দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সৌদি আরবের প্রিন্স অস্তিত্বের হুমকির মুখে এই ধরনের প্রায় ২০০০ পাখি শিকার করেছেন। তাদের কিছু কিছু রয়েছে একেবারে ধ্বংসের কিনারায়। পাকিস্তানের একটি সাফারি পার্কে এই শিকারের ঘটনাটি ঘটে।
প্রিন্স ফাহাদ বিন সুলতান আবদুল আজিজ আল সৌদ প্রায় ১৯৭৭টি পাখি শিকার করেন। যাদের অনেকগুলোই আন্তর্জাতিক প্রানী সংরক্ষণ আইন অনুসারে শিকার করা নিষিদ্ধ। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বিলুপ্ত প্রানী প্রজাতি সংরক্ষণ সম্মেলনের নীতি অনুসারে এদের মধ্যে অনেক পাখিকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেই এই আন্তর্জাতিক আইনকে লঙ্ঘন করে পাখি শিকার করলেন সৌদি প্রিন্স। পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ডন এর বরাত দিয়ে জানা যায় যে বাকী আরো ১২৩টি বন্য প্রাণী শিকার করেছেন সৌদি প্রিন্সের স্থানীয় প্রতিনিধি। যার ফলশ্রুতিতে এই শিকার পরিক্রমায় মারা যায় মোট ২১০০ প্রাণী। প্রতিবছর পরিযায়ী পাখিদের একটা অংশ মধ্য এশিয়া থেকে দেশান্তরিত হয়ে পাকিস্তানের মরুভূমিতে আসে। তখন পাকিস্তানের বিত্তশালীদের একটা অংশ এবং আরব রাজকীয় পরিবারের সদস্যরা পাকিস্তানের এই মরুভূমি অঞ্চলে ভ্রমণ করেন পাখি শিকারের উদ্দেশ্যে। পাকিস্তানে তখন শুরু হয় চোরাশিকারের সময়। পাখির মাংস অনেক দামী এবং আরব্য রাজকীয়দের কাছে এটি একটি সুস্বাদু রাজকীয় খাবার। তাছাড়াও আরব্য রাজকীয়রা মনে করেন এর অনেক ভেষজ গুণ রয়েছে এবং পাখির মাংস খেলে তারুণ্য-যৌবন বৃদ্ধি পায়।
এই বছর বার্ষিক এই শিকারপর্ব শুরু হয় ফেব্রুয়ারীর শেষের দিকে, পাকিস্তানের লাহোরের হাইকোর্ট বছরের এই সময়ে পাখি শিকারকে নিষিদ্ধ করেছেন। কিন্তু তারপরও এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পাখি শিকার চলছে। তাছাড়াও পাকিস্তানী আইন অনুসারে অস্তিত্বের হুমকির সম্মুখীন পাখি শিকার আইনত দণ্ডনীয়। ভারতেও এই আইন অনুসারে বিলুপ্ত প্রাণীদের শিকারকে নিষিদ্ধ করে আইন কার্যকর করা হয়েছে। ভারত এই আইনে বেশ কঠোরতা প্রদর্শনের ফলে বন্যপ্রাণী শিকার অনেকাংশে কমে এসেছে। তাছাড়াও বন্য হরিণ শিকারের জন্য গতবছর বলিউড সুপারস্টার সালমান খানকে গুনতে হয় বড় অঙ্কের জরিমানা। কিন্তু মজার বিষয় হলো প্রতিবছর ভারত সরকার আরব সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের তাদের দেশে প্রাণী শিকারের অনুমতি দিয়ে থাকে। এই শিকারের অনুমতিটি দেওয়া হয় একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে ১০০ বন্যপ্রাণী শিকারের ক্ষেত্রে। সে যাই হোক সৌদি প্রিন্সের বিরুদ্ধে সংরক্ষিত এলাকায় বন্য প্রাণী শিকারের কারণে রিপোর্ট করা হয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আনা হয়েছে যে তিনি ১০০টির উপরে প্রাণী শিকার করেছেন পাকিস্তানের একটি সাফারি পার্কে।
অভিযোগ পত্রে তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের শাস্তির কথা বলা হয়নি। প্রাণী সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞরা বলেন এভাবে অবাধে পাখি শিকার করলে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে তাদের অনেক প্রজাতিকেই পৃথিবীতে খুজে পাওয়া যাবে না। বিখ্যাত গার্ডিয়ান পত্রিকার বন্যপ্রাণী বিভাগের কলামিস্ট বলেন, “স্থানীয় লোকের উপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রাণী সংরক্ষণ আইন বেশ জোরালোভাবেই কার্যকর রয়েছে। কিন্তু চোরাশিকারীদের ক্ষেত্রে নিয়মিত নজরদারির অভাবে এটি সঠিক সময়ে প্রয়োগ করা হয়ে উঠে না। তার উপর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক বিবেচনায় অবাধে পাখি শিকার করতে দেওয়ায় কিছু কিছু প্রজাতি আজ হারিয়ে গিয়েছে। যদিও সেই সকল সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের শিকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সীমারেখা দিয়ে দেওয়া হয় কিন্তু প্রায়শ তারা সেই সীমারেখা না মেনে শিকার করে থাকেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব তাসনিম আসলাম বলেন, “যুগ যুগ ধরেই আরব এই সকল সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা পাকিস্তানে আসছেন পাখি শিকারের জন্য এটি একটি ঐতিহ্যের মতো দাড়িয়ে গিয়েছে”। তিনি আরো বলেন, “দশ বছর আগেও এই বিষয়টি নিয়ে তেমন জনসচেতনতা ছিল না কিন্তু এখন আমরা দেখি অনেকেই এর প্রতিবাদ করে”।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ইউনিয়ন মতে বর্তমান পৃথিবীতে পাখির সংখ্যা প্রায় ১১০০০০ কিন্তু প্রতিবছর প্রায় ২০ শতাংশ হারে তা কমে আসছে শুধুমাত্র এই শিকারের কারণে। এর বিপরীতে এখনি জনসচেতনতা না বাড়ালে অনেক প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
তথ্যসূত্রঃ হাফিংটনপোস্ট