দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গণিতের বিশাল জগতে কোন সংখ্যাটি আসলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে? অনেকেই হয়তো এক বা পাইয়ে’র (৩.১৪১৬) কথা বলবেন। যদিও বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদরা একমত যে “শূন্য’ বা “জিরো’ সব গণিতের ভিত্তিমূল।

এটি কেবলমাত্র একটি সংখ্যায় নয়, বরং একটি বিপ্লবী ধারণা যা আধুনিক বিজ্ঞান, অর্থনীতি এবং প্রযুক্তির পথ আরও প্রশস্ত করেছে।
সংখ্যা হিসেবে শূন্যের ধারণাকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক উদ্ভাবনের একটি বিবেচনাও করা হয়। বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতাতেই গণনা করার পদ্ধতি ছিল, তবে তারা শূন্যকে একটি ধারণা কিংবা স্থান-ধারক হিসেবে ব্যবহার করতেন না। শূন্যকে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে সংখ্যা হিসেবে ব্যবহার করা শুরু হয় মূরত ভারতবর্ষে। প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে এর ব্যবহার দেখা যায়। ভারতীয় গণিতবিদরা শূন্যকে কেবলমাত্র পরিমাণের অনুপস্থিতি হিসেবেই নয়, বরং গাণিতিক সমীকরণেও একটি সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য প্রবর্তন করেন।
এই “শূন্যে’র সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবহারগুলোর মধ্যে একটি হলো- এর স্থান ধারক হিসেবে ভূমিকা। শূন্য আমাদের স্থানীয় মান ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করেছে। আমরা শূন্য ব্যবহার করার মাধ্যমে এক এবং দশ আলাদা করতে পারি। এক, এক শ, এক লাখসহ বিভিন্ন সংখ্যার পার্থক্য তৈরি হয় কেবলমাত্র শূন্যের অবস্থানের কারণেই। শূন্য না থাকলে ১, ১০ কিংবা অন্য সব সংখ্যাকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা অসম্ভব হতো না। এই আবিষ্কারের কারণেই বিশাল এবং জটিল সংখ্যা সহজেই লেখা এবং গণনা করা সম্ভব হয়েছে।
শূন্যের ধারণা বীজগণিত এবং ক্যালকুলাসের জন্ম দিয়েছে। বীজগণিতে শূন্য একটি অপরিহার্য ভূমিকাও পালন করে। সমীকরণ সমাধান করার সময় আমরা প্রায়ই শূন্যের সঙ্গেই তুলনা করি। বিভিন্ন সমীকরণের সমাধান মূলত শূন্যের ধারণার ওপরে নির্ভরশীল। অপরদিকে, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান এবং প্রকৌশলের ভিত্তি ক্যালকুলাস, যা অসীমভাবে ক্ষুদ্র ধারণা নিয়েও কাজ করে। শূন্যের ধারণাটি সীমা ধারণার মূলেই রয়েছে, যা ক্যালকুলাসের বিকাশের জন্যই ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের ডিজিটাল জগৎ সম্পূর্ণভাবেই শূন্যের ওপর নির্ভরশীল। কম্পিউটারগুলোও বাইনারি কোড ব্যবহার করে কাজ করে, যা কেবলমাত্র ০ এবং ১ নিয়ে গঠিত। এই দু’টি প্রতীক লাখ লাখ জটিল নির্দেশ, ডেটা সংরক্ষণ এবং ইন্টারনেট সংযোগের ভিত্তি তৈরি করে। প্রাচীন গণিতবিদরা যদি শূন্যের ধারণা উদ্ভাবন না করতেন, তবে আজকের আধুনিক কম্পিউটিং এবং প্রযুক্তি সম্ভবত অসম্ভবই হতো। সব মিলিয়ে বলা যায়, শূন্য কেবল ‘কিছুই নয়’ এমনটি কিন্তু বোঝায় না, বরং এটি মানবজাতির জ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তিও। এই নীরব সংখ্যাই আমাদের মহাবিশ্বকে বুঝতে এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে এটিকে পরিবর্তন করতেও সক্ষম হয়েছে। নিউ সায়েন্টিস্ট অবলম্বনে প্রথম আলো অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org