করাও দরকার। তবে কী ধরনের কাজ, কতোটা করবেন তা হবে চিকিৎসকের নির্দেশমতো। তার পরামর্শ মেনেই করতে হবে শরীরচর্চা। তাতে প্রসবকালীন সমস্যাগুলো কম হবে। অনেকেই উপদেশ দেন যে, গর্ভাবস্থায় শরীরচর্চা করা মোটেই উচিত নয়। এই ধারণা একেবারেই ভুল।
ঘুরতে যাওয়াও বারণ
যারা গর্ভবতী তাদের অনেকেই ঘুরতে যেতে নিষেধ করেন। বিশেষ করে পাহাড় জঙ্গলে যাওয়ার বিষয়ে এই বিধি নিষেধ বেশি থাকে। এই উপদেশ মোটেও ঠিক নয়। সারাদিন ঘরে বসে থাকলে মানসিক চাপ আরও বাড়ে। তাই মাঝে-মধ্যেই এদিক ওদিক ঘুরে আসাটা ভালো। তবে তার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। সাবধানে ও সচেতনভাবে চলাফেরা করলে ও গ্রুপ ট্যুর করলে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
গর্ভাবস্থায় চুল রঙ করা যাবে না
অনেকেই বলে থাকেন যে, গর্ভাবস্থায় নাকি চুলে রঙ করা উচিত নয়। এই ধারণাও একেবারেই ভুল। চুল রঙ করে কিংবা কেটে যদি মন ভালো থাকে, তাহলে কোনই ক্ষতি নেই। তবে অ্যালার্জি কিংবা ঠাণ্ডা লাগার কোনো সমস্যা থাকে তাহলে সাবধান হওয়া জরুরি।
মর্নিং সিকনেস
অনেকেই মনে করেন, মর্নিং সিকনেস নাকি খালি সকালেই হয়ে থাকে। এটিও খুব ভুল ধারণা। মর্নিং সিকনেস হলো শরীরে ক্লান্তি আসা, বমিভাব, মাথা ঝিমঝিম করা, গা গোলানোর মতো নানা উপসর্গ। এই সমস্যা সারাদিন ধরে হতেই পারে। তাই শরীরের অবস্থা বুঝে বিশ্রামও নিতে হবে।
পোষ্যকে আদরে নিষেধ
অনেকেই মনে করেন, গর্ভবতীদের কাছে নাকি কুকুর-বিড়ালের ঘেঁষাও নিষেধ। এই ধারণাও মোটেও ঠিক নয়। উল্টো এই সময় পোষ্যরা তার মালকিনের খেয়ালও বেশি রাখে। কোনও বিপদ বুঝলে সকলকে চেঁচিয়ে সাবধান করে দিয়ে থাকে। তবে এই সময় পোষ্যদের পরিচ্ছন্নতার দিকে বেশি নজর দেওয়াটা উচিত। পশুর রোম মা কিংবা শিশু কারও পক্ষেই ভালো না।
সব মিলিয়ে এক কথা হলো গর্ভাবস্থায় আনন্দে থাকুন। নেতিবাচক কথা শুনে সাবধান এবং সচেতন হতে পারেন, তবে মনে কোনও নেতিবাচক ধারণা পুষে রাখা যাবে না। নিয়ম করে ওষুধ খেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org