দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা জানি মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে টিকে থাকার জন্য সম্পর্কের প্রয়োজন, আর সম্পর্কের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বন্ধুত্ব।

প্রকৃত বন্ধু সুখ-দুঃখে পাশে থাকে, অনুপ্রেরণা জোগায় এবং জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে বন্ধুত্ব শুধু তৈরি করলেই হয় না, সেটিকে দীর্ঘদিন টিকিয়ে রাখাও জরুরি। গবেষকরা দেখিয়েছেন, বন্ধুত্ব বজায় রাখার কৌশলগুলো মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে, চাপ কমাতে এবং জীবনকে সুখময় করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। নিচে বন্ধুত্ব বজায় রাখার কিছু কার্যকর উপায় তুলে ধরা হলো।
পারস্পরিক সম্মান এবং বিশ্বাস
বন্ধুত্বের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস। কোনো সম্পর্কে আস্থার অভাব হলে সেটি দীর্ঘস্থায়ী হয় না। গবেষণায় দেখা গেছে, যে বন্ধুরা একে অপরের গোপনীয়তা রক্ষা করে ও বিশ্বাস ভঙ্গ করে না, তাদের বন্ধুত্ব দীর্ঘ সময় টিকে থাকে। তাই বন্ধুর প্রতি আস্থা রাখা ও তাকে সম্মান করা অত্যন্ত জরুরি।
খোলামেলা যোগাযোগ
ভালো যোগাযোগ ছাড়া কোনো সম্পর্ক টিকে থাকতে পারে না। বন্ধুর সাথে নিয়মিত কথা বলা, মতামত ভাগাভাগি করা এবং খোলামেলা আলোচনা করার মাধ্যমে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে ভুল বোঝাবুঝি বাড়ে, যা বন্ধুত্ব নষ্ট করতে পারে।
সহানুভূতি এবং সহমর্মিতা
বন্ধুত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সহমর্মিতা। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বন্ধুর সমস্যায় পাশে দাঁড়ায় এবং তার অনুভূতি বুঝতে চেষ্টা করে, তাদের সম্পর্ক বেশি টেকসই হয়। বন্ধুর সুখ-দুঃখে অংশ নেওয়া, তাকে মানসিকভাবে সহযোগিতা করা বন্ধুত্বকে দৃঢ় করে।
সময় দেওয়া
আজকের ব্যস্ত জীবনে অনেকেই বন্ধুত্ব অবহেলা করেন। অথচ বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে একসাথে সময় কাটানো অত্যন্ত জরুরি। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা নিয়মিত বন্ধুদের সাথে দেখা করে বা যোগাযোগ রাখে, তাদের মানসিক চাপ কম থাকে এবং সামাজিক বন্ধনও মজবুত হয়।
ক্ষমাশীলতা
বন্ধুদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বা মতবিরোধ হতেই পারে। তবে বিষয়গুলোকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিত। মনোবিদদের মতে, ক্ষমা করার অভ্যাস বন্ধুত্বকে টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে এবং সম্পর্কের ভেতরকার নেতিবাচকতা কমায়।
স্বার্থহীনতা
প্রকৃত বন্ধুত্ব কখনোই স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে না। যদি সম্পর্কের ভেতরে কেবল লাভ-ক্ষতির হিসাব চলে, তবে তা ভেঙে যেতে বাধ্য। গবেষণায় দেখা গেছে, স্বার্থহীন ভালোবাসা ও আন্তরিকতা বন্ধুত্বকে দীর্ঘস্থায়ী করে তোলে।
ছোটখাটো যত্ন এবং মূল্যায়ন
বন্ধুর জন্মদিন মনে রাখা, তার সাফল্যে অভিনন্দন জানানো কিংবা কঠিন সময়ে খোঁজ নেওয়া—এসব ছোট ছোট বিষয় বন্ধুত্বকে আরও গভীর করে। একজন মানুষ যখন দেখে যে তার বন্ধু তাকে গুরুত্ব দিচ্ছে, তখন সম্পর্কের বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়।
তাই বলা যায়, বন্ধুত্ব বজায় রাখতে হলে, আন্তরিকতা, সময়, সম্মান ও সহানুভূতির মাধ্যমে সম্ভব। গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব শুধু মানসিক প্রশান্তি দেয় না, বরং স্বাস্থ্য এবং জীবনমান উন্নত করতেও সহায়তা করে। তাই আমাদের উচিত বন্ধুত্বকে কেবল আনন্দের উৎস নয়, জীবনের অপরিহার্য অংশ হিসেবেও দেখা এবং তা রক্ষা করার জন্য সকলকেই সচেষ্ট থাকা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org