দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঠাণ্ডা পড়া শুরু হয়েছে। এই শীতল পরিস্থিতিতে বেড়েছে জ্বরের প্রকোপও। বাচ্চা থেকে বুড়ো, সকলেই এই সমস্যায় ভুগছেন।
সমস্যা হলো কিছু কিছু মানুষ জ্বর এলেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করে দেন। এতেই সমস্যা থেকে দ্রুত সেরে ওঠা যাবে বলে তাদের বিশ্বাস। তবে এই ধারণার পিছনে কী কোনও যুক্তি রয়েছে? সত্যিই কী জ্বর এলেই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করা উচিত? সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে কথা হয় বিশিষ্ট মেডিসিনের চিকিৎসক আশিস মিত্রের সঙ্গে। তার পরামর্শ পেলেই আপনার চোখের সামনে গোটা দৃশ্যটি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
জ্বর এলে অ্যান্টিবায়োটিক মাস্ট?
‘একেবারেই নয়, জ্বরের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার কোনও রকম সম্পর্ক নেই। আসলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জ্বরের পিছনেই থাকে ভাইরাসের কারসাজি। অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিরুদ্ধে একবারেই কার্যকর কিছু নয়। এই ওষুধটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। যে কারণে ভাইরাল ইনফেকশনে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে তেমন একটা উপকার পাওয়া যায় না। উল্টো শরীরের হাল আরও বিগড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’, এমনটিই জানিয়েছেন আশিসবাবু।
বিপদ অনেক বড় ধরনের
অহেতুক অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ে। এই ক্ষেত্রে পরবর্তীতে দরকারের সময় ওই অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কাজ নাও করতে পারে। তখন আবার অন্য কোনও অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। সমস্যা হলো, এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় হাতের কাছে কোনও বিকল্পই থাকবে না। তখন ছোট ছোট অসুখ থেকে সেরে ওঠাও কঠিন হবে। তাই হুটহাট অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া মোটেও উচিত নয়।
তাহলে জ্বর এলে কী করবেন?
প্রথম ৩ দিন শুধু প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে। প্যারাসিটামল ৫০০/৬৫০ পাওয়ার দিনে ৩ থেকে ৪টি খেতে পারেন। তাতেই জ্বর হয়তো কমে যাবে। সেইসঙ্গে গায়ে, হাত, পায়ে ব্যথাও কমে যাবে। সেইসঙ্গে পানিপান বাড়ান। দিনে অন্ততপক্ষে ২.৫ লিটার পানিপান করতে হবে। চাইলে ওর স্যালাইন পানিও খেতে পারেন। সেইসঙ্গে পাতে রাখতে হবে শাক, সবজি এবং ফল। সেইসঙ্গে চিকেন, মাছ, ডিম, সোয়াবিন, টোফুর মতো প্রোটিন রিচ জাতীয় খাবারও খেতে হবে। এতেই সমস্যাকে কাবু করে ফেলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।
চিকিৎসকের কাছে যান
যদি ৩ দিন পরও জ্বর না কমে, গায়ে হাত-পায়ে খুব ব্যথা হয় কিংবা বমি হতে থাকে বা ডায়ারিয়া হয়, তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তিনি যে টেস্ট করতে বলবেন, তা করিয়ে নিতে হবেন। এরপর তিনি যদি মনে করেন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন রয়েছে, তাহলে তা খাওয়াতে হবে। তবে এর আগে নয়। সেইসঙ্গে আরও কোনও ওষুধের প্রয়োজন থাকলে তাও খেতে হবে। তাই এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে আমাদের। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org