দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মাঝে মাঝে মনে হয় পৃথিবীর ঘূর্ণনই থেমে যেত যদি ভালোবাসার অস্তিত্ব না থাকতো। ভালোবাসা বিশুদ্ধ, ভালোবাসা মিষ্টি, ভালোবাসা ব্যাথা কিংবা ভালোবাসা বিপর্যস্ত। কখনো কখনো ভালোবাসা শত সাধনার বিষয় আবার কখনো কখনো হারানোর শোক। আমরা হৃদয়ের কাব্যিকতা বুঝি, কবিরা এর রহস্য উদ্ঘাটন করার চেস্টা করে তাদের মূল্যবান কাব্যে। সবকিছুর পর সত্যিকার অর্থে ভালোবাসা চিরন্তন। কেন এই বিস্ময়কর বস্তুর প্রতি আমাদের রোমান্স ও কাব্যিকতা?
১. প্রানিজগতের মধ্যেও রয়েছে একগামী সম্পর্ক
মানুষেরা মনে করে তারাই একমাত্র প্রাণী পৃথিবীতে যারা বিশ্বাসযোগ্য প্রজাতি এবং একগামী সম্পর্ক করে থাকে। কিন্তু না মানুষেরাই একমাত্র প্রাণী নয়, প্রাণীজগতে নেকড়ে, রাজহাঁস, উল্লুক, কালো শকুন, গাংচিলের মত প্রাণীরাও সারাজীবন একজন সঙ্গীর সাথেই থাকে।
২. আপনি কাউকে চান কিংবা না চান সিদ্ধান্তটি ৪ মিনিটে নিতে পারেন
আপনি কারো সামনে একটি ভালো অনুভুতি সৃষ্টি করতে পারেন মাত্র চার মিনিটে। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন এটি অনেক বেশি চমৎকারভাবে করা সম্ভব আপনার শারীরিক ভাষা এবং কণ্ঠ দ্বারা যা আপনি অবশ্যই বলতে চাচ্ছেন।
৩. যখন দুইজন যুগল একে অপরের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকায় তখন তাদের হৃদয় স্পন্দন অনেক বেড়ে যায়
একটি অসাধারন গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রেমিকযুগল যারা রোমান্টিক বন্ধনে আবদ্ধ তারা নিজেদের মধ্যে যখন স্থিরদৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকায় তখন তিন মিনিটের জন্য তাদের হৃদয় স্পন্দন বেড়ে যায়।
৪. ভালোবাসায় পতিত হওয়ার মধ্যে কোকেইনের মত নিঊরোলজিক্যাল প্রভাব রয়েছে
ভালোবাসায় পতিত হওয়া অনেকটা কোকেইন গ্রহণ করার মতো, উভয় ক্ষেত্রেই ব্রেইনে একই ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়, শ্রুতি মধুর অনুভূতি তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ভালোবাসায় পতিত হলে একই সময়ে মস্তিস্কের ১২টি স্থানে শ্রুতিমধুর অনুভূতি তৈরি হওয়ার রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়।
৫. আলিঙ্গন প্রাকৃতিক ব্যথানাশকের মতো কাজ করে
অক্সিটোসিন হল প্রেমিকযুগলের আলিঙ্গনের সময় তৈরি হওয়া হরমোন। যখন ভালবাসার মানুষের মধ্যে বন্ধন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় তখন মস্তিস্ক, অভারি এবং টেস্টিকলে এই হরমোনটি উৎপাদিত হয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে অক্সিটোসিন মাথা ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
৬. ভালবাসার মানুষের ছবির দিকে তাকালে কষ্ট উপশম হয়
এটি পরীক্ষিত সত্য যে ভালবাসার মানুষের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকলে ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। যা ভেতরের জমে থাকা কষ্ট কিংবা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে শব্দখেলার মাধ্যমে ব্যথা হতে অন্যমনস্ক করে ব্যথা প্রশমিত করার প্রক্রিয়ায় ভালবাসার মানুষের ছবিটি অনেক বেশি কার্যকর।
৭. একই পর্যায়ের যুগলের শেষ পর্যন্ত থাকার সম্ভাবনা বেশি
অনেক সামাজিক ও মানসিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে মানুষের একটি গঠনশৈলী রয়েছে। বিষয়টি ম্যাচিং হাইপোথিসিস নামে পরিচিত, যেখানে বলা হয়েছে মানুষেরা একে অপরকে পছন্দ করে আকর্ষণীয়তার পাশাপাশি তাদের সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে।
৮. অনুরূপ বৈশিষ্ট্যের দম্পতিদের শেষ পর্যন্ত থাকার সম্ভাবনা কম
গবেষণায় একথা প্রমাণিত এই যে বিপরীত বৈশিষ্ট্যের দম্পতিদের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়। আপাতদৃষ্টিতে দম্পতিদের সব সময় চেষ্টা থাকে নিজেদের মধ্যে একই বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করার। এর ফলে তারা একে অপরকে জানার চেষ্টা করে।
৯. হৃদয়ভাঙ্গার ব্যথা শুধুমাত্র রূপক অর্থে নয়
গবেষণায় দেখা গিয়েছে কিছু ঘটনা যেমন বিচ্ছেদ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, প্রিয়জনের ক্ষতি, প্রিয়জনের সাথে শারীরিক বিচ্ছেদ, প্রিয়জনের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে হৃদয়ভাঙ্গার সাথে সাথে শারীরিক ব্যথা অনুভূত হয়। একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় “ব্রোকেন হার্ট সিনড্রোম”। গভীর মানসিক মর্মপীড়ায় উল্লেখযোগ্য হারে মস্তিস্ক থেকে রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয় যা শারীরিক ব্যথা সৃষ্টি করে।
১০. প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভালবাসার অবশেষ প্রণয়ঘটিত যুগল
যুগলের ভালবাসার শুরুতে তারা একটি রোমান্টিসিজমে থাকে, এই সময় তারা অনুভব করে শ্রুতিমধুরতা, নির্ভরতা, প্রজাপতির মতো উড়ু উড়ু মন। এই স্তরকে মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ভালবাসার শুরু যা শেষ পর্যন্ত প্রণয়ঘটিত যুগলে পরিণত করে।
১১. যারা প্রেম করে তাদের সাথে ওসিডি আক্রান্ত ব্যক্তির রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যের মিল রয়েছে
প্রাথমিক স্তরের ভালবাসা অনেকটা সেরোটোনিন ওষুধ গ্রহন করার মতো, যা মনের ভেতর সুখকর এবং মঙ্গলজনক অনুভুতির সৃষ্টি করে। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম অত্যধিক নেশাগ্রস্ততার জন্য সৃষ্ট মানসিক বিশৃঙ্খলা। এর ফলে ব্যক্তি তার নিজের চরিত্রের বাইরে অন্যরকম আচরণ করে থাকে।
১২. ভালবাসা ও সেক্স সৃজনশীলতাকে প্রভাবিত করে এবং জোরালো চিন্তা করতে ভূমিকা রাখে
প্রেম-ভালবাসা সৃজনশীল বিমূর্ত চিন্তা-ভাবনাকে প্রভাবিত করে। এর ফলে সৃষ্টি হয় দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক, প্রিয়জনের প্রতি নিষ্ঠা, প্রতিশ্রুতি এবং সর্বোপরি অন্তরঙ্গতা। এটা মনে রাখা ভালো যে, সেক্স জোরালো চিন্তা-ভাবনা, ক্ষণিকের মধ্যে লক্ষ্য স্থির করাতে সাহায্য করে।
১৩. কাছে থাকা, পরিচর্যা এবং অন্তরঙ্গতা ভালবাসার গভীরতা বাড়ায়
ভালবাসার ত্রিভুজ তত্ত্বের মাধ্যমে জানা যায় বিভিন্ন ধরনের ভালবাসার উপকরণের বিভিন্নতা। দুটি ভিন্ন ধরনের উপকরণের মাধ্যমে তৈরি হয় তিন রকমের ভালবাসা, রোমান্টিক প্রেম= আবেগ+অন্তরঙ্গতা
সহচরী প্রেম= অন্তরঙ্গতা+প্রতিশ্রুতি
উদ্দেশ্যহীন প্রেম=আবেগ+প্রতিশ্রুতি
একথা সত্য যে সবচেয়ে দৃঢ় ও সত্য ভালবাসায় উপাদানগুলোর সবই নিহিত থাকবে।
১৪. আকর্ষণীয় দেহের চেয়ে আকর্ষণীয় চেহারা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভালো ভূমিকা রাখে
বিজ্ঞাপনের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, দেহ সৌষ্ঠব নিমিষেই কাউকে কাছে টানে কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো যদি তা দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
১৫. প্রিয়জনের হাত ধরে রাখলে ব্যথা ও মানসিক চাপ প্রশমিত হয়
গবেষণায় দেখা গিয়েছে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের গভীরতায় দৃঢ় বন্ধনের জন্য একথা সত্য যে মানসিক চাপের মাঝে প্রিয়জনের হাত ধরে রাখলে সেটি প্রশমিত করে।
১৭. মনের ভেতর থাকা প্রজাপতিরা সত্য আর তারা বাস্তবিকই অ্যাড্রেনালিন তৈরি করে
কেউ যখন ভালবাসায় পতিত হয় তখন তার মনের প্রজাপতিকে পরিহার করতে পারে না। সেই প্রজাপতিরা মনের ভিতর উড়াউড়ি করে, নাচে-গায়, খেলা করে। চিকিৎসকরা বলেন এর কারণ অ্যাড্রেনালিন হরমোন।
১৮. পলকহীন চোখের দৃষ্টি আপনাকে অন্যের নিকট আকর্ষণীয় করতে পারে
১৮৭০ সালে ডারউইন দেখিয়েছিলেন চোখের পাতার বিস্তৃতির মাধ্যমে মানুষ কোন কিছুর প্রতি মনোযোগিতা প্রদর্শন করে। ভালবাসার ক্ষেত্রেও কাছে আসার অন্যতম শর্ত কারো প্রতি মনোযোগিতা প্রদর্শন করা।
দৃষ্টির বিনিময়ে ভালোবাসার সৃষ্টি হতে পারে, কবিরা বলে থাকেন চোখ হল হৃদয়ের আয়না। তাইতো চোখ মনের কথা বলে। বস্তুতপক্ষে একথা সত্য যে স্থির দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে তাকালে তা মনের ভেতর দোলা দেয় এভাবেই ভালবাসার সৃষ্টি হয়। চিকিৎসকরা বলেন এই সময় শরীরে ফিনাইলেথামিন উৎপাদিত হয়। প্রেম সত্যি এক অনন্য বিষয় হার্ভাড গবেষকদের দীর্ঘ ৭৫ বছরের গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রেম, ভালবাসা সত্যি একটি অন্যরকম বিষয় এবং অনুভূতি।
তথ্যসূত্রঃ বোরপান্ডা