দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ধূমপান মানব দেহের জন্য চরম ক্ষতিকর। এই ধূমপানের বিরুদ্ধে সারাবিশ্বের মানুষ যখন সোচ্চার, তখন সংবাদ মাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, উন্নয়নশীল বিশ্বে তরুণী ধূমপায়ীর হার বাড়ছে! খবরটি সচেতনদের জন্য অবশ্য উদ্বেগজনক।
খবরে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল বিশ্বের প্রতি পাঁচজনের দুইজন ধূমপান করেন এবং সেসব দেশের নারীরা তরুণ বয়সে ধূমপান শুরু করছেন। চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট -এ গবেষণা প্রতিবেদনটি এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। নিউইয়র্কের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্যারি গিওভিনো গবেষক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বেশ কয়েক বছর ধরে সারাবিশ্বে ধূমপানবিরোধী বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও উন্নয়নশীল দেশের মানুষের মধ্যে ধূমপান ছেড়ে দেয়ার হার উল্লেখযোগ্য নয়। গিওভিনো বলেন, বিশ্বের প্রায় ১১০ কোটি মানুষকে ধূমপান-নিয়ন্ত্রণ নীতিগুলোর আওতায় আনা গেছে। উন্নত বিশ্বে নেয়া কিছু ব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে জনসম্মুখে ধূমপান নিষিদ্ধ করা, বিজ্ঞাপনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ আর সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে ধূমপান করা যে কতটা খারাপ সেটা আরও বেশি করে লিখে দেয়া।
এদিকে ধূমপান নিয়ন্ত্রণে সমপ্রতি অস্ট্রেলিয়ার আদালত একটা ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। এর ফলে এখন থেকে অস্ট্রেলিয়ার বাজারে পাওয়া সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে কোনো লোগো ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ কোনো প্যাকেটে কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট রয়েছে সেটা জানা যাবে না।
ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো, ইমপেরিয়াল টোব্যাকো, ফিলিপ মরিস ও জাপান টোব্যাকো অস্ট্রেলীয় সরকারের এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আদালতে লড়েছিল। কিন্তু সফল হতে পারে নি। এ ধরনের আইন ব্রিটেন, নরওয়ে, নিউজিল্যান্ড, ক্যানাডা ও ভারতে করারও পরিকল্পনা করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, যারা ধূমপান করেন তাদের প্রায় অর্ধেকই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার হয়। এছাড়াও বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক হূদরোগেরও ঝুঁকি বাড়ায় ধূমপান। চীনে ধূমপায়ীর সংখ্যা ৩০১ মিলিয়ন। আর ভারতে ২৭৫ মিলিয়ন।
তরুণীদের মধ্যে ধূমপানের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে বলে গবেষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ব্রিটেনে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা ২১ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৬, পোল্যান্ডে ২৫ আর মিশরে ০.৫ শতাংশ বলে গবেষণায় জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেফ্রি কোপলিন আর হংকং এর ‘বিশ্ব ফুসফুস ফাউন্ডেশন-এর জুডিথ ম্যাকে বলছেন, নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে সিগারেটের ওপর কর বসিয়ে প্রতি ৯,১০০ ডলার আয়ের বিপরীতে ধূমপান নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা তৈরিতে ব্যয় করা হচ্ছে মাত্র এক ডলার। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, ধূমপানের কারণে প্রতি বছর গড়ে ৬০ লক্ষ জন মারা যাচ্ছেন। আরও প্রায় ছয় লক্ষ জন মারা যায় যারা ধূমপায়ীদের সংস্পর্শে থাকেন।
ধূমপান নিয়ন্ত্রণে যদি কঠোর ব্যবস্থা না নেয়া যায় তাহলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে নিহতের সংখ্যা ৬০ থেকে বেড়ে ৮০ লক্ষ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। তথ্য: অনলাইন পত্রিকা সূত্রের।