দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্যামসাং এবং অ্যাপলের মধ্যে প্যাটেন্ট নিয়ে চলমান আইনগত শুনানির মাঝে তাদের ভেতরের অনেক খবরই বাইরের পৃথিবীর কাছে প্রকাশিত হচ্ছে। সর্বশেষ চমক হলো স্যামসাং অ্যান্ড্রয়েড ত্যাগ করতে চাচ্ছে।
বর্তমান স্মার্টফোনের বাজারে যে কয়টি প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা করছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে অ্যান্ড্রয়েড। অ্যান্ড্রয়েডের এই এগিয়ে থাকার পেছনে সবচেয়ে বেশি যে ভূমিকাটি ছিল তা হলো উন্মুক্ত লাইসেন্স বিতরণ। অ্যান্ড্রয়েড তার এই অপারেটিং সিস্টেমটির ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানভিত্তিক না রেখে বিশ্বের যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স প্রদান করেছে ফলে এটি খুব দ্রুত স্মার্টফোনের বাজার দখল করে ফেলে। অপরদিকে তালিকায় পরের অবস্থানে থাকা আইওএস এবং উইন্ডোজ ফোন নিজেদের প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ফোন তৈরি করার কারণে এখন পর্যন্ত স্মার্টফোনের বাজারে বেশ পিছিয়ে রয়েছে।
গত সপ্তাহে স্যামসাং তার চলমান আইনী লড়াইয়ে আইফোনের গোপন ডকুমেন্ট প্রকাশের জন্য অ্যাপলের একজন সেলস কর্মকর্তা থেকে একটি ডকুমেন্ট কিনে নেয়। সেখানে দেখা যায় যে, অ্যাপল কোম্পানী চিন্তা করছে কিভাবে অ্যান্ড্রয়েডের সাথে প্রতিযোগিতা আরো বাড়ানো যায়। এই সপ্তাহে অ্যাপল স্যামসাং এর একজন বিক্রয় কর্মকর্তা থেকে একটি গোপন ডকুমেন্ট কিনে আনে। দিনকে দিন স্যামসাং এর ট্যাবলেট বিক্রির হার নিচের দিকে নামছে। অভ্যন্তরীণ ডকুমেন্ট থেকে আরো দেখা যায়, স্যামসাং অ্যান্ড্রয়েড পরিত্যাগ করে নিজস্ব কোন অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড এবং অ্যাাপলের সাথে প্রতিযোগিতা করতে চাচ্ছে।
যে সকল ক্ষেত্রে স্যামসাং এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে গোপনে এগিয়ে যাচ্ছে তার পিছনের কতগুলো কারণ প্রকাশিত হয়:
১. স্যামসাং মনে করে অ্যাপলের গড় বৃদ্ধি কিছুটা ধীরে হবে। কিন্তু তাদের আইফোন ইউনিট বেশ দ্রুততার সাথেই এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবছর তাদের বিক্রির হার ১০ মিলিয়ন। স্যামসাং মনে করে ভবিষ্যতের স্মার্টফোনের বাজারটি আইফোনের দখলেই থাকবে।
২. স্যামসাং লক্ষ্য করছে যে, এইচটিসি তার বাজারকে বিভিন্ন দিকে প্রসারিত করছে। চুক্তিভিত্তিক তারা অ্যান্ড্রয়েডের সাথে যুক্ত থাকলেও তারা উইন্ডোজ ফোনও বাজারে ছেড়েছে। অ্যান্ড্রয়েডের বাজার দখলের নীতিতে অনেক নিম্ন কোম্পানীকে লাইসেন্স প্রদানের কারণে তারা কম-মূল্যের অ্যান্ড্রয়েড ফোন বাজারে ছাড়ছে যাদের অধিকাংশই নিম্নমানের ডিভাইস সমৃদ্ধ। ফলে ক্রেতারা ধীরে ধীরে অ্যান্ড্রয়েড থেকে মুখ সরিয়ে নিচ্ছে।
৩. তাছাড়া স্যামসাং অ্যান্ড্রয়েডের সাথে প্রতিবছর নতুন নতুন ডিভাইসের সামঞ্জস্যতাপূর্ণ মডেল আনতে গিয়ে বাজার ধরতে প্রতিযোগিতায় কিছুটা পিছিয়ে পড়ছে। ২০১১ সালে স্যামসাং তাদের নতুন গ্যালাক্সী ফোন অ্যাপলের সাথে আনতে গিয়ে ৩০ দিন দেরি হয়ে গিয়েছিল। ভবিষ্যতে স্যামসাং এই সমস্যায় পড়তে চায় না।
সর্বশেষ খবরটি হলো এই যে, স্যামসাং নিজেদের মতো করে ক্রেতার চাহিদা পূরণ করবে এমন ধরনের নতুন অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করতে চাচ্ছে। তাদের এই খবরটি স্মার্টফোনের বাজারে বেশ প্রভাব ফেলবে বলা যায়। বর্তমান সময়ে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের সবচেয়ে জনপ্রিয় ডিভাইস হলো স্যামসাং গ্যালাক্সী। স্যামসাং অ্যাান্ড্রয়েড পরিত্যাগ করলে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের বাজারে বেশ বড় একটি অংশই হারাবে। ফলে এই খবরটি গুগলের জন্যও একটি সংকেত। স্যামসাং ইতোমধ্যে উন্মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম তাইজেন ক্রয় করেছে। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি জনপ্রিয় স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম।
তথ্যসূত্রঃ বিজনেসইন্সাইডার