দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) সহযোগিতায় অ্যাক্সেস টু জাস্টিস প্রকল্পের (এটুজে প্রজেক্ট – ‘ডেভেলপমেন্ট অব মেডিয়েশন অ্যান্ড সিভিল লিটিগেশন প্র্যাকটিসেস ফর এনহান্সমেন্ট অব অ্যাক্সেস টু জাস্টিস প্রজেক্ট’) আওতায় আইন পেশাজীবীদের জন্য বিরোধ নিষ্পত্তি (মেডিয়েশন) প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ হয়েছে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ এবং বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট – জেএটিআই) অংশীদারিত্বে এ প্রশিক্ষণ জেএটিআই-তে অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে জড়িত এমন বিচারক, লিগ্যাল এইড অফিসার ও আইনজীবীর মতো আইন পেশাজীবীদের জন্য ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক শিক্ষামূলক বিভিন্ন সেশনের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশে কার্যকর বিচারব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আইন ও বিচার বিভাগের সহযোগিতায় গত বছরের এপ্রিলে এটুজে প্রকল্প চালু করে জাইকা। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে, গত বছরের নভেম্বরে জেএটিআই-তে আইন পেশাজীবীদের জন্য একটি প্রাথমিক বিরোধ নিষ্পত্তি প্রশিক্ষণ সফলভাবে পরিচালিত হয়।
সম্প্রতি, প্রকল্পটি আইন পেশাজীবীদের জন্য ‘অ্যাডভান্সড মেডিয়েশন ট্রেনিং’য়ের আয়োজন করে, যা বিচারক, লিগ্যাল এইড অফিসার ও আইনজীবীদের আরও দক্ষ করে তুলতে এবং বাংলাদেশের নাগরিক সমাজে বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। অংশগ্রহণকারীদের দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে এবং বাস্তবমুখী ও উপযোগী উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি কৌশল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়াতে এই উন্নত প্রশিক্ষণ কোর্সটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
জাপানের বিশ্বখ্যাত বিরোধ নিষ্পত্তি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মিয়াতাকে মাসাকো প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে এ প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেন। গত নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণে আলোচিত বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে এই সেশনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য মেডিয়েটর হিসেবে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত জ্ঞান ও কৌশল শেখানো হয়; ছদ্ম-বিরোধ নিষ্পত্তি সম্পর্কিত বক্তব্য ও অনুশীলনের মধ্য দিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে বোঝাপড়া আরও গভীর করা হয়। প্রকল্পের পাইলট জেলা হিসেবে নরসিংদী ও কুমিল্লা থেকে বিচারক, লিগ্যাল এইড অফিসার, আইনজীবী ও প্রযোজ্য বিচারিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সহ ৫০ জন অংশগ্রহণকারী এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করার পর অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সনদপত্র বিতরণ করেন প্রফেসর মিয়াতাকে মাসাকো। এই সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের এবং জাইকা বাংলাদেশ অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তোমোহিদে।
জাইকা বাংলাদেশ অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তোমোহিদে এ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশের সাথে জাইকার দৃঢ় অংশীদারিত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন; এবং ২০১৬ সাল থেকে বিচারিক মামলার জট কমানোর ক্ষেত্রে জাইকার ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি, তিনি বিচারক, লিগ্যাল এইড অফিসার ও আইনজীবীদের জন্য বিরোধ নিষ্পত্তি (মেডিয়েশন) প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতাগুলো নিয়ে গঠনমূলক আলোচনার পাশাপাশি, তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, অংশগ্রহণকারীরা বিচার প্রাপ্তির সুযোগ আরও বাড়ানোর ক্ষেত্রে নিজেদের জ্ঞান ভাগাভাগি করে নিবেন। তিনি বিচার ব্যবস্থার সংস্কারকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে তুলে ধরেন; এবং বাংলাদেশকে এ প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে জাইকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
আইন এবং বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহের সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় প্রতিরোধে আইন প্রয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নতি করার পরও, চলমান মামলা জটের বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। একইসাথে, তিনি বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার জায়গাগুলো তুলে ধরেন। বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে তুলতে তিনি উন্নত প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পরে তিনি জাইকা ও তাদের অংশীদারদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।
আশা করা যাচ্ছে, এটুজে প্রকল্পের সফল এ প্রশিক্ষণ থেকে অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা এবং কৌশল অংশগ্রহণকারীরা বিচারক, লিগ্যাল এইড অফিসার ও আইনজীবী হিসেবে নিজ নিজ পেশাগত ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবেন; এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশে বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। সবমিলিয়ে, যা সবার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। এছাড়াও, আশা করা যাচ্ছে, অংশগ্রহণকারীরা এ প্রশিক্ষণ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা অন্যান্য আইন পেশাজীবীদের সাথে ভাগাভাগি করে নিবেন। বাংলাদেশে বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা উন্নত করতে এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে প্রকল্পটি আগামীতেও কার্যক্রম চালু রাখবে। # খবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org