ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নন্দিত কথাসাহিত্যিক হূমায়ুন আহমেদ বিবিসিকে দেওয়া সর্বশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলায় একটি গোপন কথা লিখতে চেয়েছিলেন। সে কথাটি আসলে কি ছিল? সে কথাটি গোপনই রয়ে গেলো।
নিজের উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মতোই রহস্য রেখে গেলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক, নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ। মৃত্যুর আগে বিবিসিকে দেয়া শেষ সাক্ষাৎকারে তিনি একটি গোপন কথা, একটি লাইন বাংলা লিখতে চেয়েছিলেন। বলেছিলেন- কি লিখবেন তা তার মাথায় আছে। কিন্তু তিনি বলবেন না। সেই গোপন কথাটি গোপনই রয়ে গেল। কেউ কি জানতে পেরেছেন তার মনের গভীরে লুকানো ছিল কি গোপন কথা! তিনি কি লিখে যেতে পেরেছেন তা! মৃত্যুর মধ্য দিয়েও তাই যেন আরেক রহস্যের জন্ম দিয়ে গেলেন কোটি হৃদয়ের ভালবাসায় সিক্ত হুমায়ূন আহমেদ। কয়েক মাস আগে তার ওই সাক্ষাৎকারটি নেন বিবিসি’র অর্চি অতন্দ্রিলা। শুক্রবার রাতে তা পুনঃপ্রচার করে বিবিসি। এতে তিনি মৃত্যু, পাঠকের ভালবাসা, লেখালেখিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আবেগঘন মত তুলে ধরেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- আপনি গত প্রায় চার দশক ধরে লেখালেখি করছেন। এই লেখালেখির শুরুটা কিভাবে হলো?
জবাবে তিনি বলেন- বাংলাদেশের আর দশটা মানুষ যেভাবে লেখালেখি শুরু করে আমিও একইভাবে শুরু করেছি। আলাদা কিছু নাই এর মধ্যে। এরা কিভাবে শুরু করে? প্রথমে একটা স্কুল ম্যাগাজিনে লেখালেখি। তারপর কবিতা লিখে। তারপর পত্রপত্রিকায় পাঠাবার চেষ্টা করে। ওরা যেভাবে করেছে আমিও সেভাবে লিখেছি।
প্রশ্ন: আচ্ছা আপনার পড়াশোনা এবং গবেষণার বিষয় ছিল রসায়ন। সাধারণত মনে করা হয়, এটা সাহিত্যের বিপরীতে। কিন্তু অধ্যাপনা ছেড়ে লেখার আগ্রহটা কিভাবে তৈরি হলো?
হুমায়ূন আহমেদ: সাধারণত মনে করা হয় এটা সাহিত্যের বিপরীতে। আসলে কি তাই? যদি সাহিত্যের পক্ষের, মানে সাহিত্যের স্রোতে যে সাবজেক্টগুলো আছে সেগুলো তাহলে কি- বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য? যদি সেটা হয়ে থাকে তাহলে আমার প্রশ্ন থাকবে- প্রতি বছর হাজার হাজার ছেলেমেয়ে বাংলা অনুষদ থেকে পাস করে বের হচ্ছে। এর মধ্যে কয়জন লেখালেখি করছে? কে কি পড়ছে এটার সঙ্গে লেখালেখির সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না।
প্রশ্ন: সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গে নাটক এবং সিনেমা পরিচালনায় আপনি কিভাবে এলেন?
হুমায়ূন আহমেদ: বলা যায় হঠাৎ করে চলে আসছি। আমি দেখলাম যে আমার কিছু গল্প নিয়ে ওরা, বাংলাদেশ টেলিভিশন নাটক তৈরি করেছে। নাটকগুলো দেখতাম আমি। মনে হতো- আমি নিজে যদি ওটা তৈরি করতে পারতাম। সেটা কি রকম হতো। ওদের চেয়ে ভাল হতো নাকি ওদের চেয়ে মন্দ হতো। ওই আগ্রহ থেকেই মনে হয় আমি নাটক বানানো শুরু করি। আর সিনেমাটা তৈরি করার পিছনে মূল কারণটা হচ্ছে- এত বড় একটা মুক্তিযুদ্ধ হয়ে গিয়েছে আমাদের দেশে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তেমন ভাল ছবি হয়নি। আমার কাছে সব সময় মনে হয়েছে যে, একটা ভাল ছবি হওয়া দরকার। এর থেকেই ‘আগুনের পরশমণি’ ছবিটা বানিয়েছি। এটা যে বিরাট কিছু হয়ে গেছে তা নট নেসেসারি। কিন্তু চেষ্টাটা ছিল আর কি।
প্রশ্ন: শিল্পের কোন মাধ্যম আপনি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন?
হুমায়ূন আহমেদ: লেখালেখিটাই বেশি উপভোগ করি।
প্রশ্ন: আচ্ছা আপনার লেখা অনেক চরিত্র মানুষকে কাঁদিয়েছে, হাসিয়েছে। আপনি নিজে কেঁদেছেন কোন চরিত্রের জন্য?
হুমায়ূন আহমেদ: আমি যখন লেখালেখি করি কোন একটা চরিত্র খুবই ভয়াবহ এবং কষ্টের মধ্যে পড়ে যায়। নিজের অজান্তেই তখন আমার চোখে পানি আসে। কাজেই কোন বিশেষ চরিত্রের জন্য নয়, সব চরিত্রের জন্যই চোখে আমার পানি আসে। আর আমি তো অনেক হিউমার পছন্দ করি। যেমন হিউমারগুলো লিখি তখন আমি সিওর যে, যদি আমার আশপাশে কেউ থাকে তারা দেখবে- আমার ঠোঁটের কোণায় মিষ্টি হাসি। কাজেই সব চরিত্রই আমাকে কোন না কোনভাবে হাসিয়েছে। কোন না কোনভাবে কাঁদিয়েছে।
প্রশ্ন: আপনার নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’তে বাকের ভাইয়ের মৃত্যুটা ঠেকাতে মানুষ যখন প্রতিবাদ শুরু করলো, মানুষের আবেগের দিকে তাকিয়ে একবারও কি বাকের ভাইকে বাঁচিয়ে রাখতে ইচ্ছা হয়েছিল?
হুমায়ূন আহমেদ: ওই নাটকের দুটি ভার্সন ছিল। একটাতে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হয়েছে। আরেকটাতে বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হয়নি। বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হয়নি- এই ভার্সনটি আমার খুব প্রিয় ছিল। কিন্তু বিটিভি শেষ পর্যন্ত ঠিক করলো, যেটাতে ফাঁসি হয়েছে, সেটা প্রচার করার।
প্রশ্ন: কাল্পনিক চরিত্র বাকের ভাইয়ের সঙ্গে মানুষের এমন একাত্মতা- এ নিয়ে আপনি কি ভাবছিলেন?
হুমায়ূন আহমেদ: আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম। কত রকম মানুষের ফাঁসি হয়ে যায়। মানুষ মারা যায়। রাস্তার পাশে নির্দোষকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়। এটা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। অথচ একটা চরিত্র, এটা কাল্পনিক চরিত্র- তার ফাঁসি হচ্ছে, এ নিয়ে মাতামাতিটা আমাকে একেবারে বড় রকমের একটি ধাক্কা দিয়েছিল। এটুকু বলতে পারি। শুধু তাই না। মৃত্যুতেই শেষ হয়ে যায়নি। মৃত্যুর পরে শুরু হলো কুলখানি। আজকে অমুক জায়গায় বাকের ভাইয়ের কুলখানি। কালকে অমুক জায়গায় বাকের ভাইয়ের কুলখানি। পরশু দিন বাকের ভাইয়ের জন্য মিলাদ মাহফিল। আমি এ রকম বিস্ময়কর ঘটনা ভবিষ্যতে দেখবো তা মনে হয় না।
প্রশ্ন: আপনার কোন কাল্পনিক চরিত্র নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হলে- যেমন ‘বহুব্রীহি’ নাটকে কাজের ছেলে সৈয়দ বংশ হওয়া বা একজন ডাক্তারের চরিত্র বোকা ধরনের হওয়া নিয়ে- আপনার পাঠকের রসবোধ সম্পর্কে আপনার কি বিশেষ কিছু মনে হয়?
হুমায়ূন আহমেদ: তখন মনে হয় যে, আমরা জাতি হিসেবে খুব সিরিয়াস। প্রতিটি ঘটনার যে একটা ফানি পার্ট আছে তা আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। আমরা সিরিয়াস পার্টের দিকে তাকাই। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের মানুষ তো খুবই রসিক বলে আমি জানি। ওরা এই রসটা ধরতে পারে না কেন- এ কারণে, আমি খুব আপসেট হই। তবে বেশি পাত্তা দেই না।
প্রশ্ন: আপনার উপন্যাসের একটি জনপ্রিয় চরিত্র হিমু। এটা কি নিছক কাল্পনিক নাকি এর ভিতর আপনি পরিচিত কাউকে তুলে ধরেছেন?
হুমায়ূন আহমেদ: না, হিমুতে আমি পরিচিত কাউকে আসলে তুলে ধরিনি। যে হিমু আমি লিখি, ওই হিমু হওয়া খুবই একটা জটিল ব্যাপার তো বটেই। অনেক মানুষের ইচ্ছাপূরণের ব্যাপার আছে। কিছু করতে চায়। কিন্তু করতে পারে না। মানুষের যে সমস্ত ইচ্ছার বিষয়গুলো আছে এগুলো আমি হিমুর মাধ্যমে ওই ইচ্ছাপূরণটি ঘটাই। যে কারণেই আমার ধারণা পাঠকরা এত পছন্দ করেন। এরা হতে চান। এরা করতে চান। এরা প্রত্যেকেই চান যে আমার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা থাকবে। আমি মানুষের ভূত-ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারবো। এটা সবার মনের ভিতরের গোপন বাসনা। ওদের গোপন বাসনা থাকে- আমি পথেঘাটে হেঁটে বেড়াবো। কেউ আমাকে কিছু বলবে না। আমার কোন চাকরি করতে হবে না। কোন কিছুই করতে হবে না। আমার জীবন চলবে জীবনের মতো। কোন বাড়ির সামনে গিয়ে যদি দাঁড়াই- ওরা আমাকে খাবার দেবে। এই যে গোপন ইচ্ছাগুলো, যেগুলো থাকে ওই ইচ্ছাগুলো আমি পূরণ করি হিমু উপন্যাসে। কাজেই কারও সঙ্গে যে মিল আছে এটা মনে হয় না।
প্রশ্ন: আচ্ছা এই হিমু তো আপনার পাঠকদের কাছে প্রায় অনুকরণীয় একটি চরিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই হিমুকে নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস সম্পর্কে বিশেষ কোন ঘটনা আছে কি, যা আপনাকে নাড়া দিয়েছে?
হুমায়ূন আহমেদ: হ্যাঁ। একটা (ঘটনার কথা) বলা যেতে পারে। আমি হঠাৎ করে রাশিয়ার এম্বেসি থেকে একটা ম্যাগাজিন পেলাম। ওই ম্যাগাজিনে দেখি কি ওদের রাশিয়াতে একটা হিমু ক্লাব আছে। ওই হিমু ক্লাবের ছেলেপেলেরা কিন্তু সব রাশিয়ান। বাঙালি ছেলেপেলে না। এরা একটা অনুষ্ঠান করেছে। সেই অনুষ্ঠানে সব এম্বাসেডরকে ডেকেছে। এম্বাসেডরদের হলুদ পোশাক পরতে হবে। তারা জানে এম্বাসেডররা হলুদ পোশাক পরবেন না। কাজেই ওই ক্লাবের তরফ থেকে প্রতিজন এম্বাসেডরকে একটি করে হলুদ নেক-টাই দেয়া হয়েছে। তারা এই হলুদ নেক-টাই পরে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এটা শুনে বা লেখাতে পড়ে আমি খুবই একটা ধাক্কার মতো খেয়েছিলাম। আরেকবার ধাক্কা খেয়েছি জার্মানিতে। সেখানে ফ্রাংকফুর্ট বইমেলায় গিয়েছিলাম। সেখানে একটা বাসায় একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে। এক ছেলে এসে আমাকে বলল- স্যার, আমি কিন্তু হিমু। সে হলুদ একটি কোট গায়ে দিয়ে এসেছে। আমি বললাম- তুমি হিমু! হিমু’র তো খালি পায়ে থাকার কথা। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা জার্মানিতে। তোমার কি খালি পা। সে বললো- স্যার, দেখেন। তাকিয়ে দেখি তার খালি পা। সেই আরেকবার ধাক্কা খেয়েছিলাম।
প্রশ্ন: বাংলাদেশে সাধারণত দেখা যায়- যারা নতুন লেখালেখি শুরু করেন তাদের বই প্রকাশ করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। আপনি যখন প্রথম উপন্যাস লিখেছিলেন তখন সেটি প্রকাশ করতে আপনার কি ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল?
হুমায়ূন আহমেদ: খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার যে, আমাকে তেমন কোন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় নি। আমার প্রথম উপন্যাসের নাম ‘নন্দিত নরকে’, এটি প্রকাশ করতে খুব একটা সমস্যা হয়েছে বলে আমি মনে করি না। কারণ, আহমেদ ছফা ছিলেন আমাদের দেশের খুবই স্পিরিটেড একজন মানুষ। আমার ওই উপন্যাসটি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। যে কোন কারণেই হোক উপন্যাসটি তার মনে ধরে গিয়েছিল। তিনি জান দিয়ে ফেললেন এটি প্রকাশ করার জন্য। এই উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি নিয়ে তিনি প্রতিটি প্রকাশকের ঘরে ঘরে গেলেন। কিন্তু তখনও আমি ব্যাপারটা জানিই না। শুধু ছফা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়। ছফা ভাই আজকে অমুকের কাছে গিয়েছি। কালকে অমুকের কাছে গিয়েছি- এভাবে বলে বলে তিনি একজন প্রকাশককে মোটামুটি কনভিন্স করে ফেললেন যে, উপন্যাসটি প্রকাশ করতে হবে। কাজেই উপন্যাস প্রকাশিত হয়ে গেল। তো উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার আগে কিন্তু ওই প্রকাশকের সঙ্গে আমার পরিচয়ও হয়নি। লাজুক টাইপের তো, যাই-ই না। লজ্জা লাগতো। যেদিন (উপন্যাস) প্রকাশিত হলো সেদিন গেলাম। গিয়ে কিছু বইপত্র নিয়ে এলাম উনার কাছ থেকে।
প্রশ্ন: আহমেদ সাহিত্যিক হিসেবে গত কয়েক দশক ধরে আপনার জনপ্রিয়তা শীর্ষে। তুমুল জনপ্রিয়তা অনেক সময় বিড়ম্বনার কারণ হয় বলে শোনা যায়। আপনার ক্ষেত্রেও কি তাই হয়?
হুমায়ূন আহমেদ: যে অর্থে বিড়ম্বনার কথা বলা হচ্ছে সেই অর্থে আমি যে বিশেষ বিড়ম্বনার ফাঁদে পড়ি তা না। বইমেলাতে যদি যাই- তখন পাঠকদের হুড়াহুড়িটা দেখে একটু সামান্য ভয় ভয় লাগে। এছাড়া তো আমি নরমালি ঘোরাফেরা করি। আমি দোকানে যাই। বাজারে যাই। বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরি। কোন সমস্যা তো আমি দেখি না।
প্রশ্ন: বইমেলায় সাধারণত…
হুমায়ূন আহমেদ: যেটা হয় সেটা বইমেলাতেই হয়। বাইমেলার বাইরে, ধরো গেলাম বাজার করতে সেখানে দু’একজনকে পাওয়া যায়। তারা আমার সঙ্গে একটা ছবি তুলতে চায়। এটা তো খুবই স্বাভাবিক। এটাকে বিড়ম্বনা ধরার তো কিছুই নাই। তাই না?
প্রশ্ন: আচ্ছা আপনি লেখালেখি থেকে অবসর নেয়ার কথা কখনও কি ভেবেছেন?
হুমায়ূন আহমেদ: যখন খুব লেখালেখির চাপ যায়, যেমন ধরো বইমেলার সামনে বা ঈদ সংখ্যার সামনে। খুবই যখন চাপের ভিতর থাকি তখন দেখা যায় (লেখাটা যখন) শেষ হয় সেদিন মনে হয় এখন থেকে আমি অবসরে। আর লেখালেখি নাই। বাকি সময়টা আরামে থাকবো। সিনেমা দেখবো। গল্পের বই পড়বো। সেদিন মনে হয় এটা। তারপরের দিন মনে হয় না। দ্বিতীয় দিন থেকে আমার মনে হয় আমার যেন কিছুই করার নেই। আমি মারা যাচ্ছি। এক্ষুণি কিছু একটা লেখা শুরু করতে হবে। লেখা শুরু করি। তখন একটা স্বস্তি ফিরে আসে। হ্যাঁ, আমি অবসর নেবো। ঠিক করেছি আমি অবসর নেবো। মৃত্যুর ঘণ্টাখানেক আগে আমি অবসর নেবো। তার আগে নেবো না। আমি চাই মৃত্যুর এক ঘণ্টা বা দু’ঘণ্টা আগেও আমি যেন এক লাইন বাংলা গদ্য লিখে যেতে পারি।
প্রশ্ন: এটা যে মৃত্যুর সময় এটা আপনি কিভাবে বুঝতে পারবেন?
হুমায়ূন আহমেদ: বোঝা যায় তো, বোঝা যায় না! অনেকে তো বলে দেয়। টের পায়- আমি মারা যাচ্ছি। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। শেষ নিঃশ্বাস ফেলার জন্য শারীরিক প্রস্তুতি। মৃত্যু তো শুধু হার্ট বন্ধ হয়ে যায় তা না। প্রতিটি কোষই মারা যায়। সেই প্রতিটি কোষের মৃত্যু একটা ভয়াবহ ব্যাপার। এটা বুঝতে পারার তো কথা।
প্রশ্ন: তো আপনি শেষ পর্যন্ত লেখালেখি চালিয়ে যেতে চান?
হুমায়ূন আহমেদ: আমি পারবো কিনা জানি না। আমার গোপন ইচ্ছা এবং প্রগাঢ় ইচ্ছা হচ্ছে- মৃত্যুর এক-দু’ঘণ্টা আগেও যেন এক লাইন বাংলা গদ্য লিখতে পারি, যেন হা-হুতাশ করে আমি না মরি। এই মরে গেলাম রে। বাঁচাও রে। এই আল্লাহকে ডাকাডাকি করতেছি। এটায় না গিয়ে আমি এক লাইন প্লেন অ্যান্ড সিম্পল, একটা লাস্ট, একটা ওয়ান লাইন আমি লিখতে চাই। এখন তুমি যদি বলো- কি লাইন সেটা? ওটা আমার মাথায় আছে। আমি বলবো না। সৌজন্যে: বিডিনিউজডটকম।