ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ানক আকার ধারণ করছে। সিলেটসহ বহু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এসব দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রি না পৌঁছার কারণে মানুষ চরম দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে পানি কমতে শুরু করলেও বন্যায় এখনও লাখ লাখ লোক পানিবন্দি রয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে পানি সংকট। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণের জন্য বাড়ছে হাহাকার। এদিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে এবং নদী ভাঙনের ফলে বিলীন হয়ে গেছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। এদিকে ২৮ জুন কক্সবাজারে বন্যায় আরও ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রামুতে ২ জন, চকরিয়ায় ৩ জন ও কক্সবাজার সদরে ৩ জন প্রাণ হারায়।
সিলেটে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
সিলেট থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, সিলেটের কিছু উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও আবার কিছু কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। অধিকাংশ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। যেসব এলাকায় পানি কমছে সেখানে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতিতে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। দু’দিনে পানিবন্দি থাকা লোকজনের মধ্যে তীব্র খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণের জন্য হাহাকার বাড়ছে। দিনের পর দিন ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করলেও কিছুই পাচ্ছে না ভুক্তভোগীরা। বন্যার পানিতে সিলেটের গোয়াইনঘাট ও সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ভেসে যাওয়া ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জে নিখোঁজ তিন শিশুর হদিস এখনও মেলেনি।
২৮ জুন পর্যন্ত সিলেটের সঙ্গে ছাতক, দোয়ারাবাজার, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাটের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কের আংশিক তলিয়ে যাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলছে। ২৮ জুন সন্ধ্যা পর্যন্ত সিলেটের সুরমা কুশিয়ারা নদীর সবকটি পয়েন্টেই বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় বলে জানা গেছে। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, রামকৃষ্ণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আবদুল হামিদ প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেন্দিবাগ অগ্রসর যুবসংঘের কার্যালয়, ওমরশাহ তেররতন প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামেয়া ইসলামিয়া মিরাবাজার ও ঘাসিটুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের মধ্যে গতকাল খিচুরি বিতরণ করেন।
জানা যায়, টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির পথে রয়েছে। তবে দেশের সর্ব উত্তর-পূর্বের সীমান্তবর্তী জনপদ জকিগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সুরমা-কুশিয়ারা জকিগঞ্জে পানিবৃদ্ধির কারণে উজিরপুর, বড়পাথর, খলাছড়া, বারঠাকুরী ইউপির পিল্লাকান্দী গ্রামের কাছে ও জকিগঞ্জ পৌর এলাকার ছয়লেন গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। জকিগঞ্জ পৌর এলাকার বিলেরবন্দ, পঙ্গবট ও ছয়লেন প্লাবিত হয়েছে। জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাব্বির আহমদ বলেন, উপজেলায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী চট্টগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনস্থাপিত হয়েছে। ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বিমানের রানওয়ের পানি নেমে যাওয়ায় বিমান চলাচলও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
কক্সবাজারে আরও ৮ জনের মৃত্যু
কক্সবাজরের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও ২৮ জুন আরও ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চকরিয়া, রামু, কক্সবাজার সদর ও টেকনাফে এখনও আড়াই লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে রামুতে ২ জন, চকরিয়ায় ৩ জন ও কক্সবাজার সদরে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে বলা হয়েছে, আটজনের মৃত্যু হয়েছে বন্যার পানিতে ডুবে। জেলার ৭০টি ইউনিয়ন ও ৩টি পৌরসভায় সাম্প্রতিক বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আড়াই লাখ লোক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ জয়নুল বারী। এদিকে কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতি সামান্য উন্নতি হলেও রামুতে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। এখনও লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। আশ্রয় কেন্দে গবাদিপশু ও মানুষ একসঙ্গে অমানবিক জীবনযাপন করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পযর্ন্ত পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। এদিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁওয়ে টানা বর্ষণে ২৬ জুন রাতে বন্যার পানির তোড়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ঈদগাঁওয়ে ব্রিজ ধসে পড়ায় কক্সবাজার-শহরের সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। যার কারণে যাত্রীও পর্যটকসহ দূর-দূরান্তের যাত্রীসাধারণকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
মানিকগঞ্জ এলাকায় ভাঙ্গন
যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাচামারা ও এর পাশ্ববর্তী এলাকায় নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। দুই সপ্তাহে এখানকার দশটি গ্রামের প্রায় ১১‘শ পরিবারের বসতভিটা ও ১০ হাজার একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বসতভিটা, গাছপালা ও ফসলী জমি হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। জানা গেছে, ভাঙনের হুমকীর মধ্যে রয়েছে বাচামারা বাজার, স্কুল, কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ নদী পাড়ের আরো ২০ টি গ্রাম। এসব এলাকায় ভাঙনরোধে ও ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোকে পুনবার্সনে সংশিষ্টরা দ্রুত উদ্যোগী না হওয়ায় নদীর গ্রাসী তৎপরতায় সর্বস্ব হারিয়ে আশ্রয়হীন অসহায় মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে খবরে বলা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষাবাঁধের হার্ডপয়েন্টে ঝুঁকি
আমাদের সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি মামুন জানান, যমুনা নদীতে আকস্মিক পানিবৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষাবাঁধের হার্ডপয়েন্ট ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের ধস নামার আশংকা রয়েছে। এরই মধ্যে হার্ডপয়েন্টের সি এলাকার ২০ মিটার থেকে ৮০ মিটার পর্যন্ত ৬০ মিটার এলাকা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এই স্থানটিতে নদীর গভীরতা প্রতিদিন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ধস রোধের জন্য মাটিভর্তি জিও টেক্স বস্তা এবং সিসি ব্লক ফেলা হলেও সুফল মিলছে না। ভাঙন রোধের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ২৮ জুন সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য পত্র দিয়েছে। এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির ফলে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পরিচালন ও সংরক্ষণ) বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পুরনো জেলখানা পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। পানিবৃদ্ধির এ হার অব্যাহত থাকলে আজ তা বিপদসীমা অতিক্রম করবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।