দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রক্তের গ্রুপের সঙ্গে ব্রেন স্ট্রোকের কী কোনো সম্পর্ক আছে? সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে যে, রক্তের গ্রুপের সঙ্গে স্ট্রোক হওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। সেই গ্রুপের রক্ত যাদের, তাদের আরও অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।

রক্তের গ্রুপের সঙ্গে স্ট্রোকের কী কোনো সম্পর্ক- এমন মনে হতেই পারে। তবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, রক্তের গ্রুপের সঙ্গে ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার গভীর সম্পর্কও রয়েছে। সেই গ্রুপের রক্ত শরীরে বইলে, কম বয়সে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রতি বছর বিশ্বে দেড় কোটির বেশি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সমীক্ষা তেমন কথায় বলছে। এর মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর শরীরই পক্ষাঘাতে পঙ্গু হয়ে যায়। স্ট্রোক আচমকাই চলে আসে, কিছু বুঝে ওঠার পূর্বেই বিপদ ঘটে যায়। স্ট্রোক কীভাবে প্রতিরোধ করা যাবে, তা নিয়েও গবেষণা চলছে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা জানাচ্ছে যে, রক্তের গ্রুপের সঙ্গে ব্রেন স্ট্রোকের যোগসূত্র খুঁজে পাওয়ার পর, সেটিই স্ট্রোক প্রতিরোধের একটি হাতিয়ার হতে পারে। তবে কীভাবে?
আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ মেরিল্যান্ড স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকরা খুঁজে বের করেছেন রক্তের গ্রুপ যদি ‘এ’ হয়, তাহলে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বেশি হবে, ‘ও’ গ্রুপ আবার সে দিক থেকে অনেকটা নিরাপদ। এই গ্রুপের রক্ত হলে স্ট্রোকের ঝুঁকি তেমন একটা থাকবে না। বাকি দুই রক্তের গ্রুপের ক্ষেত্রে স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকলেও ‘এ’ গ্রুপের মতো অবশ্য নয়। ‘এবি’ গ্রুপের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যাওয়া কিংবা স্মৃতিনাশের মতো রোগ এবং টিউবারকিউলোসিসের ঝুঁকিও বেশি।
স্ট্রোক কেনো হয়?
উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়াসহ নানা রিস্ক ফ্যাক্টর মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনীর পথকে আটকে দেয়। তখন রক্ত জমাট বাঁধতে থাকে এবং ধমনীতে রক্ত চলাচলে বাধা তৈরি করে। যে কারণে মস্তিষ্কের কোষ অক্সিজেনের অভাবে নিস্তেজ হতে হতে এক সময় অকেজো হয়ে যায়। এই বিষয়টিই স্ট্রোক। সাধারণত:, দু’ধরনের স্ট্রোক হয়- ইস্কিমিক এবং হেমারেজিক। ইস্কিমিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাধা পেয়ে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। হেমারেজিকে রক্তজালিকাগুলো স্ফীত হয়ে তখন ছিঁড়ে যেতে থাকে। যে কারণে মস্তিষ্কের ভিতর রক্তক্ষরণ শুরু হয়।
মেরিল্যান্ডের গবেষক স্টিভেন জে কিটনার এবং তার টিমের তরফ হতে জানানো হয়, ৬ লক্ষের বেশি মানুষের উপর প্রাথমিকভাবে পরীক্ষাটি করা হয়। ১৭ হাজার ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, যাদের রক্তের গ্রুপ ‘এ’ তাদের ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি ১৬ শতাংশেরও বেশি ও যাদের ‘ও’ গ্রুপের রক্ত, তাদের ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটা কম।
তাহলে বাঁচার উপায় কী?
তবে রক্তের গ্রুপ যা-ই হোক না কেনো, স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রক্তে শর্করার মাত্রা যাতে না বাড়ে, সেটিও দেখতে হবে।
# ওজন স্বাভাবিক রাখাও আবশ্যক, প্রত্যাহ নিয়ম করে অন্তত আধা ঘণ্টা হাঁটা কিংবা শরীরচর্চা করতে হবে।
# পরিবারে ব্রেন স্ট্রোকের ইতিহাস থাকলে বয়স ত্রিশ পেরোনোর পরই সুগার, প্রেশার এবং কিছু রক্ত পরীক্ষা করিয়ে রাখতে হবে।
# ধূমপান, মদ্যপান কমিয়ে ফেলতে পারলে ভালো, সেইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাবারও খেতে হবে।
যেমন কয়েক মিনিটের জন্য জিভ অসাড় হওয়া, কথা বলতে না পারা, হাত কিংবা পা অসাড় হয়ে যাওয়া বা চোখে অন্ধকার দেখার মতো ঘটনাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় ‘ট্র্যানজ়িয়েন্ট ইস্কিমিক অ্যাটাক’ কিংবা ‘টিআইএ’। একে ‘মিনি স্ট্রোক’ও বলা হয়ে থাকে। এমনটি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org