দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার শরীরে কী ভিটামিন ডি’র ঘাটতি রয়েছে? কোন সময় রোদে দাঁড়ালে এর ঘাটতি মিটে যাবে? এই উত্তর দিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক।
ভিটামিন ডি হলো অত্যন্ত জরুরি একটি ভিটামিন। এই ভিটামিন শরীরকে ক্যালসিয়াম গ্রহণে সাহায্য করে থাকে। যে কারণে হাড় হয় আরও শক্তিশালী। শুধু তা-ই নয়, এই ভিটামিনের গুণে ইমিউনিটিও সক্রিয় হয়। যে কারণে এড়িয়ে চলা যায় একাধিক জটিল রোগ। সেইসঙ্গে ভিটামিন ডি মনের হাল ভালো রাখতেও সাহায্য করে। এমনকি প্রদাহও কমায়। তাই সুস্থ-সবল জীবন কাটাতে হলে শরীরে ভিটামিন ডি’র স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে হবে বলে জানিয়েছে কলকাতা শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক আশিস মিত্র।
তবে মনে রাখতে হবে, ভিটামিন ডি’র সবথেকে বড় উৎসই হলো সূর্যালোক। ত্বকের উপর সূর্যরশ্মি এসে পড়লে এই ভিটামিন তৈরি হয়। তবে দিনের যে কোনও সময় রোদে দাঁড়ালে এই উপকার পাওয়া যাবে না। বরং একটা নির্দিষ্ট সময় খোলা আকাশের তলায় দাঁড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন এই চিকিৎসক।
অনেকের শরীরেই রয়েছে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি
এই চিকিৎসক জানিয়েছেন ভারত মূলত গরমের দেশ। এই দেশে সূর্যরশ্মির কোনও অভাব নেই। এরপরও এই দেশের একটা বড় অংশের মানুষের শরীরে এই ভিটামিন কম পরিমাণেই রয়েছে। যে কারণে তাদের অল্প বয়স থেকে হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়ে যায়। সেইসঙ্গে ইমিউনিটিও কমে। এমনকী মনও খারাপ হয়। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে দেহে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি মিটিয়ে ফেলতে হবে। সেই কাজে সাফল্য পেতে চাইলে প্রতিদিন সূর্যের আলোর তলায় দাঁড়াতে হবে।
কোন সময় রোদে দাঁড়াবেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসক আশিস মিত্র বলেছেন, ‘দিনের যে কোনও সময় রোদের তলায় দাঁড়ালেই ভিটামিন ডি পাবেন না। বরং আপনাকে সকাল ১০টা হতে দুপুর ৩টার মধ্যে ৩০ মিনিট রোদ পোহাতে হবে। এই কাজটি করতে হবে সপ্তাহে অন্তত:পক্ষে ৩ দিন। সেই ক্ষেত্রে শীতের দিনে স্নান করার আগে তেল মেখে হাত-পা উন্মুক্ত রেখে রোদের তলায় দাঁড়ান কিংবা বসেই পড়ুন। তাতে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি অনায়াসে আপনি মিটিয়ে ফেলতে পারবেন।’
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবারসমূহ
সাধারণত খুব কম খাবারেই ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য হলো:
# হেরিং এবং সার্ডিনের মতো মাছ
# কড লিভার অয়েল
# ক্যানড টুনা
# ডিমের কুসুম
# মাশরুম
এছাড়াও গোরুর দুধ, সোয়াবিনের দুধ, অরেঞ্জ জুস, ওটমিলেও পৃথক করে ভিটামিন ডি মিশিয়ে দেওয়া হয়। তাই এই ধরনের পানীয় ও খাবার নিয়মিত খেতে পারেন। তাতে বেশ উপকার পাবেন।
ভিটামিন ডি ঘাটতি’র লক্ষণসমূহ
বেশির ভাগ সময়ই শরীরে তেমন কোনও লক্ষণই থাকে না। তবে সমস্যা একটু বাড়াবাড়ির দিকে গেলে কয়েকটি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন:
# ক্লান্তি বোধ করা
# পেশিতে ব্যথা অনুভব করা
# হাড়ে যন্ত্রণা হওয়া
# পেশিতে টান ধরা
# মুড খারাপ থাকা ইত্যাদি সমস্যা।
তাই এই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর করে ফেলুন একটা ভিটামিন ডি টেস্ট। তাতে দুধের দুধ ও পানির পানি হয়ে যাবে।
ওষুধ
অনেক সময় খাবার খেয়ে ও সূর্যের আলোর তলায় দাঁড়িয়েও ভিটামিন ডি’র ঘাটতি মেটানো যায় না। এমন পরিস্থিতিতে ৬০ হাজার পাওয়ারের ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট প্রতি সপ্তাহে একটি করে খেতে বলা হয়ে থাকে। এভাবে ৮ হতে ১২ সপ্তাহ খেতে হয়। তাতে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। তবে সমস্যা বেশি থাকলে আরও বেশিদিন ধরে এই ওষুধটি চালাতে হয় বলে জানিয়েছেন এই চিকিৎসক আশিস মিত্র। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org