দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চিকিৎসকরা বলেছেন, শিশুর জ্বর কিংবা পেটখারাপ হলে অহেতুক ভয় না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। মুঠো মুঠো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ালেই কিন্তু বিপদ বাড়বে। তার চেয়ে নিয়ম মেনে চলতে হবে।
মৌসুম বদলের কারণে জ্বর, সর্দিকাশি কিংবা পেটের গোলমাল লেগেই থাকে। বর্তমানে তাপমাত্রার পারদও কমছে। সেইসঙ্গে নানা জীবাণুবাহিত অসুখবিসুখ হানা দিচ্ছে। জ্বর, গলাব্যথা, শুকনো কাশির পাশাপাশি ডায়রিয়াতেও ভোগাচ্ছে। সদ্যোজাত থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া, কিশোর-কিশোরী- সর্বত্র একই চিত্র বিদ্যমান। চিকিৎসকরা বলেছেন, শিশুর জ্বর কিংবা পেটখারাপ হলে অহেতুক ভয় পাবেন না। মুঠো মুঠো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ালে বিপদ আরও বাড়বে। তার থেকে নিয়ম মেনে চলতে হবে।
মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের মনে করেন, ঋতু পরিবর্তনের এই সময়টিতে ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়ার বাড়বাড়ন্ত একেবারেই স্বাভাবিক। তাই সাবধানও থাকতে হবে। সাধারণত ভাইরাস এবং ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণের জেরেও শিশুদের ডায়রিয়া হয়ে থাকে। ভাইরাসের ক্ষেত্রে রোটাভাইরাস, অ্যাডিনোভাইরাস, এন্টেরোভাইরাসের প্রকোপও বাড়ে এই সময়টিতে। ই কোলাই, সালমোনেলা, কলেরার ব্যাক্টেরিয়ার জন্যও এই সময় শিশুদের ডায়রিয়া হতে পারে।
চিকিৎসকের ভাষায়, কারও কারও ক্ষেত্রে জন্মগত কিছু কারণ যেমন- দুধ, গমজাতীয় খাবারে অ্যালার্জি থাকলে তার থেকেও হতে পারে ডায়রিয়া। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলেও নানা ধরনের রোগ হতে পারে। আবার কোনও খাবার থেকে সংক্রমণ হলেও অনেক সময় ডায়রিয়া হয়। ডায়রিয়ার সঙ্গে জ্বর কিংবা বমি হলে বুঝতে হবে যে, পেটে সংক্রমণ ঘটেছে।
বাবা-মায়েরা কী নিয়ম মানবেন?
৩ দিনের বেশি জ্বর থাকলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। প্যারাসিটামল খাওয়ানোর পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। নিজে থেকে যে কোনও ডোজ়ে ওষুধ খাওয়ালে ঠিক হবে সেটি জেনে নিতে হবে। এই সময় ওআরএস/ওরস্যালাইন খেতেই হবে। লবণ-চিনির পানি খাওয়াও ভালো।
এই সময় অবশ্যই বাড়িতে রান্না তেলমশলা ছাড়া হালকা খাবার খাওয়াতে হবে শিশুকে। বাইরের খাবার, ঠাণ্ডা পানীয়, আইসক্রিম একেবারেই দেওয়া যাবে না। কোনও রকম প্রক্রিয়াজাত খাবার কিংবা প্যাকেটজাত খাবার দেওয়া যাবে না। ডায়েটে বেশি করে মৌসুমি সব্জি-ফল রাখতে হবে। টাটকা ফলের রস বাড়িতে বানিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।
শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়াতে হবে। শরীরে পানিশূন্যতা হলেই ঠিক মতো প্রস্রাব হবে না, শিশুর মধ্যে আলস্য ভাব দেখা দেবে, বমি বমি ভাব থাকবে, জিভ-ঠোঁট-গালের ভিতরের চামড়া শুকিয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণও দেখা দেবে।
বাড়িতে সার্বিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও শিশুদের খাওয়ানোর পূর্বে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। নখের তলা ও আঙুলের ফাঁকের দিকে বিশেষ নজর রেখে হাত ধোয়ার প্রয়োজন। এ ছাড়াও, নজর রাখতে হবে বাসনপত্র পরিষ্কার রাখার দিকে। শিশুরা স্কুলে যেতে শুরু করলে শৌচাগার ব্যবহার করার পর ও খাওয়ার আগে হাত সাবান দিয়ে ধোয়ার অভ্যেস করানোটা খুবই জরুরি। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org