দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্বকাপ ফুটবলে এমন নামকরা দুটি দল ব্রাজিল ও মেক্সিকোর খেলা গতকাল গোলশূন্য ড্র হয়েছে। প্রথম রাউন্ডে বড় কোনো দলের এমন কাহিনী খুব কম রয়েছে। তবে গোল না হওয়ার কৃতিত্ব পুরোটা মেক্সিকোর গোলরক্ষক গিলের্মো ওচোয়া’র।
আমরা বিশ্বকাপের অনেক খেলা দেখেছি। এক সময় আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক যখন ম্যারাডোনা খেলতেন। তখন বেশ ভালো খেলা দেখাতেন। সহজে কেও গোল করতে পারতো না। আবার দেখা যেতো বল নিয়ে উপরে চলে গেছেন। এমন অনেক ঘটনায় আমরা স্বচোক্ষে দেখেছি। ব্রাজিল ও মেক্সিকোর মধ্যেকার ম্যাচে এমন একজন গোলরক্ষককে দেখে সবাই অভিভূত না হয়ে পারেনি। অনেকেই রসিকতা করে বলেছেন, ‘গোলরক্ষক তো নয়, যেনো চীনের প্রাচীর’ এই প্রাচীর ভেত করে গোল করা কারো সাধ্য নাই!
বিশ্ব ফুটবলে বেশ কিছু নামকরা গোলরক্ষক রয়েছেন। যেমন ইকার ক্যাসিয়াস, ম্যানুয়েল নয়্যার, জিয়ানলুইজি বুফন, থিবো কোর্তোয়া প্রমুখ। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষকদের কথা বলতে হলে মেক্সিকোর গিলের্মো ওচোয়ার নাম নিতেই হবে। অন্তত গতকালকের ব্রাজিল বনাম মেক্সিকোর খেলা যারা দেখেছেন তারা অন্তত একবাক্যে স্বীকার করবেন। আসলে কালকের খেলা না দেখলে হয়তো কারো মাথায় আসতো না যে এমন গোলরক্ষক এবারের বিশ্বকাপে আছেন। মেক্সিকোর এই অখ্যাত গোলরক্ষকই এখন দখল করে নিয়েছেন সবার দৃষ্টি। স্বাগতিক ব্রাজিলকে একাই রুখে দিয়েছেন মেক্সিকান এই গোলরক্ষক গিলের্মো ওচোয়া।
খেলা শুরুর পর থেকে মেক্সিকোর রক্ষণভাগে একের পর এক আক্রমণ চালিয়েছেন বিশ্বখ্যাত স্ট্রাইকার নেইমার-অস্কাররা। কিন্তু মেক্সিকোর গোলপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা গিলের্মো ওচোয়াকে ভেদ করে গোল ঢোকানো চাট্টিখানি কথা নয়। অন্তত ৪টি গুরুত্বপূর্ণ সর্ট ছিল যেগুলোর অন্তত নিশ্চিত গোল হওয়ার কথা। যেমন দুটি ছিল হেডের বল। হেডের বল ধরা খুব কঠিন কাজ। সেই কঠিন কাজটিও করেছেন মেক্সিকান এই গোলরক্ষক গিলের্মো ওচোয়া। কখনও চম্বুকের মতো বল ধরেছেন, আবার কখনও তাঁর হাতের ধাক্কায় বলটি ছিটকে বিপরিতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। খেলা দেখার পর অনেকেই বলেছেন, ‘গিলের্মো ওচোয়ার মতো গোলরক্ষকের কারণেই আজ ব্রাজিল গোল দিতে পারলো না।’
২৮ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক গিলের্মো ওচোয়া’র হাত ফাঁকি দিয়ে একটি বলও মেক্সিকোর গোলপোস্টের ভেতরে ঢুকতে পারেনি। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে গোলরক্ষকদের সেরা পারফরম্যান্সের হিসাব শুরু হলে অবশ্যই নিশ্চিতভাবেই আসবে গিলের্মো ওচোয়ার নাম। মেক্সিকান এই গোলরক্ষকের নামটা হয়তো স্থায়ী হয়ে যেতে পারে বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই সেরা গোলরক্ষকের পারফরম্যান্সের তালিকায়।
অথচ এবারের বিশ্বকাপে আসার আগে বেশ কঠিন সময়ই পার করতে হয়েছে ওচোয়াকে। ২০১১ সালে ডোপ কেলেঙ্কারিতে জড়ানোয় সম্ভাবনাময় ফুটবল ক্যারিয়ারটাই পড়ে গিয়েছিল হুমকির মুখে। প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো শীর্ষ ক্লাবগুলোতে খেলার সুযোগও হারিয়েছিলেন। সে সময় থেকে খেলছেন ফরাসি লিগের নিচের সারির দল আজাসিওতে। এ বছর তাঁর ক্লাব নেমে গেছে দ্বিতীয় বিভাগে।
উল্লেখ্য, ২০০৬ ও ২০১০ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিলেন বটে। কিন্তু কোনোবারই মাঠে নামার সুযোগ পাননি গিলের্মো ওচোয়া। এবার সুযোগ পেয়েই নিজেকে উজাড় করে দিয়ে ফুটবল ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে রইলেন মেক্সিকান এই গোলরক্ষক।