দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কাঁধের ব্যথা একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা, যা নানা কারণে হতে পারে। কাঁধের জয়েন্ট খুবই নড়াচড়া-সক্ষম হওয়ায় এতে আঘাত, প্রদাহ কিংবা পেশির টান লাগার ঝুঁকি বেশি থাকে।

ভারী জিনিস বহন, ভুল ভঙ্গিতে কাজ করা, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, দীর্ঘ সময় কম্পিউটারে বসে কাজ করা কিংবা বয়সজনিত কারণে হাড় ও জয়েন্টের ক্ষয়- এইসব কারণে কাঁধে ব্যথা হতে পারে। কখনো কখনো আর্থ্রাইটিস, সারভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিস বা নার্ভে চাপ পড়লেও কাঁধের ব্যথা অনুভূত হয়। তাই এ ব্যথাকে হালকাভাবে না দেখে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
কাঁধের ব্যথা হলে প্রথম করণীয় হলো বিশ্রাম নেওয়া। ভারী কাজ, ভার বহন বা দীর্ঘক্ষণ হাত উঁচু করে কাজ করা এড়িয়ে চলতে হবে। বিশ্রামের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত পেশি ও জয়েন্ট ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
হালকা ব্যথার ক্ষেত্রে কুসুম গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে কাঁধে ১০-১৫ মিনিট ধরে সেঁক দিলে উপকার পাওয়া যায়। আবার যদি ব্যথা হঠাৎ আঘাত বা পড়ে যাওয়ার কারণে হয়, তবে প্রথমে বরফের সেঁক দেওয়া ভালো। এতে প্রদাহ ও ফোলা কমে যায়। তবে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় গরম সেঁকই বেশি কার্যকর।
শরীরের ভঙ্গি ঠিক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চেয়ারে বসে কাজ করার সময় পিঠ ও কাঁধ সোজা রাখতে হবে। ভারী ব্যাগ এক কাঁধে না ঝুলিয়ে উভয় কাঁধে সমানভাবে ভাগ করে নেওয়া উচিত। ঘুমের সময় খুব উঁচু বালিশ ব্যবহার না করে মাঝারি বা নিচু বালিশ ব্যবহার করা ভালো।
কিছু হালকা ব্যায়ামও কাঁধের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। যেমন- হাত ঘোরানো, কাঁধ উপরে-নিচে করা বা দেওয়ালে হাত ঠেকিয়ে ধীরে ধীরে উপরে তোলা। তবে ব্যায়াম শুরু করার আগে ব্যথার মাত্রা বিবেচনা করতে হবে এবং তীব্র ব্যথা থাকলে জোর করে ব্যায়াম করা উচিত নয়।
প্রয়োজনে ব্যথানাশক ওষুধ (যেমন প্যারাসিটামল কিংবা আইবুপ্রোফেন) সেবন করা যেতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা থাকলে বা ব্যথা যদি হাত অবশ হয়ে যাওয়া, আঙ্গুল ঝিনঝিন করা বা শক্তি কমে যাওয়ার মতো উপসর্গের সঙ্গে যুক্ত হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে এক্স-রে বা এমআরআই পরীক্ষা করতে পারেন, যাতে ব্যথার আসল কারণ জানা যায়। কোনো ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, কাঁধের ব্যথা এড়াতে নিয়মিত সঠিক ভঙ্গিতে কাজ করা, মাঝেমধ্যে শরীর প্রসারিত করা, হালকা ব্যায়াম করা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা সবচেয়ে কার্যকর উপায়। তবে দীর্ঘস্থায়ী বা অস্বাভাবিক ব্যথা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই নিরাপদ।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org