এম. এইচ. সোহেল ॥ বাংলাদেশে অস্বাভাবিকভাবে মোবাইল ফোন ব্যবহার ভবিষ্যতে শারীরিক ও মানসিক সমস্যাসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে মোবাইল ব্যবহারের মাত্রা বাড়ায় এ আশংকা দেখা দিয়েছে।
মোবাইল ফোন বর্তমানে আমাদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি এখন ভাত-মাছের মতোই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে। এই মোবাইল ফোন ব্যবহার ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রায় ক্ষেত্রে পজেটিভ প্রভাব বিস্তার করলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি একটি নেতিবাচক দিক হিসেবে দেখা দিয়েছে।
মোবাইল ফোনের ভালো দিক
মোবাইল ফোনের ভালো দিক রয়েছে অনেকগুলো। যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে মোবাইল ফোনের গুরুত্ব রয়েছে এক অসীম। আজকাল প্রতিটি ব্যবসার ক্ষেত্রেই এই মোবাইল ফোনের ভূমিকা রয়েছে।
পারিবারিক ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের ভূমিকা রয়েছে এক অগ্রগণ্য। কারণ এখন আর পোস্ট অফিসের চিঠির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। শত শত মাইল দূরের ব্যক্তিও প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত আপনজনের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। ভালো-মন্দ সব বিষয়ে খোঁজ নিতে পারছেন। যা আগে কখনও সম্ভব হতো না। আগে একমাত্র পোস্ট অফিসের পিয়নের ওপর ভরসা করতে হতো। ৩ থেকে ৭ দিন এসব চিঠি পৌঁছাতে সময় লাগতো। অর্থাৎ কারো সঙ্গে কোনো যোগযোগ করতে ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। একমাত্র সে সময় ছিল টরে টক্কার টেলিগ্রাম। যা দ্বারা দিনের খবর দিনে জরুরি বার্তা হিসেবে পাওয়া যেতো। কিন্তু সেই টেলগ্রাফ্র ছিল শহর কেন্দ্রিক। গ্রামের মানুষ ওই সংবাদ তাৎক্ষণিক পেতেন না। এখন মোবাইলের যুগ হওয়ায় তা হয়েছে অত্যন্ত সহজতর। এখন প্রতিমুহূর্তের খবর পাওয়া সম্ভব। উঠতে-বসতে মোবাইলের যথেচ্ছা ব্যবহার করা হচ্ছে। আপনজনদের অসুখ-বিসুখের যে কোনো খবর তাৎক্ষণিক পাওয়া যাচ্ছে মোবাইল ফোনের বদৌলতে।
মোবাইল ফোনের খারাপ দিক
এই মোবাইল ফোনের যেমন ভালো দিক রয়েছে আবার খারাপ দিকও রয়েছে। মোবাইল ফোনের কারণে মানুষের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের কারণে বয়স ভেদে নানা ধরনের জটিলতা সৃ্ষ্টি হচ্ছে। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনের কারণে নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। মোবাইল ফোনের কারণে সমাজে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেটের কারণে এই মোবাইল ফোন ব্যবহার বেড়েছে। আর এই ইন্টারনেটের কারণে মোবাইল ফোনে সকল রকম অনাচারের মাত্রা দিনকে দিন বাড়ছে।
চুরি-ডাকাতি, ছিলতাই, গুম, খুন এসব ঘটনা বৃদ্ধির জন্যও এই মোবাইল ফোনের ভূমিকা রয়েছে। এভাবে সমাজের অনেক অনাচারের জন্য এই মোবাইল ফোনকে অনেকেই দায়ি করে থাকেন।
মোবাইল ফোনের কয়েকটি স্বাস্থ্য ঝুঁকি:
শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে
দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোনে কথা বললে কানের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন- কানে কম শোনার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছর তাদের মধ্যে এই শ্রবণশক্তি হ্রাসের হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ব্যাপকহারে ব্যবহার করার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। যারা দৈনিক ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বা তার চেয়েও বেশি ফোনে কথা বলেন অথবা গান শোনেন তাদের ৩ থেকে ৫ বছরের মাথায় আংশিকভাবে শ্রবণশক্তি হ্রাস পেতে পারে। এটি রোধ করতে হলে আপনার ফোনের রিং-টোন যতটুকু সম্ভব কমিয়ে রাখতে হবে এবং ফোনে খুব বেশি গান শোনা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
মস্তিষ্কের ক্যান্সার হতে পারে
এই মোবাইল ফোন থেকে সৃষ্ট তেজষ্ক্রিয় রশ্মি মানুষের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলে। মোবাইল ফোনথেকে সৃষ্ট বেতার তরঙ্গ মানুষের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে উত্তপ্ত করে তোলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই তরঙ্গকেই কারসিনোজেনিক বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
মহিলাদের গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি
এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেসব মহিলারা গর্ভাবস্থায় খুব বেশি মাত্রায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাদের গর্ভস্থ ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়। তাছাড়া পরবর্তীতে এই শিশুদের মাঝে আচরণগত অনেক সমস্যাও দেখা দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। আর তাই গর্ভাবস্থায় মায়েদের উচিত মোবাইল ফোন কম ব্যবহার করা। অর্থাৎ প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার না করা।
বর্তমান আধুনিক এই সময়ে মোবাইল ফোনকে একেবারে জীবন থেকে সরিয়ে দেয়া কোনো প্রকারেই সম্ভব নয়। তবে একটু সচেতন হলে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে তৈরি হওয়া স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও নানা সমস্যা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারি। যেটি আমার-আপনার সকলের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।