দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকারি উদ্যোগ থাকলেও কতিপয় কারণে এসব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন এখন প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সরকার উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করে ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। তাই খরচ কমাতে কিছু ক্ষেত্রে আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। কারণ, কয়লা আমদানি করার জন্য যে অবকাঠামো দরকার, তা বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। অন্যদিকে দেশীয় কয়লায় এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হলেও বছরের পর বছর কমিটির পর কমিটি করা ছাড়া সরকার এ কয়লা তোলার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ফলে কার্যত দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টদের অনেকে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, দেশে বর্তমানে পাঁচটি কয়লাখনিতে উত্তোলনযোগ্য মোট কয়লার পরিমাণ ১২৫ কোটি টন, যা দিয়ে আগামী প্রায় ৪০ বছর দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এখন শুধু বড়পুকুরিয়া ছাড়া বাকি চারটি খনি থেকে কয়লা তোলার বিষয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগও লক্ষ করা যাচ্ছে না। বর্তমান সরকারের আমলে একটিও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শুরু করা যায়নি। সরকার ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হবে। অপরদিকে দিনাজপুরের কয়লা খনি নিয়েও আন্দোলনসহ নানা ঝামেলার মধ্যে পড়েছে সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০৩০ সালনাগাদ মোট ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কয়লা দিয়ে উৎপাদন করা হবে। এর মধ্যে ১১ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হবে আমদানি করা বিদেশী কয়লায়। কিন্তু বর্তমানে কয়লা আমদানি করার অবকাঠামো বাংলাদেশে নেই। তা ছাড়া জ্বালানি তেল আমদানি করতে গিয়ে আমরা বেশ কিছু অর্থনৈতিক সমস্যারও মুখোমুখি হয়েছি। এ ক্ষেত্রে সেটিও একটি বাধা। এদিকে সম্প্রতি এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) তৈরি করা একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী আমদানির জন্য কয়লার দীর্ঘকালীন উৎস খুঁজে পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া কয়লা আনার জন্য চট্টগ্রাম ও বাগেরহাটের সমুদ্র মোহনার আকরাম পয়েন্ট থেকে প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা ও নিয়মিত নদী খনন অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং জটিল। আবার কয়লার ক্রমবর্ধমান দামের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া কয়লা মজুদ রাখার ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত পরিবহনও সহজ নয়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম সমপ্রতি সাংবাদিকদের বলেন, এ সরকারের শুরু থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কয়লানীতি প্রণয়ন ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করলে এখন বেশ কিছু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে চলে আসতো। আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলে আগেই করতে হতো। এখন আমদানি করা কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে অর্থনীতিতে ধস নামবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি করা কয়লায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এ পর্যন্ত যতো বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে, তার বেশির ভাগই যথাসময়ে আলোর মুখ দেখবে না।
পিডিবি এবং মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পিডিবি ও ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার করপোরেশনের (এনটিপিসি) যৌথ উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড বাগেরহাটের রামপালে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে। আমদানি করা কয়লায় এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। তবে এ নিয়ে এখনো অনেক জটিলতা রয়ে গেছে। কয়লা আমদানির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি, জাহাজযোগে কয়লা আনতে নৌপথে নিয়মিত প্রয়োজনীয় খনন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে যে বিরাট অঙ্কের ঋণ লাগবে, তা জোগাড় করা খুবই কঠিন। সূত্র জানায়, এ পর্যনত্ম দুই পক্ষ যতোটা এগিয়েছে, তাতে আগামী পাঁচ বছরেও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না।
পিডিবি সূত্র আরো জানায়, সরকারের পরিকল্পনায় খুলনা, চট্টগ্রাম ও মাওয়ায় তিনটি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে বেসরকারি উদ্যোগে। ২০১৫ সালের জুনে এগুলো চালু হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে এগুলো চালু করা সম্ভব হবে না। তবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সমপ্রতি বলেছেন, প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো যাতে সময়মতো উৎপাদনে আসে, সে জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে।
এখন বাকিটা নির্ভর করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়রে সদিচ্ছার ওপর। কারণ সরকারি ঘোষণা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি বর্তমানে সহনীয় থাকলেও দিনকে দিন চাহিদা বাড়ছে। এখন থেকেই এ বিষয়ে উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা পূর্বের ন্যায় আবার প্রকট আকার ধারণ করবে। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এখনই সময় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের। তাছাড়া যেহেতু দেশে গ্যাসের এমনিতেই প্রচুর চাহিদা রয়েছে তাই গ্যাসভিত্তিক ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করাই বেশি জরুরি।