দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অভিনব কায়দায় সিনেমা স্টাইলে কিশোরগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৬ কোটি টাকা লুটের ঘটনা ঘটেছে। গোপন সুড়ঙ্গপথে এই টাকা লুটের ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৮ পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
জেলা শহরের রথখলা এলাকায় সোনালী ব্যাংকের ওই শাখার পাশের বাসভবনের একটি কক্ষ থেকে সুড়ঙ্গপথ তৈরি করে ব্যাংকের ভল্টরুমে রাখা এ টাকা লুট করা হয়। পুরো সিনেমা স্টাইলে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে। শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকার পর গতকাল ব্যাংক খোলার পর বেলা আড়াইটার দিকে টাকা লুট হওয়ার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। কারণ ব্যাংকের ভোল্ড সব সময় খোলা হয় না। শুক্র কিংবা শনিবারের কোন একসময় এ ঘটনা ঘটেছে বলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ধারণা করছেন।
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হিসাব করে পান এই ভল্ড থেকে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। শহরের অন্যতম ব্যস্ততম এলাকার প্রধান সড়কের ওপর অবস্থিত ব্যাংকের শাখা থেকে দুঃসাহসিক লুটের ঘটনায় পুরো এলাকায় এক ভীতিকর অবস্থারও সৃষ্টি হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া ও প্রিন্সিপাল অফিসার হাসান আহমেদ মঈন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ভল্টরুমে দু’টি কক্ষ রয়েছে, তবে প্রবেশপথ একটিই। সামনের কক্ষ পেরিয়ে পেছনের কক্ষে যেতে হয়। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ব্যাংক চলাকালে ভল্টরুমে তারা প্রবেশ করেছিলেন। তারা জানান, সে সময় ভল্টের দু’টি কক্ষের মধ্যে পেছনের কক্ষটিতে ৬টি স্টিলের আলমারির বাইরে টেবিলের ওপর উন্মুক্ত অবস্থায় ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রার রাখা ছিল। এরপর নির্ধারিত সাপ্তাহিক ছুটির কারণে শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ ছিল। গতকাল রবিবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসের শুরুতে ভল্ট খুলে দু’টি কক্ষের সামনেরটিতে তারা কাজ করেন। বেলা আড়াইটায় তালাবদ্ধ পেছনের কক্ষটি খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন। সে সময় টেবিলের ওপর রাখা টাকা দেখতে না পেয়ে এবং কক্ষের মেঝেতে গর্ত দেখতে পেয়ে টাকা লুট হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন। দুর্বৃত্তরা স্টিলের আলমারির লক ভাঙারও চেষ্টা করেছিল। বিষয়টি সদর মডেল থানার ওসিকে অবহিত করার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।
জানা যায়, খবর পেয়ে রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও সিআইডি তদন্তে নামে। ভল্টরুমের সুড়ঙ্গপথ ধরে তারা পাশের একটি টিনশেড বাসায় সুড়ঙ্গপথের উৎসমুখ আবিষ্কার করে। ওই সুড়ঙ্গপথের মাধ্যমেই ভল্টরুম থেকে লুট করা টাকা সরানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সুড়ঙ্গপথের বর্ণনা দিতে গিয়ে সদর থানার এসআই শফিকুল ইসলাম জানান, সুড়ঙ্গপথটি খুব কৌশলে তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ১৮ ফুট দীর্ঘ সুড়ঙ্গপথটি যেন ভেঙে না পড়ে সে জন্য সুড়ঙ্গের দু’পাশের পাড়ে বাঁশের খুঁটি দেয়া হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৩ ফুট উঁচু ও ৩ ফুট প্রস্থ সুড়ঙ্গপথ ধরে একজন ব্যক্তি অনায়াসেই চলাচল করতে পারবে।
ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িতদের চিহ্নিত করার জন্য পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কেও গ্রেফতার হয়নি।
ছবি: সমকাল অনলাইনের সৌজন্যে