দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। বিশ্বের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিশেষ তালিকায় রয়েছে আমাদের কক্সবাজার। কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানাভাবে। নিরাপত্তা নিয়েই মূলত এই প্রশ্ন। নিরাপত্তা প্রশ্নে এখানকার সমুদ্র ভ্রমণ নিয়ে পর্যটকদের নানা দ্বিধা কাজ করছে।
কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন এলাকায় পর্যকটকরা আসেন বছরের প্রায় সব সময়। কক্সবাজারের সমুদ্র বিলাস আর শৈবাল দ্বীপ হিসেবে সেন্টমার্টিনের খ্যাতি বিশ্ব জোড়া। দেশী-বিদেশী পর্যটকে পরিপূর্ণ তাকে এই এলাকা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কিছু দুর্ঘটনা পর্যকটকদের বেশ ভাবিয়ে তুলেছে।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র বন্দর কক্সবাজার ও খ্যাতিসম্পন্ন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন কেনো আজ এতোটা অবহেলিত সে প্রশ্ন দেশের মানুষের মধ্যে উঠেছে। অন্তত বার বার দুর্ঘটনার বিষয়গুলো উঠে আসছে। সর্বশেষ গত ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন সেন্টমার্টিনে বেড়াতে গিয়ে ডুবে মারা যান চার ছাত্র। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন দু’জন। এ ঘটনায় সেন্টমার্টিনের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেই নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, এখানে যদি এমন কোন জায়গা থেকে থাকে যেগুলো পর্যটকদের জন্য নিরাপদ নাই তাহলে সেগুলো চিহ্নিত করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন তা কেনো এতোদিন করেননি।
তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ বছরে কক্সবাজারের সাগরে ডুবে অন্তত ৮৫ জন মারা গেছে। অপরদিকে সেন্টমার্টিনে ১৪ জন পর্যটক মারা গেছে। কক্সবাজারের ১২০ কিলোমিটার সমুদ্রসৈকতের ১১১ কিলোমিটার এখনো সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে অরক্ষিত। এই অরক্ষিত সমুদ্র সৈকতে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায় তার দায়িত্ব কে নেবেন? এ প্রশ্ন দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ১৯৯২ সালে প্রথম পর্যটন নীতিমালার অংশ হিসেবে বিশেষ করে কক্সবাজারের জন্য মহাপরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলা হয়। এর ঠিক ১৮ বছর পর তৈরি জাতীয় পর্যটন নীতিমালা, ২০১০-এ বলা হয়েছে, পৃথিবীর দীর্ঘতম নিরবচ্ছিন্ন সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন এবং সোনা দ্বীপকে কেন্দ্র করে আদর্শ অবকাশ পর্যটন গন্তব্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
গতবছর প্রকাশিত পর্যটন সক্ষমতা সূচক বা ট্রাভেল এ্যান্ড ট্যুরিজম কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্স অনুযায়ী, ১৪০টি দেশের ভেতরে বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে ১২৩ নম্বরে। অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, স্বাস্থ্যসেবাসহ এমন ১৪টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় এনে এই তালিকা তৈরি করেছে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম।
কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। ওইসব পরিকল্পনা এবং নীতিমালা তো কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি বাস্তবে কোনো কিছুই দেখা যায় না। একের পর এক দুর্ঘটনা বরং পর্যটনের এমন একটি স্থানকে ক্রমেই বিতর্কিত ও অগ্রহণযোগ্য স্থান করে তুলছে। এখন দেশী-বিদেশী পর্যটকরাও নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবছেন।
এমন এক পরিস্থিতিতে সরকার ও বেসরকারি সংস্থা সমূহকে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনসহ বাংলাদেশের সকল পর্যটন এলাকার নিরাপত্তা ও নানা সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো লাল পতাকা দিয়ে চিহ্নিত এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নইলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত অরক্ষিত অবস্থায় এক সময জনমানবশূন্য স্থান হিসেবে পরিণত হবে- সেটি কারই কাম্য নয়।