দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না-খাওয়া নিত্যদিনের এইসব অভ্যাস অনেকের ক্ষেত্রেই ডেকে আনতে পারে বিপদ। কিডনি বিকল হয়ে যাওয়া এর মধ্যে অন্যতম।

মণিপাল হসপিটালস-এর চেয়ারম্যান ডাঃ এইচ সুদর্শন বল্লাল বলেছেন, ‘বর্তমানে যে হারে কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে করে আমিও আতঙ্কিত। ৫০ বছরের কেরিয়ারে আমি এমন ভয়াবহ রূপ আর কখনও দেখিনি। যদি আমরা এখনও সচেতন না হই, তাহলে কী হতে পারে, সেটি ভাবনারও বাইরে।’
এ সম্পর্কে মণিপাল (বেঙ্গালুরু) হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের কনসালটেন্ট চিকিৎসক মহম্মদ ফাহাদ খান বলেছেন যে, ‘শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গই হলো কিডনি। দেহের বর্জ্য পদার্থ পরিশুদ্ধ করার সঙ্গেসঙ্গে, শরীরে খনিজ লবণের ভারসাম্য বজায় রাখতে কিডনি সাহায্য করে।’
কিডনিতে কোনও রকম সমস্যা হলে, সেটি ধরে পড়ে অনেক দেরিতে। অনেক সময় দেখা যায় একটা কিডনি বিকল হয়ে গেলেও, কাজ চলে অপরটি দিয়ে। যে কারণে ক্ষতি আঁচ করতে অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। ততোক্ষণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে গভীরে। ঠিক সেই কারণে কিডনির রোগ সংক্রান্ত সচেতনতামূলক প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে মণিপাল (বেঙ্গালুরু, ভারত) হাসপাতাল। ‘কিডনি রেজ়িগনেশন’ নামে একটি প্রচারমূলক পদক্ষেপও করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই প্রচারের উদ্দেশ্যই হলো, মানুষকে কিডনির রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করা।
বিভিন্ন গবেষণার রিপোর্ট বলছে যে, গোটা দেশের সিংহভাগ মানুষ কিডনির সমস্যায় ভুগছেন। এই সংখ্যাটি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। কিডনি ভালো রাখতে হলে দৈনন্দিন রুটিনে কিছু বদল আনার কথাও বলেছেন চিকিৎসকরা। সেগুলো আসলে কী?
# প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া বন্ধ করা।
# যখন তখন পেনকিলার না খাওয়া।
# ধূমপান হতে বিরত থাকা।
# পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়া।
# রক্তে শর্করা এবং রক্তচাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
# বছরে অন্ততপক্ষে একবার হলেও কিডনির পরীক্ষা করানো।
চিকিৎসক বল্লালের সংযোজন হলো, ‘এই নিয়মগুলো মেনে চললে কিডনির রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। কিডনি ভালো রাখার প্রথম শর্তই হলো, বেশি করে পানি খাওয়া ও বাইরের খাবার কম খাওয়া। সঙ্গে শরীরচর্চা করতে পারলে আরও ভালো হয়।’ এই দু’টির দিকে নজর দিলে কিডনি সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে আসবে বলে মত দিয়েছেন তিনি। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org