দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আগামী ১২ জুন শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের জমজমাট আসর। ৩২টি দেশের সমাবেশ ঘটতে যাচ্ছে ব্রাজিলে। সব দেশের সমর্থকেরাই চায় নিজ দেশের জার্সি পরতে। তাই বিশ্বব্যাপী নানান দেশে জার্সি, পতাকা তৈরির ধুম লেগেছে। পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। জার্সি তৈরি করে প্রায় ৫০ কোটি ডলার আয় করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতি(বিকেএমইএ)।
ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবল সামনে রেখে এ বছর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা গতবারের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে। প্রায় ১০০ কারখানা বিশ্বকাপে বিভিন্ন দলের সমর্থকদের জন্য জার্সি তৈরির কাজ পেয়েছে। নাইকি, পুমা, আডিডাসের মতো বিশ্বখ্যাত ক্রীড়া পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এবার বিশ্বকাপ সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে জার্সি তৈরি করিয়ে নিচ্ছে। ছোট বড় সকল প্রতিষ্ঠানের মিলিত আয়ের পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ কোটি ডলার পর্যন্ত হতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন।
বাংলাদেশের নিটওয়্যার উৎপাদক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আশা করছেন, জুনে শেষ হতে যাওয়া বর্তমান অর্থ বছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয় রেকর্ড ২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় তিন বিলিয়ন ডলার বেশি। এই আয়ের একটি বড় অংশ আসছে জার্সি, ট্র্যাকস্যুটসহ বিশ্বকাপকেন্দ্রিক বিভিন্ন ক্রীড়া পণ্য রফতানি করে। গার্মেন্ট পণ্য রফতানিতে বিশ্বের বৃহত্তম দেশ চীনের তুলনায় অনেক সস্তায় মানসম্মত পোশাক দিতে পারছে বলেই বিদেশি ক্রেতাদের কাজ পাচ্ছে বাংলাদেশি কারখানাগুলো।
হাতেম আরো জানান, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, বেলজিয়াম, ইটালি ও পর্তুগালের ফুটবল সমর্থকদের জন্য কেবল তার কারখানাতেই প্রায় আড়াই লাখ জার্সি তৈরি হয়েছে।
ভিয়েলাটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসানাত বলেন, ‘বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বিভিন্ন সামগ্রী রফতানি করে এবার বাংলাদেশের আয় এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেলে আমি অবাক হব না।’ ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, চিলির ফুটবলপ্রেমীদের জার্সি তৈরির জন্য পুমার কাছ থেকে ৩০ লাখ ডলারের অর্ডার পেয়েছে তারা।
বাংলাদেশের অনেক ছোট ছোট কোম্পানি বিশ্বকাপের দেশগুলোর পতাকা, ক্যাপসহ বিভিন্ন সামগ্রী রফতানি করেছে। তবে এর পরিসংখ্যান বিজিএমইএ বা বিকেএমইএর হাতে নেই।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ গার্মেন্ট শিল্পের সঙ্গে জড়িত, যাদের একটি বড় অংশ নারী। দেশের মোট রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ এ খাত থেকেই আসে। অনেক বছর যাবত পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
এক বছর আগে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা ঘটে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে। সাভারের রানা প্লাজা ধসে অন্তত ১ হাজার ১৩৮ জনের মৃত্যু হয়, যাদের অধিকাংশই ছিলেন ওই ভবনে থাকা পাঁচটি পোশাক কারখানার কর্মী। এরপর থেকে পোশাক শিল্প যেন খোঁড়াতে থাকে, অস্থিরতা গ্রাস করে এটিকে। বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল হয়ে যায়। এত কিছুর পরও বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের এই ঘুরে দাঁড়ানো সত্যি অসাধারণ।
এই পোশাক শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের সব জার্সিতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির ফুটবল কর্তৃপক্ষ। ফলে বিশ্বকাপে না খেললেও ব্রাজিল বিশ্বকাপে বাংলাদেশ থাকছে। এজন্য পোশাক শ্রমিকদের কাছে আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ।