খেজুর স্বাস্থ্যের জন্য কী কী উপকার করে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ খেজুর আমাদের দেশে অত্যন্ত পরিচিত এবং পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি ফল। বিশেষ করে রোজার মাসে এর চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।

তবে শুধু ধর্মীয় বা ঐতিহ্যগত প্রয়োজনেই নয়- খেজুরের স্বাস্থ্যগুণ বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও প্রাকৃতিক শর্করার সমন্বয়ে এই ফলটিকে বিশ্বের অন্যতম উপকারী ‘সুপার ফুড’ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। নিয়মিত ও পরিমিত মাত্রায় খেজুর খাওয়া শরীরের নানা উপকার করে, বাড়ায় শক্তি এবং প্রতিরোধক্ষমতা।

খেজুর শক্তির অন্যতম উৎস। এতে প্রাকৃতিক গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ থাকে, যা শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে। যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন বা দিনের কর্মব্যস্ততায় দ্রুত শক্তি প্রয়োজন হয়, তাদের জন্য খেজুর অত্যন্ত কার্যকর। আর রোজা রেখে ইফতারে খেজুর খেলে শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি ফিরে আসে।

Related Post

খেজুর হজমশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খাদ্যআঁশ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। প্রতিদিন ২-৩টি খেজুর খাওয়া অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক। যারা দীর্ঘদিন ধরে হজমের সমস্যায় ভুগছেন, বিশেষজ্ঞরা তাদের খাদ্যতালিকায় খেজুর যোগ করার পরামর্শ দেন।

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য খেজুর অত্যন্ত উপকারী। পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খেজুর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গবেষণা বলছে, নিয়মিত খেজুর খাওয়ার ফলে রক্তে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (LDL) কমার প্রবণতা দেখা যায়, যা ধমনি পরিষ্কার রাখতে সহায়ক।

খেজুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যেমন- ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড এবং ফেনলিক অ্যাসিড শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি-র‍্যাডিকেল থেকে সুরক্ষা দেয়। যে কারণে বিভিন্ন সংক্রমণ, প্রদাহ এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমে।

শুকনো খেজুর বা ‘চুয়া খেজুর’ হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। খেজুরে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস হাড় মজবুত করে, অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সহায়তা করে। শিশুদের বৃদ্ধি এবং বয়স্কদের হাড়ের যত্নে খেজুর একটি উপকারী খাবার হিসেবে বিবেচিত।

এ ছাড়াও খেজুরে থাকা ভিটামিন বি৬ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ভূমিকা রাখে। ত্বক এবং চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও খেজুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর প্রাকৃতিক অ্যান্টি-এজিং উপাদান ত্বকের ক্ষত মেরামত করে এবং চুল পড়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, খেজুর ছোট হলেও উপকারিতার দিক থেকে অত্যন্ত মূল্যবান একটি ফল। প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে খেজুর গ্রহণ শরীরের শক্তি, হজম, হৃদযন্ত্র, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য উল্লেখযোগ্য উপকার বয়ে আনে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খেজুর খাওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

>>>>>>>>>>>>>>

ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।

লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর

২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।

সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-

১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।

২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।

৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।

৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।

৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।

৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।

৭. ত্বকে র‌্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।

রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :

১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।

২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।

এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

অপরদিকে

জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:

১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।

২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।

৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।

৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।

৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।

৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।

৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।

৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org

This post was last modified on নভেম্বর ২৬, ২০২৫ 3:28 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

View Comments

Recent Posts

কানাডায় বরফের নিচে আয়োজন হলো পার্টি!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কানাডার কুইবেকে কিছু তরুণ বরফে জমে যাওয়া হ্রদের নিচে ডুব…

% দিন আগে

বরফে আচ্ছাদিত রাস্তা

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২…

% দিন আগে

শীতে ঠোঁট ফাটা হতে রক্ষা পেতে করণীয়

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়া এবং ঠাণ্ডা হাওয়ার কারণে মুখের…

% দিন আগে

নাসার রোভার মঙ্গল গ্রহে বজ্রপাতের সম্ভাব্য শব্দ ধারণ করলো

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা পরিচালিত পারসিভিয়ারেন্স রোভার সম্প্রতি…

% দিন আগে

স্বাস্থ্য সচেতন হতে হলে আপনাকে অবশ্যই পেয়ারা খেতে হবে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্বাস্থ্য সচেতন জীবনের অন্যতম শর্ত হলো সঠিক খাবার বেছে নেওয়া।…

% দিন আগে

ভারতের দক্ষিণি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানার না বলা কথা

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতের দক্ষিণি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানা তার জীবনের অভিজ্ঞতার…

% দিন আগে