দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকারের ২০০ তম টেস্ট ম্যাচের মধ্য দিয়ে ২৪ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে আজ। সুদীর্ঘ এই পথচলায় যিনি তাঁর ব্যাটিং দিয়ে ক্রিকেটকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়, রেখে গেছেন অনেক মহাকাব্য যা হয়তো কোনোদিনই কেউ ভাঙতে পারবে না! পুরো ক্রিকেট বিশ্বই যাকে গড অব ক্রিকেট বলে মান্য করে।
আজ মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া ভারত বনাম ওয়েস্ট-ইন্ডিজের টেস্ট ম্যাচের মধ্য দিয়েই ব্যাট-প্যাড সব তুলে রাখবেন টেন্ডুলকার। এটি শচীনের ২০০ তম টেস্ট ম্যাচ, যেটিও সবচেয়ে বেশী টেস্ট ম্যাচ খেলার বিশ্বরেকর্ড।
ওয়ানডে এবং টেস্ট ম্যাচ মিলিয়ে ৩০ হাজারেরও বেশী রান তুলেছেন টেন্ডুলকার। বিশ্ব আর কবে কোনো ক্রিকেটারকে এতো রান সংগ্রহ করতে দেখবে কীনা এনিয়ে ঘোর সংশয়ে আছে। শত-কোটি মানুষের দেশ ভারতের বিপুল প্রত্যাশা ও চাপ নিয়ে টেন্ডুলকার বছরের পর বছর ধরে খেলে ধৈর্য্যের যে প্রতিমূর্তি গড়েছেন তা যুগ যুগ ধরে নতুন ক্রিকেটারদের আদর্শ হয়ে থাকবে।
ক্রিকেটের প্রায় সব রেকর্ডই নিজের করে নিয়েছেন টেন্ডুলকার। টেন্ডুলকারের জীবনে প্রাপ্তি এতো বেশী যে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের টেস্ট গড় ৯৯.৯৪ এবং ব্রায়ান লারার অপরাজিত টেস্ট রেকর্ড ৪০০ রানের ইনিংসটি টেন্ডুলকারের হয়নি এ নিয়ে খুব বেশী আফসোস নেই কারও।
১৯৮৯ সালে ১৬ বছর বয়সে যখন তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অভিষেক তখন কে ভেবেছিলো এই ছেলে যখন অবসর নিবে তখন বিশ্ব ক্রিকেট শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে যাবে? হয়তো কেউ ভাবেনি, কিন্তু টেন্ডুলকার নামক অমূল্য রত্নকে ঠিকই চিনেছিলেন তৎকালীন কোচ রমাকান্ত সরকার।
টেন্ডুলকারের জীবনের সবচেয়ে প্রাপ্তি বলে যেটি স্বীকার করেন সেটি হলো ২০১১ বিশ্বকাপ জয়। তখন বিশ্বকাপটি যে ভারত খুব বেশী করেই জয় করতে চেয়েছিলো একমাত্র টেন্ডুলকারের জন্য। এতো বছর ধরে ভারতকে সেবা দিয়ে এসেছেন অথচ তাঁর ঝুলিতে একটা বিশ্বকাপ থাকবে না, এমনটি মেনে নিতে পারছিলো না যেন কেউই। পুরো টূর্ণামেন্টে অধিনায়ক ধোনি দারূণভাবে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বকাপ পাইয়ে দিলেন টেন্ডুলকারকে।
দলের প্রয়োজনে টেন্ডুলকারের ব্যাট বিশ্বকাপেও ঝলসে উঠেছিলো বারবার। গতবিশ্বকাপেই সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়েছিলেন। এর আগে ২০০৩, ২০০৭ বিশ্বকাপেও টেন্ডুলকার ছিলেন উজ্জ্বল, বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকাতেও সবার ওপরে এই মাষ্টার ব্লাষ্টার।
টেন্ডুলকারের জীবনে ক্রিকেট কম রোমাঞ্চ নিয়ে আসেনি। ১৯৯০ সালে যখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৭ বছর বয়সে টেস্ট অভিষেক হয় টেন্ডুলকারের, তখন থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যেই ১৫টি সেঞ্চুরির মালিক বনে যান টেন্ডুলকার! অবশ্য ওয়ানডেতে টেন্ডুলকারকে সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭৯ ম্যাচ পর্যন্ত! কিন্তু একবার যখন পেয়ে গেলেন এরপর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে টানা ৪৯টি সেঞ্চুরি করে বসলেন! টেস্টেও করেছেন ৫১টি সেঞ্চুরি, সব মিলিয়ে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন টেন্ডুলকার।
নিজের ৩৭ তম জন্মদিনে নিজেকেই দিয়েছিলেন সবচেয়ে বড় উপহার! ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ২০০ রানের মাইলফলল স্পর্শ করেন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ৩৭ বছর বয়সে এসেও সেদিন টেন্ডুলকার খেলেছিলেন ২১ বছর বয়সের উদ্দাম তারুণ্য নিয়ে!
সব দেশের বিপক্ষে ওয়ানডে এবং টেস্টে সেঞ্চুরি করার রেকর্ডও টেন্ডুলকারের। অস্ট্রলিয়াতে যখন বিশ্বসেরা বোলিং লাইন-আপ ম্যাকগ্রা-শেন ওয়ার্নের স্বর্ণযুগ চলছিলো, সেখানে সিডনী টেস্ট সিরিজে পরপর দুই ইনিংসে টেন্ডুলকারের অপরাজিত ১৪৮ এবং ১১৪ রান ভারতকে জয় এনে দিলে, ডন-ব্র্যাডম্যান তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন, “এই ছেলেটা ঠিক আমার মতো খেলে!”
শচীনকে নিয়ে এ পর্যন্ত অনেকেই অনেক কথা বললেও সবচেয়ে উপযুক্ত কথাটি সম্ভবত আরেক গ্রেট ব্যাটসম্যান লারাই বলেছেন, “যখন আপনি বাস্কেটবল নিয়ে কথা বলবেন সেটি হবে জর্ডান, আপনি ক্রিকেট নিয়ে কথা বললে সেটি অবশ্যই টেন্ডুলকার!”
ডন-ব্যাডম্যান শচীনের খেলা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন, “আমি যখন টিভিতে তার খেলা দেখছিলাম তার টেকনিক, ব্যাটিং দক্ষতা আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। আমি কখনও আমার নিজের ব্যাটিং দেখিনি, কিন্তু সেদিন আমি অনুভব করছিলাম যেনো আমিই শচীন, আমি ঠিক এভাবেই খেলতাম!”
শচীনকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার একসময়ের ড্যাশিং ওপেনার ম্যাথু হেইডেনের একটি উক্তি অমর হয়ে আছে, “আমি ঈশ্বরকে দেখেছি, তিনি ভারতের ৪ নম্বর পজিশনে ব্যাটিং করেন!”