দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বহুল আলোচিত মঙ্গল গ্রহে মানুষ প্রেরণের প্রকল্প মার্স ওয়ানে অংশ নিতে আগ্রহী দুই লক্ষাধিক প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে সর্ব শেষ বাছাইয়ে টিকে আছে আর ৭০৫ জন, এদের মাঝে রয়েছেন বাংলাদেশের তিন নারী ও এক পুরুষ।
মার্স ওয়ানের এক বিবৃতিতে জানা গেছে তাদের অবশিষ্ট ৭০৫ জনের মাঝে ৪১৮ জন পুরুষ এবং ২৮৭ জন নারী রয়েছেন। এদের মাঝে ৩১৩ জন মার্কিন নাগরিক, এশিয়ান নাগরিক রয়েছেন ১৩৬ জন এবং ইউরোপ থেকে টিকে আছেন ১৮৭ জন, আফ্রিকা এবং ওশেনিয়া থেকে রয়েছেন যথাক্রমে ৪১ ও ২৮ জন।
বাংলাদেশীদের জন্য বিশেষ খবর হচ্ছে মার্স ওয়ানের নির্বাচিত ৭০৫ জনের এই তালিকায় রয়েছে ৪ জন সাহসী/সাহসিনী বাংলাদেশীর নাম! হ্যা তারা মঙ্গল গ্রহে চিরতরে চলে যেতে চায়, অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ারই কথা। মার্স ওয়ানের প্রকাশিত তালিকা থেকে আমরা খুঁজে পেয়েছি বাংলাদেশের ৪ জন আগ্রহী প্রার্থীকে যারা মার্স ওয়ানের দ্বিতীয় ধাপের ছাটাইতেও টিকে গেছেন। প্রথম ধাপে প্রায় দুই লাখ আগ্রহী থেকে ছাটাই বাছাই করে নেয়া হয় মোট ১ হাজার ৫৮ জনকে, এবারের ছাটাই শেষে এই তালিকা নেমে এলো ৭০৫ জনে। এই ৭০৫ জন থেকেই সরাসরি সাক্ষাৎকার নিবেন মার্স ওয়ান প্রকল্পের নির্বাচিত বিচারক প্যানেল।
চলুন জেনে নিই বাংলাদেশের ৪ জন সাহসী মঙ্গলে যেতে আগ্রহীদের বিষয়েঃ
সালমা মেহের ঐশী
ঐশী ঢাকার মেয়ে, ঢাকার আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি Electrical and Electronics Engineering বিভাগে বিএসসি ডিগ্রী নিয়ে এখন বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটর কোম্পানী বাংলালিংক এ Revenue Assurance Associate Executive হিসেবে কর্মরত আছেন।
ভিডিওঃ
তিনি জানান, খুব ছোট বেলা থেকেই তিনি মহাকাশ নিয়ে ভাবেন, তার প্রিয় সাহিত্যিক ডঃ মোহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যার। ডঃ মোহাম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস পড়েই তার মহাকাশ, সৌরমণ্ডল নিয়ে গভীর আবেগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি মহাকাশে যেতে চান, মার্স ওয়ান তার স্বপ্নের সিঁড়ি হিসেবে কাজ করছে। তাই তিনি মার্স ওয়ানে আবেদন করেছেন। তিনি আরও বলেন, জীবনের চলার পথে তিনি হাজারো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন, তাই তিনি চ্যালেঞ্জকে ভয় করেন না।
মাহফুজুর রহমান
মঙ্গলে স্থায়ী হতে চাওয়া ব্যক্তিদের মাঝে বাংলাদেশের এক মাত্র পুরুষ প্রতিযোগী মাহফুজুর রহমান। তিনি নিজেকে একজন শান্ত মানসিকতার মানুষ হিসেবে দাবি করেন। তিনি বলেন, আমি অনুসন্ধানে বিশ্বাসী। আমাকে কেও আধা গ্লাস পানি দিলে আমি, সেখানে বাকি আধা গ্লাস পানি কোথায় গেলো তার অনুসন্ধান করে থাকি।
ভিডিওঃ
তিনি আরও জানান, আমাকে কেওই রাগাতে পারবেনা, বিশ্বাস হয়না? তবে চেষ্টা করে দেখুন। মঙ্গলে যাওয়ার বিষয়ে তার অভিমত হচ্ছে, মানুষ অবশ্যই মঙ্গলে যেতে এবং থাকতে পারবে। কারণ মানুষের পক্ষে সব সম্ভব!
লুলু ফেরদৌস
লুলু ফেরদৌস বাংলাদেশের মেয়ে, তিনি একজন বৈমানিক হতে চেয়েছিলেন। তবে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে সেই সময় কোন নারী সৈনিক নেয়া হতনা বলেই তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তবে লুলু থেমে থাকেননি। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে এভিয়েশন ডিগ্রি নিয়ে নাসার Research Assistant হিসেবে কাজ করেন।
ভিডিওঃ
তিনি বলেন, আমি যখন মার্স ওয়ানের কথা শুনি; তখনই ভাবি বাহ! বিষয়টি অনেক দারুণ হবে। কেননা আমিও হতে পারি প্রথম কোন নারী যার পদ চিহ্ন মঙ্গলে পড়তে যাচ্ছে! তার ভালোলাগার একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে মহাকাশ বিজ্ঞান।
লাবণ্য নির্জন
লাবণ্য বাংলাদেশী, তবে থাকেন অস্ট্রেলিয়াতে। বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করে তিনি পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়াতে। সেখানেই মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী নেন।
ভিডিওঃ
তিনি বলেন, তিনি ভ্রমণ করতে ভালোবাসেন। সমুদ্রে সাঁতার দিতে ভালবাসেন। এডভেঞ্চার এবং রহস্য তাকে সব সময় বিমোহিত করে রাখে। সারা বিশ্বের অনেক দেশ তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার মনে হচ্ছে, এবার পৃথিবীর বাইরে পাড়ি দেয়ার সময় হয়েছে; তাই তিনি মার্স ওয়ান মিশনে নাম লিখিয়েছেন।
এদিকে মার্স ওয়ান পরিকল্পনা করছে তাদের প্রথম অভিযাত্রী দল মঙ্গলে পাঠাবে ২০২৪ সাল নাগাদ, যা মঙ্গলে অবতরণ করবে ২০২৫ সালে। তবে এই যাত্রা এক মুখী, এসব অভিযাত্রীদের আর কখনই পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবেনা। তারা সেখানেই বেঁচে থাকার প্রাণান্তর চেষ্টা চালাবেন।
বিষয়টি সম্পূর্ণ আবেগের পর্যায়ের নয়, এটি যতটা এডভেঞ্চারময় তার চেয়ে বহুগুণ বেশি গবেষণামূলক। মঙ্গলে এই অভিযাত্রীরা গিয়ে যদি সত্যি বসবাসে সফল হন তবে মানব সভ্যতা এবং পৃথিবীবাসীর জন্য উন্মোচিত হতে যাচ্ছে নয়া এক দিগন্ত, সে দিগন্ত সৌর জগতের শেষ পার্থিব গ্রহ মঙ্গল বিজয়ের বার্তা প্রেরণ করবে মানব জাতিকে। এখন শুধু অপেক্ষা সেই সময়ের।
ধন্যবাদান্তেঃ মার্স ওয়ান