দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সম্প্রতি দেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব ফাঁস নয় গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আসলেই কি তাই? এই বিষয়ে ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল নিজের কাছে এক শিক্ষার্থীর পাঠানো প্রমাণসহ মিডিয়াতে একটি বার্তা পাঠান।
পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরাও। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোমলমতি শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর বাংলা, ইংরেজি ও গণিত থেকে শুরু করে সর্বশেষ এইচএসসি পরীক্ষায় ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। বিগত কয়েক বছর শিক্ষাখাত ভালো করলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ম্লান হচ্ছে পাবলিক পরীক্ষার গৌরব। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে সরকারেরও। জড়িতরা শাস্তির আওতায় না আসায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা বাড়ছে, বলছেন শিক্ষাবিদরা।
যদিও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা নিয়ে অনেকের মাঝেই ভিন্ন মত আছে, তবে ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল নিজের কাছে এক শিক্ষার্থীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রমাণসহ একটি বার্তা পাঠান, যেখানে তিনি কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, কেও কি আমাকে বলবেন? আমরা পাঠকের জন্য প্রিয় ডট কমে প্রকাশিত হওয়া জাফর ইকবালের লিখা বার্তাটি নিচে তুলে ধরলাম।
“পরশুদিন আমাকে একটা মেয়ে ফোন করেছে। সে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মেয়েটি খুবই বিচলিত। কারণ সে জানতে পেরেছে- পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেছে। মেয়েটি বলল, আমরা এতো কষ্ট করে পড়াশোনা করি আর কিছু মানুষ বাজার থেকে প্রশ্ন কিনে এনে পরীক্ষা দেয়, পরীক্ষায় ভালো করে, ভালো জায়গায় সুযোগ পায়। তাহলে এটাই কী নিয়ম- এই দেশটা দুর্বৃত্তদের? আমরা কিছু না?
আমি মেয়েটাকে সান্ত্বনা দিলাম। বললাম- শিক্ষামন্ত্রী যেটা বলেছেন, সেটা নিশ্চয়ই সত্যি। আসলে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে ধোকা দিয়ে কিছু কিছু ছাত্রছাত্রীকে ঠকিয়ে কিছু মানুষ টাকা কামিয়ে নেয়। পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর সেই প্রশ্নটি দেখিয়ে হৈচৈ করে। মেয়েটি বলল, ‘আমার কাছে যে প্রশ্ন আছে আমি আপনাকে এখনই পাঠিয়ে দিই। দু’দিন পর পরীক্ষা হয়ে গেলে আপনি মিলিয়ে নেবেন।’ আমি বললাম, ‘ঠিক আছে।’ মেয়েটি সাথে সাথে আমাকে হাতে লেখা কিছু প্রশ্ন পাঠিয়ে দিল।
আজকে পরীক্ষা ছিল। সকাল থেকে আমি মনে মনে দোয়া করছি- যেন প্রশ্নগুলো মিলে না যায়, আমি মেয়েটিকে বলতে পারব- দেখেছ, আসলে প্রশ্ন ফাঁস হয় না! দুপুরে মেয়েটি ফোন করে জানালো- ফাঁস হওয়া প্রশ্ন মিলে গেছে। আমাকে সে এক কপি প্রশ্ন পাঠিয়েছে।
আমি পরীক্ষার প্রশ্ন আর গতকাল পাওয়া হাতে লেখা প্রশ্ন একসাথে করে দিয়ে দিচ্ছি। কেও বিশ্বাস না করলে নিজের চোখে মিলিয়ে নিতে পারবে। আমার ই-মেইলের তারিখ আর সময়টিও যুক্ত করে দিলাম। মেয়েটির ই-মেইল এড্রেস সরিয়ে দিলাম, যাতে সে যেন আবার উটকো ঝামেলায় না পড়ে।
মেয়েটি আমাকে বলেছে- স্যার, কিছু একটা করেন।
কেও কি আমাকে বলতে পারবে, আমি কী করব? এই দেশের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, আমরা সেটা নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখি। আমাদের ছেলেমেয়েরা এই স্বপ্নকে ধারণ করে, লেখাপড়া করে, তারপর দেখা যায়- এই দেশের সরকার একটা পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা দিতে পারে না! আমি বিশ্বাস করতে রাজি না যে, আন্তরিকভাবে চাইলে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হওয়া সম্ভব। আমি যে মেয়েটার কথা বলছি, সে আমাকে ফোন করার আগে পাগলের মতো সব জায়গায় ফোন করে তার অভিজ্ঞতাটি জানাতে চেষ্টা করেছে- কেও শুনতে রাজি হয়নি।
একটা সমস্যা না দেখার ভান করলেই কি সমস্যাটা মিটে যায়? সমস্যা মেটাতে চাইলে সেটাকে সবার আগে স্বীকার করতে হয়। দেশের সর্বোচ্চ মহল এই সমস্যাটা স্বীকার করতেই রাজি না। তাহলে সমস্যাটা সমাধান হবে কেমন করে?
এই দেশের ছেলেমেয়েদের আমরা নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখাতে চাই। ভয়ঙ্করভাবে ক্ষুব্ধ এই হতাশ ছেলেমেয়েগুলোকে আমরা কেমন করে স্বপ্ন দেখাবো?
কেও কি আমাকে বলবেন?”
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
সুত্রঃ প্রিয় ডট কম
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্বপ্ন দেখে তা মনে রাখা সত্যিই দুষ্কর। আর তাই রাতের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৩০ কার্তিক ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’- এর অন্যতম সমন্বয়ক…