দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ওষুধ নেই কোন শহরে এমন কথা শুনলে আতকে ওঠার মতোই খবর। তবে ঘটনা আসলেও সত্যি। স্পেনের একটি নগর যার নাম ভ্যালেন্সিয়া। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার তো বটেই আঞ্চলিক ও প্রাদেশিক অনেক সরকার ঋণভারে জর্জরিত। আর তাই তাদের মৌলিক চাহিদা জনগণের জন্য ওষুধ কিনতেও তারা পারছেন না!
ইউরো জোনের ঋণ সঙ্কট বিশাল ভোগান্তি বয়ে এনেছে স্পেনের জনজীবনে। দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার তো বটেই আঞ্চলিক ও প্রাদেশিক অনেক সরকার ঋণভারে জর্জরিত। স্পেনের বিভিন্ন শহর ও নগর কর্তৃপক্ষ এতটাই সঙ্কটে পড়েছে যে, তাদের সামাজিক ব্যয়ের বিভিন্ন খাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারছে না। এর প্রভাব পড়ছে প্রান্তিক মানুষের জীবনে। প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগণ তাদের শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যয় মেটানোর জন্য আঞ্চলিক সরকারের পূর্ণ মাত্রায় নির্ভরশীল। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটের কারণে আঞ্চলিক সরকার যেমন এসব মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না তেমনই সমাধানের জন্য নির্ভর করতে পা ছে না কেন্দ্রীয় সরকারের উপরও। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার ঋণভারে তাদের চেয়েও বেশি জর্জরিত ইউরোজোন সঙ্কটের কারণে। স্পেনের এমন সঙ্কটজনক একটি অঞ্চল ভ্যালেন্সিয়া।
বিবিসি জানিয়েছে, সেখানকার সরকার এত বেশি সঙ্কটে আবর্তিত বিভিন্ন ফার্মেসির পুঁজি পর্যন্ত ধার করে নিয়ে গেছে তাদের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধ দুষপ্রাপ্য হয়ে পড়েছে ভ্যালেন্সিয়াতে। সরকার ঋণ নিয়েছে এমন একটি ফার্মেসিতে একটি নোটিস ঝোলানো রয়েছে। যাতে লেখা রয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-সরকার এই ফার্মেসির সব ওষুধ ঋণ হিসেবে নিয়ে গেছে। ফার্মেসিটির ফার্মাসিস্ট পলা বলছিলেন, শুধু এটিই নয় ভ্যালেন্সিয়ার প্রায় সব ফার্মেসি থেকে সরকার ৫০ কোটি রুপি পরিমাণ ঋণ নিয়েছে। ফলে তারা প্রয়োজনীয় ওষুধ রাখতে পারছেন না।
পলা তার ইনসুলিন রাখার ড্রয়ার দেখিয়ে বলেন, এটি সব সময় ভরা থাকতো। কিন্তু এখন সেখানে মাত্র দুই প্যাকেট ইনসুলিন রয়েছে। যদি একাধিক গ্রাহক আসে তাদের দেয়ার মতো ইনসুলিনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই দোকানগুলোতে। পলা আরও বলেন, এক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে মানুষ কেবল তাদের প্রতিবেশীর কাছেই যেতে পারে। অন্য কিছুই করার নেই। ফার্মেসি মালিকদের হাতে ওষুধ রাখার মতো টাকা নেই। তবে ভ্যালেন্সিয়ার এমন খারাপ পরিস্থির জন্য দায়ী সেখানকার প্রশাসনের দুর্নীতি ও অবিবেচনা প্রসূত কতগুলো প্রকল্প। সরকারি ব্যয়ের স্বচ্ছ নিয়ম-নীতি ও সঠিক পরিকল্পনা না করেই একাধিক বড় বড় প্রকল্প নেয়া হয়েছে। যেগুলো মানুষের কোন কাজে আসছে না। উল্টো এগুলোর কারণে সরকার বিশাল অঙ্কের ঋণের জালে আটকা পড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সিডনির আদলে বিশাল অপেরা হাউস নির্মাণ। ৪০ কোটি ইউরো দিয়ে তৈরি অপেরা হাউজে বছরে ১৫টি পারফরমেন্স হয় না। যেখানে কখনও বিমান যেতে দেখা যায় না সেখানে তৈরি করে রাখা হয়েছে বিশাল বিমানবন্দর। এভাবেই দুর্নীতি ও অপব্যায়ের জন্য করা অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পের খেসারত মানুষকে দিতে হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধ ও শিক্ষার মতো প্রয়োজনীয় পণ্য না পাওয়ার মাধ্যমে। তাহলে ভাবুন দুর্নীতি মানুষকে কোথায় নিয়ে ঠেকাতে পারে? (অনলাইন নিউজ অবলম্বনে)