দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশব্যাপী ক্রিকেটপ্রেমীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা যেনো এক মহা সংকটের মধ্যে ফেলেছে। বাংলাদেশের মানুষ এমনিতেই যথেষ্ট ক্রিকেটপ্রেমী। বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটে বড় স্থান করে নেওয়ার পেছনে রয়েছে এদেশের অগণিত ভক্ত-অনুরাগীদের বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা।
দেশব্যাপী ক্ষোভ প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে ‘বিগ-থ্রি’ ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের আধিপত্যের প্রস্তাব নিয়ে। ক্রিকেট বোদ্ধারাও চরমভাবে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) উপর- দ্বি-স্তরবিশিষ্ট ক্রিকেটের প্রস্তাবের বিপক্ষে জোরালো অবস্থান না নেওয়ায়। ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশ যে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে তা কেনো হারিয়ে যাবে এদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের হৃদয় থেকে এ প্রশ্ন এখন বড় করে দেখা দিয়েছে।
গতকাল শনিবার শাহবাগে হাজারো ক্রিকেটপ্রেমী মানববন্ধন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আইসিসির প্রস্তাবের বিপক্ষে। দেশবাসী এবং সাবেক ক্রিকেটাররা যখন ক্ষুব্ধ, তখন বিসিবির পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস গতকাল স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে যায় এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবে বিসিবি। বিসিবি এই অবস্থান পরিষ্কার হলেও এখনও শঙ্কা কাটেনি দেশের ক্রিকেটের। অধীর অপেক্ষায় থাকতে হবে ২৮ ও ২৯ জানুয়ারির আইসিসির সভা পর্যন্ত। কেননা ওইদিন দুবাইয়েই আনুষ্ঠানিক বৈঠকে চূড়ান্ত হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যত। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ টেস্ট খেলতে পারবে কি না মূলত সেটিই নির্ধারণ হবে। তবে এর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত সংকটের বৃত্তেই ঘুরপাক খেতে হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে।
জানা যায়, আইসিসির প্রস্তাবিত ‘পজেশন পেপার’ অনুযায়ী দুই স্তরে ভাগ করা হবে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোকে। বলা হচ্ছে, র্যাঙ্কিংয়ের ৯ ও ১০ নম্বর দেশকে খেলতে হবে কন্টিনেন্টাল কাপ। কন্টিনেন্টাল কাপের চ্যাম্পিয়ন দল খেলার সুযোগ পাবে ৮ নম্বর দলের বিপক্ষে। ৮ নম্বর দলের বিপক্ষে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে সিরিজে যদি জয় পায়, তবেই টিকে যাবে প্রথম স্তরে। তানাহলে আবারও খেলতে হবে কন্টিনেন্টাল কাপ।
কিভাবে এবং কেনো হবে এমন অবস্থা
বর্তমানে বাংলাদেশের টেস্ট র্যাঙ্কিং ১০, পজিশন পেপার যদি পাস হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে খেলতে হবে কন্টিনেন্টাল কাপ। ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কন্টিনেন্টাল কাপ হবে দুইবার। র্যাঙ্কিংয়ের যে অবস্থান বাংলাদেশের, তাতে অদূর ভবিষ্যতে টেস্ট খেলার সম্ভাবনা কমে যাবে এটা প্রায় নিশ্চিত। এমন একটি মহাসংকটে বন্দি হয়ে যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। এটাই মানতে পারছেন না বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। ৩ দেশের এই আধিপত্য এবং দ্বি-স্তরবিশিষ্ট ক্রিকেটের প্রতিবাদে গতকাল শাহবাগে মানববন্দন করেছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। এমন এক পরিস্থিতিতে ক্রিকেট প্রেমীদের বক্তব্য, ‘গত ১৪ বছর ধরে আমরা টেস্ট খেলছি। এখন সেটা বন্ধ হয়ে যাবে, এটা মানা যায় না। ক্রিকেট বোর্ডকে দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারোর তোয়াজ করা উচিত হবে না।’
আইসিসির ‘পজেশন পেপার’ প্রস্তাব নিয়ে ২৩ জানুয়ারি জরুরি বৈঠক করে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ। সেখানে ২০-৩ ভোটে পরোক্ষ সমর্থন পরে প্রস্তাবটির পক্ষে। অবশ্য বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সমর্থনের বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছুই জানানানি। তিনি শুধু এটুকুই সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন যে, সভার আগে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করে অবস্থান ঠিক করা হবে বাংলাদেশের। সেকারণে সভার আগে দুবাই যাবেন। গতকাল তিনি ও বিসিবির ভারপ্রাপ্ত সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন দুবাই গেছেন।
তবে বিসিবির মিডিয়া চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস জানিয়েছেন বাংলাদেশের অবস্থান, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে যায়, এমন যে কোনো সিদ্ধান্তের বিপক্ষে অবস্থান নিবে এবং বিরোধিতা করবে বাংলাদেশ।’
বাকি বিষয়গুলো নির্ভর করছে ২৮ ও ২৯ জানুয়ারি সভায় কি হয় তার ওপর। অবশ্য এপ্রস্তাবটি পাস করতে প্রয়োজন হবে ভোটাভুটির। ইতোমধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রস্তাবটির বিপক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশসহ এখন পর্যন্ত ৫টি দেশ যদি একদিকে থাকে তাহলে পরিস্থিতি কি হবে তা এখনও পরিষ্কার করে বলা যাচ্ছে না। তবে এরজন্য অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন পথ আপাতত নেই।