দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ Vanderbilt বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিদদের ধারণা, সরল তত্ত্ব রহস্যময় ডার্ক ম্যাটার (কালো বস্তু বা অদৃশ্য বস্তু) এর ধারণা দিতে পারে। তারা প্রস্তাব করেছেন, জগতের বেশির ভাগ ম্যাটার, বস্তু কণা গঠিত হয়েছে অস্বাভাবিক, ডোনাট আকৃতির এনাপোল নামে ইলেক্টোম্যাগনেটিক চুম্বকক্ষেত্র বিশিষ্ট কণা দ্বারা। এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা অনেক তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন, এখন দেখার বিষয় সরল তত্ত্ব কতটা গ্রহণযোগ্য হয় বিজ্ঞান সমাজে।
একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, ভ্যান্দারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রবার্ট শিরেরার এবং পোস্ট ডক্টরাল ফেলো চিও ম্যান হু সরল তত্ত্বের গভীরতা সম্ভাব্যতা সম্পর্কে জানান। শিরেরার মনে করেন, এটা সহজবোধ্য এবং স্বতন্ত্র সর্বোপরি এটা পরীক্ষা করা যাবে।
মনে করা হয়, মহাবিশ্বের মোট ভরের পাঁচ ভাগের চার ভাগের জন্যই দায়ী ডার্ক ম্যাটার। ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্বের মোট পদার্থের শতকরা ৮৩ ভাগ এবং মোট ভর-শক্তির শতকরা ২৩ ভাগ। এরা তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ (যেমন, আলো) নিঃসরণ বা শোষণ কোনটাই করে না, এমনকি এরা এসব তরঙ্গের সাথে কোন ধরণের মিথস্ক্রিয়াই করে না, তাই এদের সরাসরি দেখার কোন উপায় নেই। অন্য পদার্থের সাথে এরা কেবল মহাকর্ষ বলের মাধ্যমে ক্রিয়া করে বলে ধারণা করা হয়; সে হিসেবে এদেরকে সনাক্ত করার একমাত্র উপায় এদের মহাকর্ষীয় প্রভাব। ডার্ক ম্যাটার ধারণাটি এক ধরণের অনুকল্পিত (hypothesized) পদার্থ যার প্রকৃতি এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি। এটি এখনো নানা গবেষণা পরীক্ষাধীন পর্যায়েই আছে। অধিকাংশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী গুপ্ত পদার্থ আছে এবং ভবিষ্যতে এটা আবিষ্কৃত হবে মনে করলেও অনেকে আবার বিকল্প কিছু তত্ত্ব সমর্থন করেন।
কয়েকজন পদার্থবিদ মনে করেন, ডার্ক ম্যাটার ম্যাজোরানা ফারমিয়ন নামে প্রাথমিক কণা দ্বারা গঠিত হতে পারে। এই ম্যাজোরানা কণার ধারণা আসে ১৯৩০ সালের দিকে। তবে শিরেরার এবং হু মনে করেন ভিন্ন কণিকার। তারা এনাপোল নামে চৌম্বকক্ষেত্রে এর কথা বলেন যা বস্তু সমূহের দুই মেরু পার্থক্য করে দেয় বা উত্তর এবং দক্ষিণ মেরু পজেটিভ নেগেটিভ। এবং ব্যাখ্যা করেন কেন ডার্ক ম্যাটার সহজে প্রমাণ করা যায় না। ডার্ক ম্যাটারের বহিরাগত শক্তির কথা তারা বাতিল করে দেন। তারা জানান প্রচলিত চুম্বকত্ব দিয়েই ডার্ক ম্যাটার ব্যাখ্যা করা যায়। বেপার টা এত সহজ যে স্কুল থেকে শেখা চুম্বকত্ব বিষয়ক পাঠ থেকে ধারণা পাওয়া যাবে। তবে প্রচলিত ইলেক্ট্রম্যাগনেটিজম বা তড়িৎ চুম্বকত্ব থেকে এর মডেলিং ভিন্ন রকম হবে।
তবে যাই হোক ডার্ক ম্যাটার এর উপস্থিতি যে শতভাগ সিদ্ধ এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের আপত্তি নেই। তবে রহস্যের বিষয় এই ডার্ক ম্যাটার আসলেই কি দিয়ে তৈরি! শিরেরার এবং হু এর সরল তত্ত্ব এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে কেও নিশ্চিত নন। অনেক বিজ্ঞানী ধারণা করেন, ডার্ক ম্যাটার আমাদের আশে পাশে থাকা পদার্থের সমন্বয়েই তৈরি। ব্যতিক্রম এই যে এটা অনুজ্জল বা নিষ্প্রভ আলো নির্গত করে না। এই ধরণের বস্তুকে ব্যারয়োনিক পদার্থের (Baryonic Matter) সমষ্টিবদ্ধ একটিরূপ হিসেবে গণ্য করা হয়। ব্যারয়োনিক পদার্থ আমাদের পরিচিত নিউট্রন এবং প্রোটন দ্বারা গঠিত। আবার অনেকে ধারণা করেন, ডার্ক ম্যাটার খুবই উত্তপ্ত অদৃশ্য বস্তু (Hot Dark Matter) দ্বারা গঠিত। তবে এমনটা হবার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় মতবাদটি হচ্ছে ঠান্ডা ডার্ক ম্যাটার (Cold Dark Matter) বা WIMPS (Weakly Interacting Massive Particles) দ্বারা গঠিত। সব মতবাদকেই সামনে নিয়ে বিজ্ঞানীরা এই ডার্ক ম্যাটার এর রহস্যের কুল কিনারা করার চেষ্টা করছেন।
তথ্যসূত্র: সায়েন্স রেকোর্ডার, নাসা, ভ্যান্দারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়