দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দুবাই অনেক বছর যাবৎ বিশ্বের সবচেয়ে বড়, দীর্ঘতম এবং সবচেয়ে দামী বিল্ডিঙের দাবিদার ছিল। খুব শীঘ্রই দুবাইকে তার প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরবের সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে কারণ সৌদি আরবে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উচু বিল্ডিং।
দুবাইের আইকন ছিল বুর্জ আল খলিফা। বিশ্বের সবচেয়ে উচু দালান। যা ইতোমধ্যে গিনেস বুক অব রেকর্ডসে জায়গা করে নিয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সৌদি আরব সেই রেকর্ডে ভাগ বসাতে চাচ্ছে। সৌদি আরব জেদ্দা শহরে নির্মাণ করতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে উচু ভবন কিংডম টাওয়ার। গত সপ্তাহ থেকে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এর নির্মাণ পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাডভান্সড কন্সট্রাকশন টেকনোলজি কোম্পানী বলেন এর উচ্চতা হবে ৩২৮০ ফুট বা এক কিলোমিটার। যেখানে থাকবে প্রায় ২০০ তলা। বুর্জ আল খলিফার উচ্চতা হলো ২৭১৬ ফুট বা ৮২৭ মিটার। কিংডম টাওয়ার নির্মাণে ব্যয় হবে আনুমানিক ১.২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর সবচেয়ে উচু তলা থেকে লোহিত সাগর দেখা যাবে। এই কিংডম টাওয়ারটি নির্মাণে প্রায় ৫.৭ মিলিয়ন বর্গাকৃতি কনক্রিটের প্লেট লাগবে। এছাড়া আরো লাগবে প্রায় ৮০০০০ টন স্টিল। সৌদি গেজেটের তথ্য অনুযায়ী এর নির্মাণ ব্যয় থেকে শুরু করে স্থাপত্য উপকরণ প্রায় সকল কিছুর ক্ষেত্রেই তা বুর্জ আল খলিফাকে ছেড়ে যাবে।
এই দালানটির কাঠামোগতভাবে লম্বা হবে ফলে এর ভিত্তি হতে হবে অনেক জোরালো। উপকূলবর্তী এলাকায় কাঠামোগতভাবে লম্বা হওয়ার কারণে সামুদ্রিক লোনা পানির প্রভাবে এর ভিত্তি নস্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এর ভিত্তি কিংবা ফাউন্ডেশন তৈরি করা হচ্ছে ভূপৃষ্ঠের ২০০ ফুট বা ৬০ মিটার গভীর থেকে। যার ফলে সামুদ্রিক লোনা পানির প্রভাব এর মধ্যে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না। যার ফলশ্রুতিতে অ্যাডভান্সড কন্সট্রাকশন টেকনোলজি কোম্পানী কনক্রিটের বিভিন্ন মাত্রা দিয়ে কিংডম টাওয়ারের স্থায়িত্ব পরীক্ষা করছে। বায়ু প্রবাহ উচু দালানের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। বায়ু প্রবাহের ফলে যে চাপের সৃষ্টি হয় তা উচু দালানগুলোর ক্ষেত্রে এর অবস্থানকে বিচ্যুতি ঘটাতে পারে ফলে এর কাঠামোগত দিকে নজর দিয়ে এই ধরনের উচু দালান নির্মাণ করতে হয়। উপরের দিকের গঠনাকৃতি বায়ু প্রবাহ বান্ধব হতে হয় অর্থাৎ বায়ু প্রবাহ যেন এর মধ্যে বাধাগ্রস্ত না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। তাই কিংডম টাওয়ারের উপরের দিকে কাঠামোগত দিকে কিছুটা বৈচিত্র্য আনতে হয়েছে। উপরের দিকে প্রতিটি ফ্লোরের কাঠামো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন বায়ুচাপটি দালানের উপর প্রতিফলিত না হয়ে তার পাশ দিয়ে চলে যায়। কতগুলো সলিড ব্লকের মাধ্যমে এই গঠনের বৈচিত্র্য আনয়ন করা হয়েছে।
গর্ডন গিল হলেন অ্যাড্রিয়ান স্মিথ এবং গর্ডন গিল আর্কিটেকচার কোম্পানীর প্রধান ডিজাইনার। তারা এই কিংডম টাওয়ারের ডিজাইন করেছেন। গর্ডন গিল বলেন, “কিংডম টাওয়ারটি নির্মাণের ক্ষেত্রে তাদেরকে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়েছে। প্রথমত সৌদিআরবের যে স্থানে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে সেই স্থানটি লোহিত সাগর থেকে বেশি দূরে নয় ফলে ওই সাথে লোনা পানির একটি প্রভাব রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদেরকে এর ভিত্তি নির্মাণের দিকে নজর দিতে হয়েছে। কেননা একটি বড় কাঠামো দুর্বল ভিত্তির উপর দাড়াতে পারে না। তারপর আসছে উচু দালান নির্মাণের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা বায়ু চাপ।”
কনক্রিটের সরবরাহ উচু স্থানে বজায় রাখা সহজ কাজ নয়। তাই বুর্জ আল খলিফা নির্মাণের ক্ষেত্রে যে কৌশলটি ব্যবহার করা হয়েছিল তা এখানেও প্রয়োগ করা হয়। রাতের বেলা তাপমাত্রা কম থাকায় এই সময় ৬ মিলিয়ন কিউবিক ফিটের এক একটি কনক্রিট প্লেট উপরে তোলা হয়। কিংডম টাওয়ারের মাধ্যমে প্রকৌশলীরা আমাদের আরো উচু দালান নির্মাণের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন।
তথ্যসূত্রঃ সিএনএন