দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যে কেও এমন কথা শুনলে আশ্চর্য না হয়ে পারবেন না। চা শ্রমিকদের দৈনিক মুজুরি দেওয়া হয় মাত্র ৫৫ টাকা। কি হয় এখন ৫৫ টাকায়? বাংলাদেশের সামপ্রতিক সময়ে দ্রব্যমূল্যের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে ৫৫ টাকায় কিছুই হওয়া সম্ভব না।
সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে চা বাগান রয়েছে। এখানে কিছু উপজাতি মহিলারা এই চা বাগানের মজুরি দিয়ে থাকেন। এসব মজুরদের একমাত্র পেশাই এটি। কিন্তু মজুরি এতো কম হওয়ায় ওইসব শ্রমিকদের মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে।
কমলগঞ্জে চা শ্রমিকদের দু:খ-দুর্দশার কথা জানা যায় ওই এলাকা পরিদর্শনে। বর্তমানে চালের কেজি ৩৫ টাকা, আর একজন শ্রমিকের দিন মজুরি মাত্র ৫৫ টাকা। এই ৫৫ টাকা দিয়ে একজনেরই তো তিন বেলা চলেই না। রবিবার বাগানে ছুটি থাকে, ওই দিনের মজুরি দেয়া হয় না। ৬ দিনে ৩৩০ টাকা পাওয়া যায়। এই টাকা দিয়ে দুই দিনও চলা যায় না। যাদের এক বা দুইটি সন্তান। তাদের সংসার কিভাবে চলবে।
ডানকান ব্রাদার্স শমশেরনগরের দেওছড়া চা বাগানের মহিলা শ্রমিক গীতা রবিদাস। গীতা রবিদাসের স্বামী দেওরাজ রবিদাস বলেন, গ্রামে কাজ করে খুব কষ্ট করে সংসার চালাই। বাগানে একটা নামের জন্য দরখাস্ত দিলাম, কিন্তু সাব (ম্যানেজার) নাম দিল না। সরেজমিনে চা বাগান ঘুরে শ্রমিকদের সাথে আলাপকালে ৫৫ টাকা মজুরিতে কর্মরত এধরনের সমস্যা জর্জরিত অসংখ্য শ্রমিকরা তাদের ক্ষোভের কথা জানান।
জানা যায়, ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর চা শ্রমিকদের মজুরি ৩২.৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৪৮ টাকা ধার্য করা হয়। প্রতি দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০১১ সালের ১ সেপ্টেম্বর ৭ টাকা বৃদ্ধি করে ৫৫ টাকায় উন্নীত করা হয়। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দৈনিক ৫৫ টাকায় পরিবার নিয়ে সংসার পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে চা শ্রমিকরা অভিযোগ তুলেছেন। চা শ্রমিকদের মজুরি ৩শ’ টাকা করার দাবিতে চা শ্রমিক সংঘ আন্দোলন শুরু করলেও চা শ্রমিক ইউনিয়নের দু’টি পক্ষ নির্বাচিত কমিটি ১২০ টাকা আর এডহক কমিটি ১৫০ টাকা নির্ধারণ করে মালিক পক্ষের কাছে দু’বছর পূর্বেই দাবিনামা পেশ করেছিল। তবে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ের চেয়ে চা শ্রমিক ইউনিয়নের ওই দু’পক্ষই ক্ষমতা গ্রহণে তৎপর রয়েছে। অথচ সাধারণ চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে তারা উদাসীন ভূমিকা পালন করছেন।
কর্মসংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন শ্রীমঙ্গল সফরকালে চা শ্রমিকদের মজুরি দৈনিক ১৫০ টাকা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রীর ঘোষণার দুই বছরেও চা শ্রমিকদের মজুরি দু’দফায় মাত্র ৫৫ টাকা বৃদ্ধিতে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
এ মতাবস্থায় চা শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তথ্যসূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক।