ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জমকালো আলোর ছলকানি আর শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল অলিম্পিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ব্রিটিশ আভিজাত্যে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে এই গ্রহের প্রায় ১০০ কোটি মানুষের মধ্যে। বাংলাদেশ সময় আজ ২৮ জুলাই রাত ২টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়।
আজ রাতে গোটা বিশ্বের দৃষ্টি ছিল ব্রিটেনে। আরও স্পষ্ট করে বললে, লন্ডনে। ২৭ মিলিয়ন পাউন্ডের অলিম্পিক উদ্বোধনী বর্ণে, ঔজ্জ্বল্যে এবং ব্রিটিশ আভিজাত্যে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে এই গ্রহের প্রায় ১০০ কোটি মানুষের। গ্যালারিতে বসা ৮০ হাজার দর্শকের চোখ তখন কপালে ওঠার উপক্রম! ইস্ট লন্ডনের অলিম্পিক পার্কে ২৮ জুলাই রাতে ‘আয়ালস অফ ওয়ান্ডার’কে মূল থিম ধরে ড্যানি বয়েল আলো-ছায়ার এক মায়াবি ধূম্রজাল তৈরি করেন। ড্যানি বয়েল কে, জানেন তো? ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’ সিনেমার অস্কারজয়ী চলচ্চিত্রকার। তারই পরিকল্পনায় পরিবেশিত হল তিন ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বাংলাদেশে এ সময় সেহরীর সময় হওয়ায় অনেকেই উপভোগ করেছেন অলিম্পিকের এই বর্নাঢ্য অনুষ্ঠান। সেহরী শেষ হওয়ার পরও ভোর পর্যন্ত হয়েছে এই অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে বন্ড, বেকহ্যাম, বিটলস তো ছিলই। আরও ছিল শেকসপিয়রের ‘টেমপেস্ট’ নাটকের খণ্ড দৃশ্য। যেটি বয়েল ফুটিয়ে তোলেন লেজার শোয়ের মাধ্যমে। ২৫.৩ টন ওজনের হোয়াইট চ্যাপেল বেল বাজার সঙ্গে সঙ্গে লন্ডন ২০১২ অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বাংলাদেশে তখন মধ্যরাত। ১০ লাখ ওয়াটের পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম গমগম করে ওঠে স্টেডিয়ামজুড়ে। ১০ হাজার শিল্পী, কুশীলব তিন ঘণ্টা অনুষ্ঠানটিকে মাদকতাময় করে রাখেন। সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে মাঠে নামেন ‘বন্ড’। ০০৭ উপস্থিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও। ড্যানিয়েল ক্রেগ এখানেও পর্দার ভূমিকায়।
ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের চারটি দেশ ওয়েলস, স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ড যথাক্রমে গোলাপ, থিসেল, ড্যাফোডিল ও ফ্লাক্স ফুলের প্রতীক নিয়ে অংশ নেয় মার্চপাস্টে। লন্ডন অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী ২০৪ দেশের ১০ হাজারেরও বেশি অ্যাথলেট মার্চপাস্টে ইংরেজি বর্ণমালার ক্রমানুসারে একে একে প্রবেশ করেন স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন সাঁতারু মাহফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে সবুজ উপত্যকা, কৃত্রিম বৃষ্টি এবং ব্রিটেনের শ্যামল গ্রামের চিত্র পরিচালক বয়েল কোন শিল্পীর তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলেন। যেখানে ছিল পশু-প্রাণী। ঘোড়া, গরু, ছাগল, ভেড়া, মোরগ-মুরগি, কাক- বাদ যায়নি কিছুই। শুরুতে ‘ব’-এর কথা বলা হয়েছে। বিটলস খ্যাত পল ম্যাকার্টনির নেপথ্য কণ্ঠ শুনিয়েছেন বয়েল। ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়ার’ ছবির সংগীত পরিচালক এআর রহমানও তার সুরের জাদুর ছোঁয়া দিয়েছেন অনুষ্ঠানকে। সেই সুরে শিল্পীরা নেচেছেন পাঞ্জাবি ভাংড়া নৃত্য। মূলত অ্যাংলো স্যাক্সন জাতির কৃষি জীবন থেকে শিল্প বিপ্লবে উত্তরণ, গ্রাম থেকে নগর সভ্যতার বিকাশ অলিম্পিকের উদ্বোধনীতে তুলে ধরেছেন বয়েল।
অনুষ্ঠানের শেষে জ্বলে ওঠে অলিম্পিক মশাল। আতশবাজির রোশনাইয়ে আলোকিত হয়ে ওঠে লন্ডনের আকাশ। শুরু হল ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’, এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং স্বপ্নপূরণের পালা। স্বপ্নভঙ্গেরও।
জানা গেছে, ৪০ হাজার সেনা ও পুলিশ সদস্য গেমসের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। অংশগ্রহণকারী অ্যাথলেট ও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। লন্ডনের রাজপথে টেমস নদীর ওপর টাওয়ার ব্রিজে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এমআই ফাইভ ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস ২৪ ঘণ্টার জন্য কন্ট্রোল রুম খুলেছে।
এখন বিশ্ববাসী তাকিয়ে বাকি খেলাধুলার দিকে। কোন দেশ শীর্ষ থাকবে সেটিও সময়ই বলে দেবে।