দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গতমাসে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে একটি উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে আন্দ্রেজ ফারগেক্স নামের একজন সবাইকে সাইন্স ফিকশন খাবার খেতে আমন্ত্রণ করেন। খাবারটি হলো ল্যাবে তৈরি করা কৃত্রিম মাংস।
এই ঘোষণাটি দেওয়ার পূর্বে ফারগেক্স একটি ছোট আকারের গোলাপী স্টেক তৈরি করেন। তিনি এটির নাম দেন স্টেক চিপস। তারপর সবাইকে আমন্ত্রণ জানান এর স্বাদ গ্রহণ করার জন্য। এটি দেখতে বেশ সাধারণ হলেও এটি তৈরি করা হয়েছে ল্যাবরেটরীতে একটি সত্যিকার প্রাণীর কোষ থেকে। মাইকেল ওয়াং নামের একজন প্রোগ্রাম ম্যানেজার ছিলেন সেই উৎসবে তিনি এই মাংসের স্টেকটি খেয়ে বলেন, এটি সত্যি বেশ সুস্বাদু এবং একেবারেই একটি সত্যিকারের মাংসের মতো।
ফারগেক্স হলেন মডার্ণ মিডো নামের একটি কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী। নতুন এই প্রতিষ্ঠানটি ল্যাবে প্রক্রিয়াজাতভাবে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে কৃত্রিম মাংস এবং চামড়া প্রস্তুত করে থাকে। একে বলা হয়, টিস্যু কালচার মাংস অথবা টেস্ট টিউব মাংস। অন্যান্য সাধারণ উদ্যোক্তাদের মতো তিনি চিন্তা করেন নতুন কিছু করার যা মানুষের প্রয়োজনে কাজে লাগবে। তিনি বলেন, প্রযুক্তির এই উন্নয়ন ধারায় আমরা অনেক কিছুই পাচ্ছি এবং সেটি গ্রহণ করছি। তবে কেন নয় কৃত্রিম খাবার যা আমাদের খাবারের চাহিদা মেটাবে। পুষ্টিগত দিক বিবেচনা করে কৃত্রিম খাবারের এই প্রক্রিয়াটি জনসাধারণের নিকটে পৌঁছানো বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়। কারণ মানুষ জৈব খাদ্যের প্রতি বিশ্বাসী। তাদের মধ্যে এটি বদ্ধমূল ধারণা যে জৈবিক খাবার ছাড়া পুষ্টির চাহিদা আর কোনটি মেটাতে পারবে না। সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ মনে করে বায়োটেক খাদ্যগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর তাই তারা এই খাদ্যগুলো খেতে আগ্রহী নয়।
টিস্যু কালচারের মাধ্যমে তৈরি খাদ্যের উদ্যোক্তারা মনে করেন, দিনকে দিন মাংসের প্রতি মানুষের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। কারণ মাংসের এই চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে পরিবেশের অনেক কিছুই নষ্ট হচ্ছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের ১৪.৫ শতাংশ মানুষ গ্রীনহাউজ গ্যাসের ক্ষতিকর প্রভাবে আক্রান্ত। তাছাড়া প্রায় ১৮ শতাংশ মানুষ বিশুদ্ধ পানি পায় না। এমন অবস্থায় এই পৃথিবীকে একটি স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে আমাদের পরিবেশের উপর চাপ কমানো অতিজরুরি। আর এই ক্ষেত্রে ভালো একটি ভূমিকা রাখতে পারে কৃত্রিম খাবার কিংবা টেস্টটিউব খাবার। টেস্টটিউব মাংসের চাহিদা বাড়লে প্রাণীদের খামারের চাহিদা কমবে। তার ফলশ্রুতিতে বনায়ন কিংবা গাছের উপর চাপ কমবে। টুইটারের অন্যতম উদ্যোক্তা বিজ স্টোনও একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ৭০০ কোটি মানুষের জন্য আমরা প্রাণীজ মাংস সরবরাহ অব্যাহত রাখতে পারবো না। কেননা এটি করতে গেলে গাছপালা কেটে ফেলতে হবে। মাংসের চাহিদা মেটাতে গিয়ে নিজেদের ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারি না। তাই আমাদের এখন নজর দেওয়া উচিত বিকল্প খাবারের দিকে।
অনেকগুলো বায়োটেকনোলজি প্রতিষ্ঠান এখন বিকল্প খাবার তৈরি করছে। মাংস ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার সয়া, শীম থেকে আলাদা আলাদা প্রোটিন নিয়ে একে তাপে একীভূত করা হয়। তারপর এরসাথে মাংসের প্রোটিন এবং অন্যান্য অংশ মিশিয়ে তৈরি করা হয় টেস্টটিউব খাবার। হাম্পটন নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়া হয়েছে তারা উদ্ভিজ্জ খাবারের মাধ্যমে ডিমের চাহিদা পূরণ করবে। ভেগান নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান যার অন্যতম মালিক টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা বিজ স্টোন তিনি বিনিয়োগ করেছেন সয়ালেন্ট নামের একটি পানীয় তৈরিতে যা মানুষের শরীরের পুষ্টি চাহিদা মেটাবে। এছাড়া আরো অনেক প্রতিষ্ঠানই বিকল্প খাবার তৈরির দিকে ঝুকছে। কিন্তু তার মধ্যে মডার্ণ মিডো একটি ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সালে কৃত্রিম চামড়া তৈরির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এটি কৃত্রিম মাংস তৈরি করছে। তার প্রতিষ্ঠানের এই কালচার মাংস তৈরি করার প্রসঙ্গে ফোরগেক্স বলেন, আমাদের কিন্তু বেশি উপকরণ নষ্ট করে এই মাংসটি উৎপাদন করলে লাভের স্থানে লোকসানই হবে। সম্পদের অপব্যয় ঘটবে। তাই আমাদেরকে সেইদিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়। মডার্ন মিডো এই ধরনের কালচার মাংস তৈরি করতে একটি বিশেষ প্রক্রিয়া ব্যবহার করে থাকে। তারা গরুর মাংসপেশী থেকে একটি কোষ গ্রহণ করে। তারপর তাকে টেস্টটিউবের ভেতরে প্রোটিনের দ্রবণে পরিব্যাপ্ত করে থাকে। একটি ছোট আকারের স্যাম্পলকে একটি ইনকিউবেটরের ভেতরে বড় হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। তারপর একে স্তরীভূত করে রাখা হয় একটি পেট্রি ডিশের উপর। এই প্রক্রিয়ায় থ্রিডি প্রিন্টারের সাহায্য নেওয়া হয়ে থাকে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে সময় লাগে প্রায় এক সপ্তাহের মতো।
কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় টিস্যুকালচারের মাধ্যমে এই মাংস তৈরির প্রক্রিয়াটি বেশ ব্যয়বহুল এবং এই প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই মাংসের পুষ্টি গুণাগুণের পাশাপাশি পুষ্টি উপাদানের দিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। তাই এটিকে পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া খুব দ্রুত বাজারে আনা সম্ভব নয়। কিন্তু উদ্যোক্তারা বেশ আশাবাদী যে তারা খুব দ্রুত এটি বাজারে আনতে পারবে। তাছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এটি এখনো স্বীকৃতি পায়নি। তারমধ্যে মূল প্রতিবন্ধকতা হলো বলা হচ্ছে ল্যাবে তৈরি এই মাংসগুলোতে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া আর পেস্টিসাইড সংক্রমণের ঝুকি রয়েছে। এছাড়া এটি শরীরের ম্যাকানিজমে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে শরীরের জন্য ক্ষতিকর এমন অনেক হরমোন তৈরি করে ফেলতে পারে। যা স্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের ঝুকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ফলে এর উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হলো ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা কেননা ক্রেতারা এই মাংসের দিকে না আকৃষ্ট হলে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুধু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা হিসেবেই সমাদৃত হবে, বাস্তবিক মানব কল্যাণে কোন কাজে আসবে না। মডার্ণ মিডোর মতো আরো যেসব প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম খাবার, টিস্যুকালচার মাংস, কিংবা টেস্টটিউব খাবার তৈরি করছে তারা বলছেন তৈরিটি এখন তেমন বড় আকারের সমস্যা নয়। খুব শীঘ্রই তারা এই ধরনের খাবার, মাংস বাজারজাত করতে পারবেন। কিন্তু মূল বাঁধাটি হলো সরকারী স্বীকৃতি আর মানুষের বিশ্বাস। মানুষ এখনো মনে করে এই ধরনের খাবার তাদের কোন কাজে আসবে না। এরফলে সরকার এটিকে এখনো স্বীকৃত কোন খাদ্য হিসেবে গণ্য করেনি। তবে উদ্যোক্তারা মনে করেন ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের একটি বড় অংশের মানুষ এই ধরনের খাবারের উপর নির্ভরশীল হবে।
তথ্যসূত্রঃ সিএনএন
This post was last modified on মে ৬, ২০১৪ 3:46 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’- এর অন্যতম সমন্বয়ক…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দেন…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবশেষে গত ৩১ বছর ধরে চলা ‘গোল্ডেন আউল’ বিতর্কের অবসান…