দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে শুরু হওয়া ল্যাপটপ ব্রান্ড ‘দোয়েল’র যন্ত্রাংশ জোড়া লাগানোর উদ্যোগ মূলধনের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। গত বছরের অক্টোবরে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) আমদানিকৃত যন্ত্রাংশ জোড়া লাগিয়ে ‘দোয়েল’ ব্রান্ড নামে ল্যাপটপ বাজারজাত করতে শুরু করেছিল। লক্ষ্য ছিল তুলনামূলক কম দামে ল্যাপটপ বিক্রি করা। এখন টেশিস বলছে, নতুন করে জোড়া লাগানো শুরু করা পুরোপুরি অনিশ্চিত।
এদিকে অপর রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমুনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ঋণ দেয়ার মাধ্যমে যোগান দিচ্ছিল টেশিসের এই ল্যাপটপ প্রকল্পের মূলধন। কিন্তু কারিগরি মান খারাপ হবার কারণে বাজারে এই ল্যাপটপ সম্পর্কে আগ্রহ খুবই কম। মনে করা হচ্ছে, সে কারণেই মূলধন যোগান দিতে আর উৎসাহ নেই বিটিসিএলের।
জানা গেছে, ঋণের সাড়ে চারশ কোটি টাকা ফেরত নিচ্ছে বিটিসিএল। টেসিস সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই তারা বিটিসিএলকে দুইশত কোটি টাকা ফেরত দিয়েছেন এবং টেশিসের শেয়ারের মাধ্যমে বাকি আড়ইশত কোটি টাকা পরিশোধের চেষ্টা করছেন।
টেশিসের মহাব্যবস্থাপক (প্লান্ট ও কমার্শিয়াল) মোহাম্মদ মোয়াশির জানালেন, যেখানে তাদের প্রতি মাসে ১০ হাজার ল্যাপটপ জোড়া লাগানোর সক্ষমতা আছে- সেখানে গত এক বছরে তারা বিভিন্ন মডেলের মাত্র ২০ হাজার ল্যাপটপ বাজারে দিতে পেরেছেন।
অবশ্য এই বিভিন্ন মডেলগুলোর মধ্যে তুলনামূলক উন্নতমানের- যথাক্রমে প্রাইমারি ২১০২, স্টান্ডার্ড ২৬০৩ ও অ্যাডভান্সড ১৬১২ মডেল তারা বাজারে দিতে পেরেছেন খুবই অল্প পরিমাণে। প্রধানত সবচেয়ে নিম্নমাণের বেসিক মডেল ০৭০৩’ই তারা জোড়া লাগিয়েছেন।জনাব মোয়াশির বললেন, তহবিলের ব্যাপারে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় আরো উৎপাদনে যাবার ব্যাপারটি পুরোপুরি অনিশ্চিত।
অন্যদিকে, যে দুটি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ল্যাপটপ প্রকল্প শুরু করেছিল টেশিস- টুএম করপোরেশন লিমিটেড এবং মালেশিয়ার কোম্পানি টিএফটি- প্রয়োজনীয় মান- পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের বাদ দেয়া হয়। টেশিসের একার পক্ষে ল্যাপটপের কারিগরি মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে দোয়েল জোড়া লাগানোর কারখানায় কুড়িজন প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাসহ মোট জনবল ৯০ জন।
ব্রান্ডটির ব্যাপারে সাধারণ ক্রেতারা অভিযোগ করে আসছেন, এটি শুধু নিম্নমানের যে তাই নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে সাধারণ কাজেরও অনুপযোগী বলে দেখা গেছে। একবার চালু করার ঘন্টা দেড়েক পরেই কাজে নানা ধরনের বিঘ্ন ঘটছে। এছাড়া এর ওয়েব ক্যামেরা এবং ওয়াই ফাই ডিভাইস প্রায়ই অকেজো থাকে। শব্দের মানও ভালো নয়। এসব অভিযোগ শুনবার ও সমাধান করবার মতো জনবলের অভাবও ছিল প্রকট। বিক্রয় পরবর্তী সেবা দিতেও হিমশিম খেয়েছে সংস্থাটি। এক্ষেত্রে দরকারি জনবল নিয়োগ দেয়া যায়নি। তবে এখনো জনাব মোয়াশের মনে করেন, দাম কমানো গেলে দোয়েলের চাহিদা বাড়ানো সম্ভব ছিলো।
এমন অবস্থার মধ্যে সরকারি উদ্যোগে জনসাধারণকে কমমূল্যে ল্যাপটপ দেওয়ার প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দেশের একমাত্র ল্যাপটপ তৈরির কারখানাটি সচল করবেন বলে জন সাধারণের প্রত্যাশা। তথ্যসূত্র: দৈনিক আমাদের সময়।