ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রবাসী বাবার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য কৌশলে বাড়ি থেকে অপহরণ করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পথে ধরা পড়ার ভয়ে লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলে দিলেও অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে গেল ৮ বছর বয়সী শিশু রাকিব হোসেন।
জানা যায়, গভীর রাতে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুরের বোরোরচর এলাকার মেঘনা নদী থেকে অচেতন অবস্থায় জাহাঙ্গীর নামে এক জেলে তাকে উদ্ধার করলে প্রাণে বেঁচে যায় সে। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে শিশু রাকিব তার মায়ের মোবাইল ফোন নাম্বার ও বাড়ির ঠিকানা বলতে পারায় ১ সেপ্টেম্বর রাতে তার বাড়ি ফরিদগঞ্জের ঘোড়াশালা গ্রামে ফিরে আসে। আগের দিন ৩১ আগস্ট শুক্রবার রাতে চাঁদপুর-ঢাকা রুটের লঞ্চ এমভি মিতালীযোগে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পথে শিশু রাকিবের চাচা সম্পর্কের জাফর হোসেন এ ঘটনা ঘটায়। এদিকে অপহরণকারী ও মুক্তিপণ আদায়ে ব্যর্থ জাফর ১ সেপ্টেম্বর বিকালে বাড়ি ফিরে এলে সন্দেহবশত স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ লোকজন তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে ঘটনার কথা স্বীকার করলে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয় তাকে। এ ব্যাপারে শিশুটির চাচা আলী হোসেন বাদী হয়ে ১ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ অপহরণকারী জাফর হোসেনকে আটক করে ২ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে সে ঘটনা স্বীকার করে।
অপহরণকারী জাফর হোসেন পুলিশকে জানায়, উপজেলার রূপসা উত্তর ইউনিয়নের ঘোড়াশালা গ্রামের প্রবাসী আবুল হাসেমের শিশুপুত্র রাকিব হোসেনকে ৩১ আগস্ট সন্ধ্যায় সে কৌশলে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা-চাঁদপুর রুটের লঞ্চ এমভি মিতালীযোগে ঢাকা নেয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাত গভীর হলে শিশু রাকিব তার মায়ের কাছে যাবে বলে বায়না ধরে চিৎকার শুরু করে। অবস্থা বেগতিক দেখে জাফর ধরা পড়ার ভয়ে রাকিবকে লঞ্চের পেছনে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়। এদিকে ৩১ আগস্ট সন্ধ্যার পর থেকে রাকিবের পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজে না পেয়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে তল্লাশি ছাড়াও এলাকায় মাইকিং করে। এদিকে রাত গভীর হলে রাকিবের সঙ্গে একই বাড়ির বখাটে টাইপের জাফর নিরুদ্দেশ থাকায় লোকজন তার ব্যাপারে সন্দেহ করতে থাকে। ১ সেপ্টেম্বর বিকালে সে বাড়ি ফিরে এলে রাকিবের পরিবারের লোকজন তাকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়ার কাছে নিয়ে যায়। ইউপি চেয়ারম্যান তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জাফর রাকিবকে অপহরণ ও নদীতে ফেলে দেয়ার কথা স্বীকার করে। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। অন্যদিকে মেঘনা নদীতে ফেলে দেয়ার পর রাতে চাঁই দিয়ে মাছ ধরা জেলে জাহাঙ্গীর রাকিবকে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুরের বোরোচর এলাকার নদীর কিনারা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। উদ্ধারকারী জাহাঙ্গীর জানায়, সে রাত প্রায় ৪টার দিকে চাঁই দিয়ে মাছ ধরার সময় শিশুটিকে ভাসতে দেখে। পরে তাকে নদী থেকে উঠিয়ে কাঁধে করে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে তার বাড়িতে দ্রুত নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়। সকালে শিশুটির জ্ঞান ফিরলে তার নাম-ঠিকানা জানতে পেরে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে পরিবারের লোকজন তাকে মতলবের মোহনপুর থেকে ১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাড়িতে ও পরে থানায় নিয়ে আসে। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া জানান, জাফরকে তার কাছে নিয়ে এলে অপরাধ স্বীকার করলে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে তিনি কৌশলে অপহরণ ও নদীতে ফেলে দেয়ার তথ্য উদ্ঘাটন করেন। পরে তাকে তিনি পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) জাবেদুল ইসলাম জানান, পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জাফর মুুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে অপহরণ করে এবং নদীতে ফেলে দেয় বলে স্বীকার করে। এদিকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা রাকিবকে পেয়ে তার এলাকায় আনন্দ ও কান্নার রোল পড়ে। এলাকাবাসী এ ঘটনার মূল হোতা জাফরের শাস্তি দাবি করে।