দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ছোট মুখে বড় কথা মানায় না বলে একটা প্রবাদ আছে। ছোটরা অনেক সময় বড়দের অনুকরণে কথা বলা শুরু করে। আর যখন ভয়ংকর গা সুড়সুড়ে কথা জুড়ে দেয় তখন ব্যাপারটা বিদঘুটে ঠেকে। ছোট বাচ্চাদের মুখে ভয়ংকর গা থমথমে করা কথা শুনে মা বাবারা স্বভাবতই ভয় পান। কেননা কথাগুলো কিভাবে ছোট বাচ্চারা শিখে ফেলে জানা হয় না তাদের। লেখাটিতে জানা যাবে, বাচ্চাদের মুখ দিয়ে বের হওয়া ভয়ংকর কথাগুলো যা পিতামাতাকে আতংকিত করার পাশাপাশি বিব্রতও করে।
ঘটনা-১
২ বছরের বাচ্চা একটি ছেলে রাতে ঘুমুতে যাবার আগে বাবাকে বলছে, “বিদায়! বাবা।” বাবা ভুল শুধরে দিয়ে বলেন, “শুভরাত্রি!” ছেলেটা বাবাকে ভীত করে দিয়ে বলে, সে জানে শুভরাত্রি তবে এবারের বেলায় বিদায় জানাচ্ছে তাকে।
বাবা ভীত হয়ে কয়েকবারই মাঝ রাতে ছেলে ঠিক মতন আছে কিনা দেখেন। এই টুকু বয়েসে তার মধ্যে মৃত্যু এবং বিদায় নেয়ার রীতি হঠাৎ করে কিভাবে উদয় হলো এর হিসাবে মেলানো যায় নি।
ঘটনা-২
৩ বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে সদ্য জন্ম নেয়া তার ভাই এর পাশে দাড়িয়ে। কিছু সময় দেখার পর সে বাবাকে চিৎকার করে বলে উঠে, ড্যাডি! এটা একটা মনস্টার (দানব), একে কবর দিয়ে ফেলা উচিত।
বাচ্চা মেয়েটার কথার কোন মর্ম উদ্ধার করতে পারে নি তার বাবা।
ঘটনা-৩
ভয়ংকর মুখ করে এক বাচ্চা বসে আছে তার মায়ের সাথে। মা জিজ্ঞাস করলো, তোমার কি হয়েছে? এইটুকুন বাচ্চা মেয়ের জবাবে অধিকাংশ বড়রাই ভিড়মি খাবেন। বাচ্চাটি বলেছিল, সে কল্পনা করছে রক্তের স্রোত তার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
বাচ্চাটা কিভাবে এতো ভয়ংকর দৃশ্য নিয়ে ভাবতে পারলে ভাবলেই গা শির শির করে।
ঘটনা-৪
এটি একটু মজার ঘটনাও বটে। ৭ বছরের এক শিশুকে কৌতুক করে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, গার্ল ফ্রেন্ড পাবার সবচেয়ে কাজের বুদ্ধি কি? শিশুটি খারাপ চরিত্রের বড়দের মতন উত্তর দিয়েছিল, আমার গার্ল ফ্রেন্ড হতে বলো, না হলে সারা জীবনের জন্য বাবা-মাকে দেখতে পাবে না।
এরকম সিনেমাটিক ডায়ালগ শিশুটি কোথায় থেকে শিখলো প্রশ্ন কর্তা ঠাওর করতে পারেন নি।
ঘটনা-৫
৫ এবং ৬ বছরের বাচ্চা মায়ের সাথে গল্প করছে। ৫ বছরের বাচ্চাটি বলে উঠে, মা তুমি মরে গেলে, তোমাকে আমি এই ছোট কাঁচের জারে ভরে রাখবো। মা কিছু বুঝে উঠার আগেই ৬ বছরের বাচ্চাটি বলে উঠে, এটা বোকামি হবে, একটা বড় জার খুঁজে বের করতে হবে ভরে রাখার জন্য।
ঘটনা-৬
৪ বছরের মেয়েটা তার মাকে ভয়ংকর ভয় পাইয়ে দিয়েছে। বেচারা মা এর রেশের ফলে পরের সপ্তাহে কেবল দুঃস্বপ্ন দেখেছিলো। ভোর ৪টায় মা এর ঘুম ভাংগলে দেখে মেয়েটা মুখের কাছে এসে ফিসফিস করছে। আর বলছে, তোমার চামড়া আমি ছুলে ফেলবো। এই ঘটনার পর মা চাকরিতে মনস্থির করতে পারেন নি। বুঝে উঠতে পারেন নি তার বাচ্চা কোথায় এগুলো শিখলো।
ঘটনা-৭
৩ বছরের এই বাচ্চাটি যথেষ্ট ভদ্র সুবোধ বালক। তবে তার সমস্যা একটাই হঠাৎ সে তার মাকে বলে বসে, সে আর কখনো তার হাড় খাবে না। সে প্রতিজ্ঞা করছে। মা এই অদ্ভুত আচরণের কোন কারণই খুঁজে পান নি।
ঘটনা-৮
আরেকটা ঘটনায় দেখা যায়, বাচ্চাটি প্রায়ই তার তার বাবার মুন্ডপাতের কথা বলছে। এর কারণ হিসাবে বলছে, বাবার মাথা কেটে নিলে সে সব সময় এর সাথে থাকতে পারবে। এরকম উদ্ভট ধারণার সূত্রপাত কোথায় জানা যায় নি।
ঘটনা-৯
৩ বছরের বাচ্চা বোন তার ছোট ভাইকে প্রথমবারের মতন কোলে নিয়ে বলে উঠে, আমি তো একে আগুনে ছুড়ে ফেলবো না!
বাচ্চাদের দ্বারা নানা রকম মজার ঘটনা হলেও, এই ঘটনাগুলো মোটেও মজার নয়। বাচ্চারা চারপাশ দেখে বড় হতে থাকে। পরিবেশ থেকে যা পায় তা থেকেই শিখতে থাকে। ধরে নেয়া হয়, বড়দের আচরণগুলো বাচ্চাদের নিত্য নৈমিত্তিক আচরণে ভূমিকার রাখে। মৃত্যু, ভয়ভীতি, সহিংসতা ইত্যাদি সংক্রান্ত কথাবার্তা বাচ্চাদের সামনে না করাটাই ভালো। হরর সিনেমা, বাচ্চাদের উপযোগি নয় এমন টিভি অনুষ্ঠানও বাচ্চাদের নাগালের বাইরে রাখা উচিত। ছোট বাচ্চারা, শিশুরা কিভাবে বেড়ে উঠছে এই বিষয়ে বড় সতর্ক না হলে উপরের ঘটনাগুলোর মতন অদ্ভুত সব ঘটনার সাক্ষী আপনিও হতে পারেন। তাই সাবধান, সদা সতর্ক থাকা উচিত। শিশুদের নিরাপদে বিজ্ঞান ভিক্তিক উপায়ে বড় করে তোলা উচিত।
তথ্যসূত্র: Boredpanda.com