দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মারাত্মক কোনো সাপ কামড়ালে তাৎক্ষণাত চিকিৎসা না করালে মানুষ মরে যায়। সে কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সেই বিষাক্ত সাপের বিষ থেকে এবার হার্ট অ্যাটাকের নতুন ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। এই সাপের বিষ থেকেই হার্টের চিকিৎসা হবে বলে গবেষকরা জানিয়েছেন।
সমগ্র বিশ্বে জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় হার্ট অ্যাটাক ও ষ্ট্রোক হয়ে। হার্টের প্রচলিত ওষুধে রয়েছে আবার ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। চিকিৎসক ও গবেষকরা এখন নতুন ওষুধ তৈরির ব্যাপারে মাথা ঘামাচ্ছেন। হার্ট অ্যাটাক বা ষ্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ হল থ্রম্বোসিস বা রক্তের জমাটবাঁধা। যেসব ওষুধ দিয়ে রক্তের জমাটবাঁধা দূর করা বা প্রতিহত করা যায়, সেগুলোতে রয়েছে আবার অনেক ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। ফ্রাঙ্কফুর্টের জীব রসায়নবিদ ইয়োহানেস এব্লে বিকল্প কোনো উপাদান খোঁজ করছিলেন অনেক দিন থেকে। অবশেষে সাপের বিষে পেলেন তার সন্ধান। পূর্ব অষ্ট্রেলিয়ার গাছগুলোতে আস্তানা গাড়তে ভালোবাসে বিষাক্ত ডোরাকাটা সাপেরা। গায়ের রঙ কালো, আঁশওয়ালা চামড়া। এই সাপের মারাত্মক বিষ যে কী করতে পারে, সেই অভিজ্ঞতা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার এক সাপ গবেষক ব্রায়ান গ্রিগ ফ্রাইয়ের।
তিনি জানান, ‘এই সাপ দংশন করার পর আমি পাঁচ মিনিটের তো অজ্ঞান হয়ে ছিলাম। যখন জ্ঞান ফিরল, তখন আমার সারা দেহেই বিষের ঝড় বয়ে গেছে। এজন্য যে ওষুধ দেয়া হয়েছিল, সেটা কাজে লাগতে ১৮ ঘণ্টা লেগে যায়। সে পর্যন্ত দংশনের জায়গাগুলো থেকে অনবরত ফোঁটা ফোঁটা রক্ত পড়তে থাকে।
সাপের বিষের প্রতিক্রিয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে আঘাতটা সারতে পারেনি। এই খবরটা পেয়ে টনক নড়ে ওঠে ফ্রাঙ্কফুর্টের জীব রসায়নবিদ ইয়োহানেস এব্লের। হয়তো বা সাপের বিষেই পাওয়া যাবে রক্তের জমাটবাঁধা প্রতিহত করার নতুন ওষুধ। সাপের বিষে রয়েছে নানা ধরনের হাজার হাজার লিকিউল বা অণু। সবগুলোই বিষাক্ত নয়। অনেকগুলো আবার অন্য উপাদানের সংস্পর্শে এসে বিষাক্ত হয়। ইয়োহানেস এব্লে জানান, সাপের বিষে শুধু যে রক্ত জমাটবাঁধা প্রতিহত করার উপাদান রয়েছে তা-ই নয়, কিছু কিছু উপাদান আবার জমাট বাঁধতেও সাহায্য করে। অর্থাৎ এক ধরনের উপাদানের কারণে শিরায় রক্ত যেমন জমাট বেঁধে যায়, অন্য উপাদানের কারণে আবার দেহের কোষে রক্ত প্রবাহিত হয়। ফলে রক্তের ঘনত্ব দারুণ কমে যায়, যা অত্যন্ত মারাত্মক। এ উপাদানগুলোই কাজে লাগাতে চান বিজ্ঞানী এব্লে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কার্যকর ও সামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু তৈরি করতে প্রকৃতির লাখ লাখ বছর লেগেছে। তার মানে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে কম রাখার জন্য আমাদের প্রকৃতি থেকে শিখতে হবে। যার অভাব রয়েছে প্রচলিত ওষুধপত্রে। রক্তের জমাটবাঁধা প্রতিহত করার উপাদান খোঁজা বেশ সময় সাপেক্ষ। প্রথমে রক্ত জমাট বাঁধায় যে অণুগুলো কাজ করে সেগুলোকে খুঁজে বের করতে হবে। শরীরের আঘাতের জায়গা থেকে রক্ত পড়তে থাকলে, সেখানে এক ধরনের প্রোটিন বা কোলাজেন তৈরি হয়। রক্তের পস্নাটিলেট নতুন আকৃতি নেয় এবং তৈরি করে এক ধরনের জাল। এই জালই আঘাত থেকে রক্তপাত বন্ধ করে।
সাপের বিষে একধরনের উপাদান থাকে, যা রক্তের কোলাজেন তৈরিতে বাধা দেয়। ফলে রক্ত জমাট বাঁধতে না পেরে অনবরত পড়তে থাকে। এখন প্রশ্ন এই যে, সাপের বিষে হাজার হাজার অণুর ধ্যে যেটি রক্তের জমাটবাঁধা প্রতিহত করে, সেটিকে খুঁজে বের করা যায় কীভাবে এজন্য বিজ্ঞানী এব্লে ও তার সহকর্মীরা নতুন ধরনের এক পদ্ধতি বের করেছেন। প্রথমে রাসায়নিক পদ্ধতিতে কৃত্রিম কোলাজেন-রিসেপ্টর তৈরি করেন তারা। তারপর এটিকে সাপের বিষের সংস্পর্শে এনে রক্তজমাট প্রতিরোধী উপাদানটি খুঁজতে শুরু করেন। পদ্ধতিটি খুব সহজ বলেই েেন করেন জীব রসায়নবিদ ইয়োহানেস এব্লে। তার ভাষায়, অনেকটা মাছ ধরার তে। মাছ ধরতে হলে যেমন সঠিক টোপটি ফেলতে হয় তেমনই। কৃত্রিম রিসেপ্টরের কাছে সাপের বিষের কিছু অণু জমা হতে থাকলে গবেষণার দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়।
গণিত বিজ্ঞানীরা খুঁজে পাওয়া অণুগুলোর চালচিত্র হুবহু অনুকরণ করে কম্পিউটারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। রাসায়নিক বিজ্ঞানীরা এই অণুগুলো কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা যায় কিনা, সে ব্যাপারে অনুসন্ধান চালান। এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি নতুন ওষুধ বাজারে আসার আগে আরো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে জীবরসায়নবিদ এব্লে ও তার সহকর্মীদের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সাপের বিষে ধন্বন্তরী উপাদানগুলো খুঁজে বের করা সম্ভব হয়েছে।