ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিবিসিখ্যাত সাংবাদিক আতাউস সামাদ আর নেই। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির জটিলতায় ভুগে বুধবার ২৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
গত শতকের ৫০ এর দশকে সচিত্র সন্ধানীতে লেখালেখির মাধ্যমে সংবাদ মাধ্যম জগতে পা রাখা আতাউস সামাদ কর্মজীবনে বিভিন্ন সংবাদপত্র, রেডিও ও টেলিভিশনে কাজ করেছেন। সর্বশেষ দৈনিক আমার দেশের উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন একুশে পদক পাওয়া এই সাংবাদিক। তার সহকর্মীরা অবশ্য ‘৮০ এর দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় বিবিসিতে তার কাজ করার সময়টাকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।
নব্বই-এর সেই উত্তাল দিনে বন্তুনিষ্ঠ সংবাদ পেতে দেশবাসী বিবিসিতে আতাউস সামাদের কণ্ঠ শোনার অপেক্ষায় থাকত এদেশের মানুষ। অনেক সময় আত্মগোপনে থেকে বিবিসিতে সংবাদ পাঠাতেন তিনি। তখন সামরিক সরকারের রোষের মুখে পড়ে কারাগারেও যেতে হয়েছিল তাকে। সেই আতাউস সামাদ আজ আমাদের মাঝে নেই।
গত কয়েকদিন ধরেই বেশ অসুস্থ ছিলেন আতাউস সামাদ। তিনি ভর্তি ছিলেন রাজধানীর অ্যাপেলো হাসপাতালে। রাত ৯টা ২৫ মিনিটে লাইফসাপোর্ট খুলে তার মৃত্যু ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। আতাউস সামাদের ভাগ্নে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আতাউস সামাদকে আজ বৃহস্পতিবার প্রথমে বাদ যোহর গুলশানের আজাদ মসজিদে নামাজে জানাজা এবং বেলা ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে নামাজে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তার বাবার কবরের ওপর সমাহিত করা হবে। জানাজার পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ জাতীয় প্রেসক্লাবে রাখা হবে।
জানা গেছে, দুপুরের পর অসুস্থ হয়ে রোববার ২৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল এই প্রথিতযশা সাংবাদিক ও কলামিস্টকে। সোমবার ২৪ সেপ্টেম্বর করা হয় প্রথম অস্ত্রোপচার এবং মঙ্গলবার ২৫ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারে তার বাম পা কেটে ফেলা হয়।
অস্ত্রোপচারের পর থেকেই সংজ্ঞাহীন ছিলেন আতাউস সামাদ। তাকে পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে লাইফসাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছিল। বুধবারও ২৬ সেপ্টেম্বর তাকে ১০ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর ১৯৫৯ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন আতাউস সামাদ। ছাত্রাবস্থায় ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। সচিত্র সন্ধানীর পর কর্মজীবনে সংবাদ, আজাদ পাকিস্তান অবজার্ভারে কাজ করেন আতাউস সামাদ। ১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান অবজারভারের চিফ রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
সাংবাদিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও শামিল ছিলেন আতাউস সামাদ। ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টের (ইপিইউজে) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যনত্ম আতাউস সামাদ নয়াদিলিস্নতে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বিশেষ সংবাুাতা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮২ সালে বিবিসিতে যোগ দেন আতাউস সামাদ, টানা ১২ বছর বিশ্বে জনপ্রিয় এই সংবাদ সংস্থার বাংলাদেশ সংবাুাতা ছিলেন তিনি।
বিবিসি ছাড়ার পর ‘এখন’ নামে একটি সাপ্তাহিক প্রকাশ করেন আতাউস সামাদ, একইসঙ্গে কলাম লিখতেন তিনি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমেও ‘মতামত-বিশ্লেষণ’ এ লিখেছেন তিনি। ‘এ কালের বয়ান’ শিরোনামে তার একটি নিবন্ধ সঙ্কলনও প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ ২০০৪ সালে আমার দেশের উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব নেন আতাউস সামাদ। বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভি’র নির্বাহী প্রধান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি আতাউস সামাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের খ-কালীন শিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছেন।
তার মৃত্যুর খবর পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক রাতে হাসপাতালে যান। ১৯৩৭ সালের ১৬ নভেম্বর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন আতাউস সামাদ, তবে তার বাবার বাড়ি কিশোরগঞ্জে। আতাউস সামাদের স্ত্রী কামরুন নাহার পিআইবির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
প্রবীণ এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শোক প্রকাশ করেছে। জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামালউদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদসহ সাংবাদিকদের সকল সংগঠন শোক প্রকাশ করেছে।